Bridge

Bridge: দাঁড়িয়ে ট্রাক, প্রশ্ন সেতুর স্বাস্থ্য নিয়ে

২০১৮-র ১৮ অক্টোবর এই সেতুর কলকাতামুখী লেনের পাঁচ নম্বর স্তম্ভে ফাটল ধরে। ওই রাত থেকে লেনটি বন্ধ করে দেন ২ নম্বর জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আসানসোল শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০২২ ০৬:৫৮
Share:

ডুবুরডিহি সেতুতে কলকাতামুখী লেনে দাঁড়িয়ে ট্রাক। মঙ্গলবার পশ্চিমবঙ্গ-ঝাড়খণ্ড সীমানায়। নিজস্ব চিত্র।

ভিন্‌-রাজ্য থেকে থেকে আসা কয়লা বোঝাই ট্রাক এবং পরিবহণের নথিপত্র পরীক্ষায় জোর দিচ্ছে আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট। কিন্তু অভিযোগ, এর ফলে, পশ্চিমবঙ্গ-ঝাড়খণ্ড সীমানায়, পশ্চিম বর্ধমানের বরাকরের ডুবুরডিহি সেতুর কলকাতামুখী লেনে প্রায় সাত দিন ধরে সার বেঁধে দাঁড়িয়ে রয়েছে প্রায় শ’দেড়েক ট্রাক। এই পরিস্থিতিতে, মঙ্গলবার ২ নম্বর জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের আশঙ্কা, ওই ট্রাকগুলির ভারে বরাকর নদের উপরের ওই সেতুর স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে। বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও।

Advertisement

ঘটনাচক্রে, ২০১৮-র ১৮ অক্টোবর এই সেতুর কলকাতামুখী লেনের পাঁচ নম্বর স্তম্ভে ফাটল ধরে। ওই রাত থেকে লেনটি বন্ধ করে দেন ২ নম্বর জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। দিল্লিমুখী লেন দিয়েই দু’প্রান্তের যানবাহন চলাচল করতে শুরু করে। পরে, প্রায় এক বছর ধরে সংস্কারের কাজ চালিয়ে লেনটি খুলে দেওয়া হয়। তবে সেতুর দু’পাশে ‘ক্যান্টিলিভারের’ সাহায্যে যে হাঁটা পথ তৈরি করা হয়েছিল, তা পুরোপুরি বন্ধ করা হয়। পাঁচ নম্বর স্তম্ভের দু’প্রান্তে প্রায় ৩০ ফুটেরও বেশি অংশ স্থায়ী ভাবে ঘিরে দেওয়া হয়েছে। ওই সময়ই ২ নম্বর জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ জানান, সেতুর উপরে পণ্য বোঝাই ট্রাক ও অন্য যানবাহন দাঁড় করিয়ে রাখা যাবে না। তাতে সেতুর উপরে চাপ পড়বে।

কিন্তু কর্তৃপক্ষের পর্যবেক্ষণ, গত প্রায় সাত দিন ধরে সেতুর উপরেই ‘দাঁড় করিয়ে রাখা’ হয়েছে শ’দেড়েক কয়লা বোঝাই ট্রাক। ২ নম্বর জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের বারওয়াড্ডার প্রজেক্ট ডিরেক্টর মলয় দত্ত বলেন, “এই ঘটনায় আমরা খুবই আতঙ্কিত। সেতুর উপরে দিনের পর দিন কয়লা বোঝাই ট্রাক দাঁড় করিয়ে রাখাটা অত্যন্ত অন্যায়। আমরা পুলিশকে বিষয়টি জানিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানাব।” নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সড়ক কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, যে স্তম্ভে ফাটল ধরেছিল, সেখানেও পর পর কয়লা বোঝাই ট্রাক দাঁড় করানো হয়েছে। মঙ্গলবারই টুইট করে শুভেন্দুও দাবি করেন, “পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন শিল্পক্ষেত্রে যাওয়ার জন্য কোল ইন্ডিয়ার চালান নিয়ে, ঝাড়খণ্ড থেকে ট্রাকগুলি এসেছে। কিন্তু সব নথি থাকা সত্ত্বেও রাজ্যে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।” তাঁর অভিযোগ, একই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরেও।

Advertisement

মঙ্গলবার দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়েও দেখা গিয়েছে, সার বেঁধে দাঁড়িয়ে ট্রাক। মধ্যপ্রদেশ থেকে দুর্গাপুরের একটি কারখানায় কয়লা নিয়ে যাচ্ছেন সাবির আনসারি। তিনি বলেন, “পাঁচ দিন ধরে কাগজপত্র পরীক্ষা করানোর জন্য দাঁড়িয়ে আছি।” রাঁচি থেকে কয়লা বোঝাই ট্রাক নিয়ে জামুড়িয়ার একটি কারখানায় যেতে গিয়ে আটকে পড়েছেন ভূনেশ্বর প্রসাদ। তিনি বলেন, “চার দিন ধরে আটকে আছি। কবে ছাড়া পাব, জানি না।”

কিন্তু এতটা সময় লাগছে কেন? পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কাগজপত্র খুঁটিয়ে পরীক্ষা করা হচ্ছে। পাশাপাশি, চালকেরা যে কোলিয়ারি থেকে কয়লা বোঝাই করে এনেছেন, সে কোলিয়ারি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টির সত্যতা যাচাই করা হচ্ছে। তার পরে, কাগজপত্রের ‘ফটোকপি’ জমা রেখে ট্রাক ছাড়া হচ্ছে। কমিশনারেটের এসিপি (পশ্চিম) সুকান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “অবৈধ কয়লা এ রাজ্যে কোনও ভাবেই ঢুকতে দেওয়া হবে না। সে জন্য ধারাবাহিক পরীক্ষা করা হচ্ছে। এ কাজ চলবে।” পুলিশ সূত্রে দাবি, ঝাড়খণ্ডের কুমারডুবি, নিরসা, মুগমা, গল্ফাবাড়ি-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় ‘অবৈধ’ খনন চলছে। সে সব কয়লা পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন বেসরকারি কারখানাতেও ঢুকছে বলে তাদের কাছে খবর রয়েছে। জেলার শিল্পাঞ্চলে সে কয়লা মজুত করার পরিকল্পনাও চলছে বলে একটি সূত্রের দাবি।

তবে সেতুর স্বাস্থ্য বিষয়ে যে আশঙ্কার কথা উঠছে, তা নিয়ে সুকান্ত বলেন, “কোনও ট্রাক চালককে পুলিশ সেতুর উপরে দাঁড় করাচ্ছে না। চালকেরাই সেখানে ট্রাক দাঁড় করাচ্ছেন।”

এ দিকে, সড়ক কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ৪৫ বছর আগে, তৎকালীন বিহার সরকারের পূর্ত দফতর এই সেতুটি তৈরি করেছিল। পরে, ২ নম্বর জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ এই সেতুর পাশে আরও একটি সেতু তৈরি করে। পুরনো সেতুটি এখন কলকাতামুখী যানবাহন ও নতুন সেতুটি দিল্লিমুখী যানবাহন চলাচলের জন্য ব্যবহার করা হয়। দিল্পি-সহ লাগোয়া রাজ্যগুলির সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের পণ্য পরিবহণে ডুবুরডিহি সেতুটির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন