কার্জন গেটের দু’পাশ জুড়ে অস্থায়ী দোকান। নিজস্ব চিত্র।
শহরের ভিতর দিয়ে যাওয়া জিটি রোডের সৌন্দর্যায়নে একগুচ্ছ বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে বর্ধমান পুরসভা। তারপরে তিন সপ্তাহ কেটে গেলেও কার্জন গেটের চারপাশের ছবিটা বদলায়নি এতটুকুও। এমনকী পুরসভাও বিজ্ঞপ্তি জারি করেই কার্যত থেমে গিয়েছে। যদিও পুরপ্রধান স্বরূপ দত্তের দাবি, জিটি রোড লাগোয়া হকারদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। তাঁদের বুঝিয়ে, একসঙ্গে নিয়ে সৌন্দর্যায়ন করা হবে।
গত ৩ ডিসেম্বর জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে শহরের মুখ বলে পরিচিত বিজয় তোরণ বা কার্জন গেট সংলগ্ন এলাকায় যে কোনও রকম হকার বসা নিষিদ্ধ করেছে পুরসভা। কিন্তু বাস্তবে দেখা গিয়েছে, এখনও কার্জন গেটের গায়েই গুমটি সাজিয়ে হকারেরা বসে রয়েছেন। অবাধে চলছে ফল বিক্রি থেকে বই, ম্যাগাজিন বিক্রির দোকান। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জিটি রোড সংলগ্ন এলাকায় খোলা অবস্থায় যেমন মাংস রাখা যাবে না, তেমনি মাংস ঝুলিয়ে রাখাও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। জিটি রোডের বীরহাটা থেকে বর্ধমান স্টেশন পর্যন্ত এলাকায় যেখান সেখান আবর্জনা ফেলার পাশাপাশি প্রকাশ্যে প্রস্রাব ও থুতু ফেলা নিষিদ্ধ করেছে পুরসভা। পুরপিতা পরিষদের সদস্য খোকন দাসের দাবি, “নিয়ম না মানলে ১০০ টাকা করে জরিমানা করা হবে।’’ একই সঙ্গে জিটি রোড সংলগ্ন ব্যবসায়ীদের প্রতি পুরসভার নির্দেশ, দোকানের জায়গা থেকে চারদিকে কমপক্ষে পাঁচ ফুট দূরত্ব পর্যন্ত জায়গা ছেড়ে রাখতে হবে। সেখানে দোকানের মালপত্র রাখা যাবে না, বরং ওই জায়গা পরিষ্কার করে রাখতে হবে। অন্যথায় পুর কর্তৃপক্ষ ১০০ টাকা জরিমানা করা হবে।
কিন্তু এখনও পর্যন্ত এ ব্যাপারে কার্যকর ভূমিকা নিতে দেখা যায়নি পুরসভাকে। বিরোধীদের অভিযোগ, জেলাশাসক সৌমিত্র মোহনের প্রস্তাব মেনে সিদ্ধান্ত নিলেও তা কার্যকর করার ক্ষেত্রে গড়িমসি করছে পুর কর্তৃপক্ষ। জিটি রোডের দু’ধার সাজাতে বিজ্ঞপ্তি জারি করেই পুরসভা দায় সেরেছে। প্রাক্তন পুরপ্রধান সিপিএমের আইনুল হকও বলেন, ‘‘নামেই বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে, কাজের কাজ কিছুই হবে না।’’ যদিও বর্ধমান পুরসভার দাবি, পুরসভা ও জেলা প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে ‘বিউটিফিকেশন অফ জিটি রোড’ নামে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সভাপতি হয়েছেন বর্ধমানের অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) নিখিল নির্মল। সম্প্রতি জেলাশাসকের দফতরে এ নিয়ে বৈঠকও হয়েছে। সেখানে জিটি রোডকে কী ভাবে আরও সুন্দর করে সাজানো যায়, সে ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। অতিরিক্ত জেলাশাসক বলেন, “জানুয়ারি থেকেই পুরকর্মীরা রাস্তায় নেমে বিজ্ঞপ্তি মেনে চলছে কি না তা দেখবেন। না মানলে জরিমানাও করা হবে।’’ বিজ্ঞপ্তি জারি করার আগে একাধিকবার জেলাশাসক, ওই এলাকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকও করেছে পুরসভা।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে হকারদের রাস্তা দখল নিয়ন্ত্রণে আনারও চেষ্টা করা হয়। জানানো হয়েছে, শহরের জিটি রোডের দু’পাশে স্থায়ী বা অস্থায়ী কোনও রকম কাঠামো তৈরি করা যাবে না। হলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তবে ওই সব হকারদের ভ্রাম্যমান গাড়ি কিনে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে পুরসভা। ঠিক হয়েছে, ভ্রাম্যমান গাড়ির অর্ধেক খরচ পুরসভা দেবে। বাকিটা হকার দেবেন।
কিন্তু বিজ্ঞপ্তি জারি করার তিন সপ্তাহ পরেও রাস্তাঘাটে কোনও উদ্যোগ নজরে পড়ছে না কেন? পুরপ্রধানের জবাব, ‘‘আমরা সরাসরি জিটি রোড সংলগ্ন হকারদের সঙ্গে কথা বলছি। কতজন হকার রয়েছেন তার তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তাঁদেরকে বুঝিয়ে জিটি রোডের সৌন্দর্যায়ন করতে চাই। তাঁরাও সম্পূর্ণ সহযোগিতা করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা এ ব্যাপারে কোনও রকম তড়িঘড়ি করতে চাই না।” অতিরিক্ত জেলাশাসকও (সাধারণ) বলেন, “নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মধ্যে এই কাজ করতে হবে সময় লাগছে।”
হকার নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে শহরের আকাশ বিজ্ঞাপনমুক্ত করারও উদ্যোগ করেছে পুরসভা। জিটি রোড লাগোয়া এলাকাকে ‘নো ব্যানার অ্যান্ড নো ওয়াল রাইটিং’ এলাকা বলে ঘোষণা করা হয়েছে। জানানো হয়েছে, পুরসভার অনুমতি ছাড়া কোনও রকম ব্যানার বা হোর্ডিং টাঙানো যাবে না। ব্যানারের মাপও নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। তবে কবে পরিকল্পনার বাস্তবায়ন হবে, সে প্রশ্ন রয়েই যায়।