দশ টাকার মুদ্রা নিয়ে পোস্টার

আসল-নকল চেনাতে গিয়ে বিতর্কে বণিকসভা

বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ১০ টাকার কয়েন নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াতে নিষেধ করেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক (আরবিআই)। আমজনতাকে আশ্বাস দিয়ে জানানো হয়েছে, ১০ টাকার মুদ্রা সম্পূর্ণ বৈধ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আসানসোল শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০১৬ ০০:৪৭
Share:

এই পোস্টারেই ছড়ায় বিভ্রান্তি। —নিজস্ব চিত্র।

বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ১০ টাকার কয়েন নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াতে নিষেধ করেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক (আরবিআই)। আমজনতাকে আশ্বাস দিয়ে জানানো হয়েছে, ১০ টাকার মুদ্রা সম্পূর্ণ বৈধ। তার পরে বিভ্রান্তি খানিকটা থিতিয়ে পড়ার মুখে। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে ‘বরাকর চেম্বার অব কমার্স’-এর নামে এলাকার কিছু জায়গায় সাঁটানো একটি পোস্টার তৈরি করেছে বিতর্ক। সেই পোস্টারে নাম জড়ানো হয়েছে শহরের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখারও। আসল ও নকল ১০ টাকার মুদ্রা চেনানোর নাম করে সাঁটানো হয়েছে ওই পোস্টার।

Advertisement

সম্প্রতি দেশের নানা প্রান্তের মতো রাজ্যেও ১০ টাকার মুদ্রা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ায়। দোকান-বাজার, বাস-অটোয় ওই কয়েন দিলে, তা অনেক সময়ে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে অনেকেই অভিযোগ করছিলেন। গুজব ছড়ায়, আরবিআই-এর নির্দেশে এই মুদ্রা নাকি অচল। ফলে, এতে লেনদেন আর বৈধ নয়। যার জেরে নাকাল হচ্ছিলেন সাধারণ মানুষ। এই অবস্থায় জটিলতা কাটাতেই এগিয়ে আসে শীর্ষ ব্যাঙ্ক। আমজনতাকে আশ্বাস দিয়ে জানায়, এটা স্রেফ গুজব। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মুখপাত্র আলপনা কিলাওয়ালাও জানান, এমন নির্দেশ ব্যাঙ্ক দেয়নি। স্বীকৃত ১০ টাকার মুদ্রা লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে সম্পূর্ণ বৈধ। তাই তা প্রত্যাহারের প্রশ্নই নেই।

কী রয়েছে বরাকরের পোস্টারে?

Advertisement

কয়েকটি ১০ টাকার কয়েনের ছবি ছাপিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে কোনগুলি আসল, আর কোনগুলি নকল। পোস্টারে ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখার নাম থাকায় সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে আরও বেশি বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বিজ্ঞপ্তির পরেও কী ভাবে এই প্রচার চালানো হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।

এই বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে চেম্বার অব কমার্স এবং ওই ব্যাঙ্কের আধিকারিকেরা বিষয়টি এড়িয়ে গিয়েছেন। বৃহস্পতিবার বরাকরের ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায় গিয়ে দেখা যায়, ম্যানেজার প্রবীর কবি এ দিন আসেননি। তাঁর পরিবর্তে দায়িত্ব সামলাচ্ছেন ডেপুটি ম্যানেজার রমেশ কুমার। তিনি বলেন, ‘‘এ রকম কোনও পোস্টারের কথা জানা নেই।’’ সেক্ষেত্রে কী ব্যাঙ্কের তরফে কোনও আইনি পদক্ষেপ করা হবে? তিনি শুধু বলেন, ‘‘এ ব্যাপারে যা বলার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলবেন।’’

চেম্বার অব কমার্সের তরফেই বা কী করে এমন পোস্টার সাঁটানো হল? সংগঠনের সম্পাদক শিবকুমার অগ্রবাল বলেন, ‘‘আমি কিছু জানি না। ঠিক কী হয়েছে জানতে জরুরি সভা ডেকেছি।’’

এ দিকে, ওই পোস্টারের জেরে নতুন করে বিপাকে পড়েছেন এলাকার মানুষজন। স্থানীয় ব্যবসায়ী রাজু যাদব বলছেন, ‘‘রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বিজ্ঞপ্তির পরে বিভ্রান্তি কিছুটা কমছিল। এখন এই পোস্টার দেখে কেউ কয়েন নিতে চাইছেন না। বড় বিপদে পড়েছি।’’ বাসের কন্ডাক্টারেরা জানালেন, তাঁরা যাত্রীদের ১০ টাকার কয়েন নিচ্ছেন। কিন্তু খুচরো হিসেবে কোনও যাত্রীকে তা দিতে চাইলেও যাত্রীরা তা নিতে অস্বীকার করছেন। স্থানীয় বাসিন্দা উত্তম পাল বলেন, ‘‘দিন কয়েক আগে ওই ব্যাঙ্ক থেকেই ১০ টাকার কয়েনে মোট হাজার টাকা পেয়েছি। এখন ওই পোস্টারে ব্যাঙ্কের নাম রয়েছে দেখে বাজার-দোকানে সেই সব কয়েনই কেউ নিতে চাইছেন না।’’

বরাকর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি দীপক দুধানি মনে করেন, ‘‘এমন পোস্টার সাঁটানোর আগে আরও সতর্ক হওয়া উচিত ছিল।’’ এই বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও উঠছে।

আরবিআই সূত্রে জানা যায়, ২০০৭ সালে প্রথম এই ১০ টাকার মুদ্রা বাজারে আসে। আর ২০১১ সালে এক দিকে অশোক স্তম্ভ ও উল্টো পিঠে টাকার নতুন প্রতীক চিহ্নযুক্ত ১০ টাকার কয়েন আনা হয়। আরবিআই জানিয়েছে, ওই দু’ধরনের মুদ্রাই লেনদেনের ক্ষেত্রে বৈধ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন