রোগীর পরিজনদের বিক্ষোভ বর্ধমান মেডিক্যালে। নিজস্ব চিত্র
রোগীর অবস্থা সঙ্কটজনক জানিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রেসক্রিপশনে লিখে দিয়েছিলেন, ‘আরজেন্ট অ্যাডমিট’। দশ মিনিটের মধ্যে রোগীকে নিয়ে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে হাজির হন পরিজনেরা। অভিযোগ, রোগীকে না দেখে বহির্বিভাগের চিকিৎসকের কাছে যেতে বলেন ডাক্তারেরা। সেখানে নিয়ে যাওয়ার পথে মারা গেলেন বর্ধমানের দুবরাজদিঘির মালির বাগানের বাসিন্দা শেখ আব্দুল আজিম (৬২)।
বুধবার বেলা সাড়ে ১০টা নাগাদ এই ঘটনার পরে প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে মৃতের পরিজনেরা প্রথমে জরুরি বিভাগ, পরে সুপারের ঘরের সামনে বিক্ষোভ দেখান। মৃতের দুই ছেলে শেখ মকবুল ও শেখ মনিরুল সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন, ন্যূনতম চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার ব্যাপারে চিকিৎসকদের অনীহার জন্যেই বাবা মারা গিয়েছেন। তাঁরা জরুরি বিভাগের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। হাসপাতাল সুপার উৎপল দাঁ বলেন, “খুবই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হচ্ছে।’’ উৎপলবাবুর নেতৃত্বেই পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ওই বৃদ্ধ বুকের সংক্রমণে দীর্ঘদিন ধরে ভুগছেন। দশ দিন আগে বর্ধমানের এক চিকিৎসককে দেখান। এ দিন শ্বাসকষ্ট শুরু হলে তাঁকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী, চিকিৎসকও রোগীর অবস্থা ভাল বলে মনে করেননি। সে জন্য তিনি হাসপাতালে রোগীকে দ্রুত ভর্তি করার পরামর্শ দেন। মৃতের ছেলেদের অভিযোগ, ‘‘আমরা দশ মিনিটের মধ্যে বাবাকে জরুরি বিভাগে নিয়ে আসি। সেখানে সাত-আট জন ডাক্তার ছিলেন। আমাদের কথা শুনে তাঁরা বহির্বিভাগের বুকের বিভাগে গিয়ে ডাক্তারকে দেখাতে বলেন। রোগীকে ছুঁয়ে দেখা তো দূর, তাঁরা প্রেসক্রিপশনটাও দেখেননি।’’ তাঁদের দাবি, বেশ কিছুটা সময় গড়িয়ে যাওয়ার পরে বাধ্য হয়ে বাবাকে বহির্বিভাগে নিয়ে যাচ্ছিলেন। কিছুটা যাওয়ার পরেই তিনি মারা যান। তাঁদের অভিযোগ, ‘‘ওই সময়য়েও আমরা কোনও ডাক্তার পাইনি।’’
এর পরেই বিক্ষোভ শুরু হয়। পুলিশ গিয়ে মৃতের পরিজনদের বুঝিয়ে হাসপাতাল সুপার ও ডেপুটি সুপারের কাছে নিয়ে গেলে বিক্ষোভ থামে। মৃতের ছেলেরা হাসপাতালের কর্তাদের বলেন, ‘‘ডাক্তারেরা এক বার রোগীকে দেখতে তো পারতেন! তাহলে হয়তো এ ভাবে মারা যেতেন না!’’