চিকিৎসায় অবহেলা, টাকা ফেরানোর নির্দেশ

আইনজীবীরা জানান, ২০০৭ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি রানিগঞ্জের অশোকপল্লির বাসিন্দা অভ্র মৈত্র দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হন। আসানসোল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাঁকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৭ ১৩:০০
Share:

প্রতীকী ছবি।

দুর্ঘটনায় জখম যুবকের মৃত্যুতে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন প্রৌঢ় দম্পতি। আসানসোলের চেলিডাঙার ওই নার্সিংহোম ও দুই চিকিৎসককে দু’লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিল ক্রেতা সুরক্ষা আদালত।

Advertisement

এর সঙ্গেই মামলার খরচ বাবদ মৃতের বাবা-মাকে পাঁচ হাজার টাকা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন পঙ্কজকুমার সিংহ ও শিল্পী মজুমদারকে নিয়ে গঠিত ওই বেঞ্চ। যদিও অভিযুক্তদের আইনজীবী দেবকৃষ্ণ সিংহের দাবি, “এই রায়ে বেশ কিছু অসঙ্গতি রয়েছে। আমরা উচ্চ আদালতে আবেদন করব।”

আইনজীবীরা জানান, ২০০৭ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি রানিগঞ্জের অশোকপল্লির বাসিন্দা অভ্র মৈত্র দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হন। আসানসোল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাঁকে। সেখানকার চিকিৎসক সুপ্রিয় মাইতি অভ্রর বাবা-মাকে জানান, হাসপাতালের পরিকাঠামোয় দ্রুত অস্ত্রোপচার করে ছেলেকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব নয়। এরপরেই ওই চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে আসানসোলের লোয়ার চেলিডাঙার ‘মেডিকেল সেন্টার’ নামে নার্সিংহোমে ছেলেকে অভ্রর বাবা বাসুদেববাবু ও মা তনুশ্রীদেবী।

Advertisement

তাঁদের অভিযোগ, দ্রুত অস্ত্রোপচার করানো হবে বলে ছেলেকে ভর্তি করে নেওয়া হয়। কিন্তু তিন দিন পরে অস্ত্রোপচার হয়। প্রায় পাঁচ ঘন্টা ধরে অস্ত্রোপচার চলে। তাঁদের দাবি, অস্ত্রোপচারের পরে অ্যানাস্থেসিস্ট তাপস সেন বেরিয়ে জানান, তাঁদের ছেলে ভাল রয়েছে। কিন্তু এর আধ ঘন্টার মধ্যেই চিকিৎসক সুপ্রিয়বাবু জানান, তাঁর ছেলে মারা গিয়েছেন। এরপরেই চিকিৎসার গাফিলতিতে ছেলের মৃত্যু হয়েছে বলে বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ জানান প্রৌঢ় দম্পতি। তবে সাড়ে মেলেনি। শেষমেশ, ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা করেন তাঁরা।

ওই প্রৌঢ় দম্পতির আইনজীবী সংযুগ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “অত্যাধুনিক পরিষেবার নাম করে দুর্ঘটনায় জখম যুবককে হাসপাতাল থেকে ছাড়িয়ে আনতে বাধ্য করা হয়। অথচ সংশ্লিষ্ট নার্সিংহোমে অস্ত্রোপচারের ন্যূনতম ব্যবস্থা ছিল না।’’ তাঁর দাবি, ‘‘শ্বাসযন্ত্রে সমস্যা থাকায় ও দেরিতে অস্ত্রোপচারের কারণে ওই যুবক মারা যান।’’

তবে দুই চিকিৎসক ও চেলিডাঙার ওই নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ আদালতে দাবি করেছেন, বিষয়টি চিকিৎসার গাফিলতি একেবারেই নয়। ওই যুবকের ওজন অতিরিক্ত ছিল। তা ছাড়া অস্ত্রোপচারের আগে হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার জন্য তিন ইউনিট রক্ত দিতে হয়। তবে অস্ত্রোপচারের পরে যুবকের জ্ঞানও ফিরেছিল বলেও তাঁদের দাবি।

আদালত অবশ্য তাঁদের কথায় আমল দেয়নি। রায়ে বিচারকরা উল্লেখ করেন, রোগীর জন্য আগাম সতর্কতা নেওয়ার কোনও রিপোর্ট পাওয়া যায়নি। নার্সিংহোমে আইসিসিইউ বা ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থাও নেই। এমনকী, মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের রিপোর্টে জানানো হয়েছে, ওই নার্সিংহোমের থেকে সরকারি হাসপাতালে সুবিধা বেশি ছিল। সব মিলিয়ে চিকিৎসার গাফিলতির জন্যই যুবকের মৃত্যু হয়েছে বলে মনে করেছে বিচারকেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন