থমকে আদর্শ গ্রাম, নালিশ বাবুলকে

আদর্শ গ্রামের কাজকর্ম দেখতে গিয়ে গ্রামবাসীদের প্রশ্নের মুখে পড়লেন কেন্দ্রীয় নগোরন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী তথা আসানসোলের সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আসানসোল শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৫ ০০:৪৮
Share:

সিদাবাড়িতে সাংসদকে পেয়ে ক্ষোভ জানাচ্ছেন বাসিন্দারা। নিজস্ব চিত্র।

আদর্শ গ্রামের কাজকর্ম দেখতে গিয়ে গ্রামবাসীদের প্রশ্নের মুখে পড়লেন কেন্দ্রীয় নগোরন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী তথা আসানসোলের সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়। বুধবার সালানপুরের সিদাবাড়ি গ্রামে একটি ভবনের উদ্বোধনে গিয়েছিলেন তিনি। সালানপুরের বিডিও-কে ঘিরে ধরেও বিক্ষোভ দেখানো হয়। পরে অবশ্য মন্ত্রী নিজে গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলার পরে ক্ষোভ কমে। বাসিন্দাদের আব্দার মতো দু’কলি গানও শোনান বাবুল।

Advertisement

এ দিন বাবুল প্রথমে সালানপুরের দেন্দুয়ায় সাংসদ তহবিলের টাকায় নির্মিত জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের একটি পাম্প বুস্টিং কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন। এর পরে মন্ত্রীর গাড়ি পৌঁছয় তাঁর দত্তক নেওয়া আদর্শ গ্রাম সিদাবাড়িতে। সেখানে মৎস্যজীবীদের রাত কাটানো ও মাছ ধরার সরঞ্জাম রাখার জন্য ডিভিসি-র তরফে তৈরি করে দেওয়া একটি ভবনের উদ্বোধন করেন তিনি। এর পরেই সেখানে হাজির গ্রামবাসীদের একাংশ আদর্শ গ্রামের কাজকর্ম নিয়ে ক্ষোভের কথা জানাতে শুরু করেন তাঁর কাছে।

বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, বছরখানেক আগে সিদাবাড়ি গ্রামকে দত্তক নেওয়ার সময়ে মন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, গ্রামের তিন মাথার মোড় থেকে নদী পর্যন্ত একটি পাকা রাস্তা হবে। কিন্তু সেই রাস্তা হয়নি। গ্রামের বড় নর্দমাটি ঠিক যে ভাবে তৈরি করার কথা ছিল তা হয়নি। এমনকী, গ্রামের বেকার যুবকদের নিয়ে সমবায় করে যে মাছচাষের প্রকল্পটি শুরু হয়েছিল, সেটিও ঠিক মতো চলছে না। বাসিন্দারা মন্ত্রীর কাছে জানতে চান, এই সব কাজ কবে বাস্তবায়িত হবে।

Advertisement

বেশ কিছুক্ষণ বাসিন্দাদের কথা শোনার পরে মন্ত্রী মুখ খোলেন। এ সব কাজ না হওয়ার জন্য হওয়ার পিছনে ব্লকের সরকারি আধিকারিকদের গড়িমসিকে দায়ী করেন তিনি। বাবুল বলেন, ‘‘আদর্শ গ্রামের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হচ্ছে না রাজ্য সরকারের সদিচ্ছার অভাবে। রাজ্যের ৪২ জন সাংসদের মধ্যে আমি একাই এ রাজ্যে আদর্শ গ্রামের পরিকল্পনা রূপায়ণে আগ্রহী হয়েছি।’’ তিনি অভিযোগ করেন, রাস্তা নির্মাণের জন্য তিনি ২০ লক্ষ টাকা অনুমোদন করেছেন। কিন্তু ব্লক প্রশাসনের উদ্যোগের অভাবে কাজ হচ্ছে না। তাঁর আরও দাবি, গ্রামের অন্য একটি রাস্তা গড়ার জন্য ২৩ লক্ষ ও গ্রামের একমাত্র প্রাথমিক স্কুলের উন্নয়নের জন্য ১৩ লক্ষ টাকা অনুমোদন করেছেন। সেই টাকাও শীঘ্র চলে আসবে।

মন্ত্রীর কাছে এ কথা জানার পরেই বাসিন্দারা সেখানে হাজির সালানপুরের বিডিও দেবকুমার চক্রবর্তীকে ঘিরে বিক্ষোভ শুরু করেন। উন্নয়নের কাজে ব্লকের আধিকারিকদের সহায়তা না পাওয়ার যে অভিযোগ মন্ত্রী তুলেছেন, সেই নিয়ে বিডিও-র উত্তর চান বাসিন্দারা। বিডিও অবশ্য বলেন, ‘‘গ্রামবাসীদের বাধায় রাস্তার কাজ করা যায়নি। দু’বার টাকা এসে ফিরে গিয়েছে। মন্ত্রী সবই জানেন। আবার টাকার অনুমোদন এসেছে। গ্রামবাসীরা বাধা না দিলেই কাজ করা হবে।’’

গ্রামবাসীরা রাস্তা তৈরিতে বাধা দিচ্ছেন কেন? এ দিন বিক্ষোভে সামনের সারিতে থাকা স্থানীয় বাসিন্দা অমর মণ্ডলের দাবি, ‘‘আমরা যে গুণমানের রাস্তা চেয়েছিলাম, তেমন রাস্তা তৈরির জন্য বরাত ডাকা হয়নি। তাই আমরা রাস্তা গড়তে দিইনি।’’ বেশ কিছুক্ষণ ক্ষোভ-বিক্ষোভ চলার পরে মন্ত্রী নিজেই গ্রামবাসীদের বুঝিয়ে-সুজিয়ে শান্ত করেন। পরে বাসিন্দাদের আবদার মেনে গানও করেন।

সিদাবাড়ি গ্রামের বেকার যুবকদের জন্য একটি মৎস্যচাষ প্রকল্পও তৈরি করেন মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। গ্রামের আট জন যুবককে নিয়ে একটি সমবায় গড়ে মাছ চাষের কাজে তাঁদের নিয়োগ করেন। সেই প্রকল্পটি নিয়েও তাঁরা খুশি নন বলে সমবায়ের কয়েক জন সদস্য জানান। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাঁরা বলেন, ‘‘প্রায় ৯ মাস ধরে খাটছি। কোনও রোজগার হয়নি। প্রথমে বলা হয়েছিল মাস চারেকের মধ্যে মাছ উঠবে। বিক্রি করে আয় হবে। এখন দেখছি কিছুই হচ্ছে না। অগত্যা জনমজুরি করতে হচ্ছে।’’ এ দিন বাবুল সুপ্রিয় ওই প্রকল্পটিও ঘুরে দেখতে যান। সেখানে দাঁড়িয়েই তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘এই প্রকল্পটি চালাতেও স্থানীয় প্রশাসন কোনও সাহায্য করছে না। প্রায় দেড় মাস মাছের খাবার ছিল না। সমবায়ের সদস্যেরা ব্লককে জানালেও কোনও লাভ হয়নি।’’ শেষমেশ ডিভিসি কর্তৃপক্ষের সাহায্যে মাছের খাবার জুটেছে বলে জানান মন্ত্রী। বাবুলের এই অভিযোগ নিয়ে অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি বিডিও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন