ডাক এসেছিল ইন্টারভিউয়ের। কিন্তু হাতে যখন ইন্টারভিউয়ের চিঠিটা এল, তত দিনে সময় পেরিয়ে গিয়েছে। পশ্চিম বর্ধমানের সালানপুর ব্লকের চারটি গ্রামের বাসিন্দাদের বাসিন্দাদের অভিযোগ, তাঁদের চিঠিপত্র, সবই আসে ঝাড়খণ্ডের মিহিজাম ডাকঘরে। অভিযোগ, সেখান থেকে চিঠি আসে না। উল্টে চিঠি আনতে যেতে হয় ডাকঘরে।
প্রশাসনের সূত্রে জানা গিয়েছে, আল্লাডি গ্রাম পঞ্চায়েতের ধাঙ্গরি, কালীপাথর, ডোমদহ ও মাজলাডিহি এই চারটি গ্রামে প্রায় ১৫ হাজার মানুষের বাস। তাঁরা পশ্চিমবঙ্গেরই বাসিন্দা। কিন্তু স্বাধীনতার আগে থেকে এ পর্যন্ত তাঁদের ডাকঘরের ঠিকানা, মিহিজাম। এর ফলে কী ভোগান্তি হচ্ছে?
ঘটনা এক: মাস ছ’য়েক আগে আত্মীয়ের পাঠানো মানি অর্ডারের টাকা পেতে কালঘাম ছোটে ধাঙ্গরির বাসিন্দা অরবিন্দ মণ্ডলের। তিনি জানান, শেষমেশ ওই ডাকঘরে সচিত্র পরিচয়পত্র দেখিয়ে তবেই মেলে টাকা।
ঘটনা দুই: কালীপাথরের নিবারণ দে জানান, ইন্টারভিউয়ের চিঠি মিহিজামে গিয়ে আনতে হয়েছে তাঁকে। তার পরেও লাভ হয়নি। কারণ, যখন সেই চিঠি তিনি হাতে পান, তত দিনে ইন্টারভিউয়ের দিন পেরিয়ে যায়।— একটা, দু’টো নয়, এমন ভোগান্তির উদাহরণ আরও আছে বলে দাবি বাসিন্দাদের।
তাঁদের অভিযোগ, ভিন্-রাজ্য হওয়ায় মিহিজাম থেকে পাঁচ কিলোমিটার উজিয়ে চিঠিপত্র বিলি করতে আসেন না ডাক বিভাগের কর্মীরা। অগত্যা বাসিন্দাদেরই যেতে হয় ডাকঘরে! অথচ, এই গ্রামগুলির থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে রয়েছে রূপনারায়ণপুর ডাকঘর। ডোমদহোর প্রবীণ বাসিন্দা ভোলানাথ ধীবরের আক্ষেপ, ‘‘কতকাল কেটে গিয়েছে গ্রামের রাস্তায় আর ডাক-হরকারার দেখা পাই না।’’ শেখ সামিম নামে এক জনের ক্ষোভ, স্থানীয় প্রশাসন-সহ নানা জায়গায় সমস্যার বিষয়ে দরবার করেও লাভ হয়নি।
যদিও সালানপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শ্যামল মজুমদার বলেন, ‘‘ডাকঘর কর্তৃপক্ষের কাছে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানিয়েছি।’’ একই আবেদন জানিয়েছেন বিডিও (সালানপুর) তপনকুমার সরকারও। ডাকঘরের আসানসোল ডিভিশনের সিনিয়র সুপারিন্টেন্ডেন্ট অমিত লাহিড়ি। তিনি বলেন, ‘‘ওই চার গ্রামের ডাকঘর-বদলের প্রাথমিক প্রক্রিয়া শুরু করেছি।’’ ডাকঘর সূত্রে জানা গিয়েছে, বাসিন্দাদের দাবি মতো এই চার গ্রামকে রূপনারায়ণপুর অথবা বাসুদেবপুর জেমারি ডাকঘরের সঙ্গে যুক্ত করার পরিকল্পনা হয়েছে। এই চারটি গ্রামের জন্য একটি উপডাকঘর তৈরি করা যায় কি না, সে বিষয়েও ভাবনাচিন্তা চলছে বলে ডাকঘর কর্তৃপক্ষ জানান।