স্কুলের নামেই বেঁচে আছে ‘বিলুপ্ত’ গ্রাম ভুরকুণ্ডা

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আসলে ভুরকুণ্ডা গ্রামের আজ আর অস্তিত্বই নেই। শুধু স্কুলের নামের সঙ্গেই আজও বেঁচে রয়েছে গ্রামের স্মৃতি। প্রবীণদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, কৃষিপ্রধান ভুরকুণ্ডা গ্রামে এক সময় কয়েকশো পরিবারের বাস করত।

Advertisement

অর্পিতা মজুমদার

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০১৭ ০৬:৪০
Share:

ভাঙা-গড়া: বাঁ দিকে, স্কুলের পুরনো বাড়ি। ডান দিকে, স্কুলের নতুন ভবন। নিজস্ব চিত্র

ভুরকুণ্ডা এনসি ইনস্টিটিউশন। দুর্গাপুর-ফরিদপুর ব্লকের প্রতাপপুর পঞ্চায়েতের অম্তর্গত বড়গোড়িয়ার একমাত্র উচ্চ বিদ্যালয় এটি। সাধারণত জায়গার সঙ্গে নামের বিশেষ কোনও প্রতিষ্ঠানের মিল থাকে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে উল্টো।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আসলে ভুরকুণ্ডা গ্রামের আজ আর অস্তিত্বই নেই। শুধু স্কুলের নামের সঙ্গেই আজও বেঁচে রয়েছে গ্রামের স্মৃতি। প্রবীণদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, কৃষিপ্রধান ভুরকুণ্ডা গ্রামে এক সময় কয়েকশো পরিবারের বাস করত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইংরেজরা এখানে সামরিক ঘাঁটি গড়ে তোলে। ‘অ্যারোড্রাম’ও তৈরি হয়। কিছু প্রয়োজন ও ইংরেজদের ভয়ে গ্রামছাড়া হন বাসিন্দারা।

স্বাধীনতার পরে ফের কিছু পরিবার পূর্বপুরুষের স্মৃতি বিজড়িত গ্রামে এসে বসবাস শুরু করেন। কিন্তু গ্রামে কোনও স্কুল ছিল না। সমস্যার সমাধানে গ্রামেরই কয়েক জন অ্যারোড্রামের একটি ভগ্ন বাড়িতে ১৯৬০ সালে স্কুল চালু হয়। তারপর থেকে ৩৭ বছর ধরে স্কুলটি এই বাড়িতেই ছিল।

Advertisement

কিন্তু গ্রামের জনসংখ্যা কমছিল। বাড়তে থাকে চোর-ডাকাতের উপদ্রব। ভুরকুণ্ডা এনসি ইনস্টিটিউশনের বর্তমান প্রধান শিক্ষক মহম্মদ আলি বলেন, ‘‘তখন শিক্ষকেরা স্কুলেই থাকতেন, কষ্ট করে। প্রাক্তন প্রয়াত শিক্ষক নারায়ণচন্দ্র ঘোষালের কাছে গল্প শুনেছি, চোরেরা চুরি করে তাঁকে প্রণাম করে গিয়েছিল। চোরেরা চলে গেলে তিনি না কি স্বগতোক্তি করেছিলেন, ‘ওরা আসলে পেটের দায়ে চুরি করে। এমনিতে ভাল!’’

১৯৯৭ সালে বড়গোড়িয়ায় নতুন ভবনে উঠে আসে স্কুলটি। ততদিনে জনশূন্য হয়ে গিয়েছে ভুরকুণ্ডা। প্রথমে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত থাকলেও পরের বছর স্কুলে দশম শ্রেণি চালু হয়। উচ্চ মাধ্যমিকে উন্নীত হয় ২০১৪ সালে। বড়গোড়িয়ার নতুন ভবনে শুরু হয় অন্য রকম সমস্যা। বড়গোড়িয়ায় এলেও স্কুলের নাম কিন্তু ভুরকুণ্ডা এনসি ইনস্টিটিউশনই থেকে যায়। এতে অফিসের নানান কাজে সমস্যা শুরু হতে থাকে। বিশেষ করে চিঠিপত্রের ক্ষেত্রে। এখন ই-মেলে চিঠি এলেও কিছুদিন আগে পর্যন্ত ডাক যোগাযোগই ভরসা ছিল।

বড়গোড়িয়া ধবনী ডাকঘরের এলাকার মধ্যে পড়ে। অন্যদিকে, ভুরকুণ্ডার ডাকঘর ছিল জামগড়া। ফলে স্কুলের নামে চিঠি এলে বহু সময় তা জামগড়ায় পড়ে থাকত। বহু চিঠিই সময়ে হাতে না আসায় কাজকর্মে সমস্যা হত। তবে দেরিতে হলেও ডাককর্মীরা নিজ দায়িত্বে সেই চিঠি পৌঁছে দিতেন স্কুলে। স্কুলের বর্তমান প্রধান শিক্ষক মহম্মদ আলি বলেন, ‘‘আমি ডাককর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞ। তাঁরা নিয়মের থেকে স্কুলের প্রয়োজনীয়তাকে গুরুত্ব দিয়ে ডাক পৌঁছে দিতেন স্কুলে।’’

বড়গোড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা কাজল অধিকারী বলেন, ‘‘ছোটবেলায় প্রায় সাত কিলোমিটার হেঁটে স্কুলে যেতাম। স্কুল এখন আমাদের গ্রামে। স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় ৮০০। আমার ছেলেরাও এই স্কুল থেকেই পড়াশোনা করেছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন