Duare sarkar

আগে মেলেনি পরিষেবা, বিক্ষোভ দুয়ারে সরকারে

পঞ্চায়েত ভোটের মুখে এ বার নিবিড় ভাবে দুয়ারে সরকার শিবির করাতে বুথে-বুথে শিবিরের পরিকল্পনা নিয়েছে রাজ্য সরকার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান, গলসি শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০২৩ ০৮:৫২
Share:

শিড়রাইয়ে শিবিরে জড়ো গ্রামবাসী। নিজস্ব চিত্র

দুয়ারে সরকারে আবেদন নথিবদ্ধ করার ২০ দিনের মধ্যে বিষয়টির নিষ্পত্তি করতে হবে, এপ্রিলের গোড়াতেই চালু হওয়া শিবিরগুলির জন্য প্রশাসনের তরফে এমনই সমসীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু শনিবার সেই শিবির চালু করতে গলসি ১ ব্লকের শিড়রাই গ্রামে প্রশাসনকে বাধার মুখে পড়তে হল। বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, এর আগে বার্ধক্য ভাতা, কৃষকবন্ধু, বিধবা ভাতার মতো একাধিক প্রকল্পে বার বার আবেদন করেও পরিষেবা মেলেনি।

Advertisement

পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তারা গ্রামবাসীকে বুঝিয়ে দুপুরে শিবির চালু করেন। জেলাশাসক প্রিয়াঙ্কা সিংলা বলেন, ‘‘গলসিতে একটি সমস্যা হয়েছিল। ভুল বোঝাবুঝি মিটে গিয়েছে। মানুষের কোনও অভিযোগ থাকলে তা জানানোর বাক্স রয়েছে। অভিযোগ পেলে পদক্ষেপ করা হবে।’’ বিডিও (গলসি ১) দেবলীনা দাস বলেন, “বাসিন্দাদের বলা হয়েছে, নির্দিষ্ট ভাবে অভিযোগ করতে। আমরা তা খতিয়ে দেখব।’’

পঞ্চায়েত ভোটের মুখে এ বার নিবিড় ভাবে দুয়ারে সরকার শিবির করাতে বুথে-বুথে শিবিরের পরিকল্পনা নিয়েছে রাজ্য সরকার। এ দিন শিড়রাই আলিজান মল্লিক হাইস্কুলে সাতটি বুথের জন্য শিবির করা কথা ছিল। ব্লকের আধিকারিকেরা নির্দিষ্ট সময়ে স্কুলে পৌঁছলেও কিছু গ্রামবাসী শিবির চালু করতে বাধা দেন। কোহিনুর বেগম নামে এক মহিলার অভিযোগ, “আমি বিধবা ভাতার জন্য দু’বার আবেদন করেছি। কিন্তু এখনও ভাতা চালু হয়নি।” শেখ কাঞ্চন বলেন, “কৃষকবন্ধুর জন্য তিন বার আবেদন করেছি। কিন্তু চালু হয়নি।” নুর ইসলাম মণ্ডল, মান্নান মণ্ডলদের অভিযোগ, তাঁরা বার্ধক্য ভাতার জন্য একাধিক বার আবেদন জমা দিলেও ভাতা মেলেনি।

Advertisement

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বিধবা ও বয়স্ক ভাতার জন্য পোর্টাল রয়েছে। সেই পোর্টাল বন্ধ থাকায় অনেক আবেদন নথিভুক্ত করা যায়নি। কৃষকবন্ধু ক্ষেত্রে অভিযোগ ওঠার কথা নয় বলে প্রশাসনের কর্তাদের দাবি। নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে পদক্ষেপ করা হবে বলে জানান তাঁরা। শিবির করতে বাধার খবর পেয়ে গ্রামে যান বিডিও, ওসি দীপঙ্কর সরকার। গ্রামবাসীর অভিযোগ খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেওয়ার পরে শিবির চালু হয়।

বিজেপির জেলা (বর্ধমান) সহ-সভাপতি রমেন শর্মার অভিযোগ, “প্রশাসনের দরজায় গিয়ে পরিষেবা পাওয়ার কথা। তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আর দুয়ারে সরকারের নামে মানুষকে ভাঁওতা দেওয়া হচ্ছে। শিড়রাইয়ের ঘটনা তার বড় প্রমাণ।’’ তৃণমূলের গলসি ১ ব্লক সভাপতি জনার্দন চট্টোপাধ্যায়ের পাল্টা দাবি, “মানুষের একেবারে কাছে সরকারি পরিষেবা পৌঁছে দিতেই দুয়ারে সরকার প্রকল্প। শিড়রাইয়ে মানুষ যা অভিযোগ করেছেন, তা সত্যি হলে অবশ্যই প্রশাসন পদক্ষেপ করবে। এ নিয়ে রাজনীতি অর্থহীন।’’

এ দিন বর্ধমানের টাউন হলেও পরিষেবা না পাওয়ার অভিযোগ করেন কিছু বাসিন্দা। বর্ধমানের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা নবেন্দু নায়েক অভিযোগ করেন, ২০২১ সালে তাঁর স্ত্রী লক্ষ্মীর ভান্ডারের জন্য আবেদন করেন। কিন্তু টাকা আসেনি। পরের বার দুয়ারে সরকারে তাঁকে ফের আবেদন করতে বলা হয়। এ বারও টাকা মেলেনি। তৃতীয় বার শিবিরে এলে তাঁকে জানান হয়, তাঁর স্ত্রীর টাকা অন্যের অ্যাকাউন্টে চলে যাচ্ছে। এটা পুরসভায় গিয়ে ঠিক করতে হবে। তাঁর দাবি, পুরসভায় গিয়ে অন্যের আকাউন্টে টাকা যাওয়ার বন্ধ করালেও, স্ত্রীর অ্যাকাউন্টে টাকা আসেনি। শনিবার চতুর্থ বার স্ত্রীকে নিয়ে শিবিরে এসে ফের ওই প্রকল্পে আবেদন করেন বলে জানান। শহরের বাসিন্দা স্বাগতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, গত বছর শিবির আবেদন করলেও তাঁর স্বাস্থ্যস্থাথী কার্ড হয়নি। শনিবার ফের আবেদন করেন।

বর্ধমানের পুরপ্রধান পরেশচন্দ্র সরকার বলেন, ‘‘বহু মানুষের আবেদন জমা হচ্ছে। দু’একটি সমস্যা হয়তো হচ্ছে। আমরা সব সমস্যা মিটিয়ে পরিষেবা পৌঁছে দেব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন