জেলা জুড়ে চোলাই পাচার মোটরবাইকে

জেলার এক প্রাক্তন আবগারি আধিকারিকের কথায়, ‘‘কার্যত উত্তরাধিকার সূত্রে চোলাই ব্যবসা চলছে ওই এলাকায়। সময়ের সঙ্গে ও লাগাতার অভিযানের ফলে চোলাই ছেড়ে কিছু লোকজন অন্য পেশায় যোগ দিলেও এখনও অধিকাংশ পরিবারের জীবিকা চোলাই কারবার।’’

Advertisement

সৌমেন দত্ত

বর্ধমান শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৯ ০২:৩০
Share:

বর্ধমান-কাটোয়া রোড ধরে বিজয়রাম কালীতলা থেকে বাঁ দিকে এগোলেই একটি পুকুর। সেখান থেকে নাকে আসে কটূ গন্ধ। আশপাশের বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, এলাকার অনেকেই যুক্ত রয়েছেন চোলাই কারবারে। চোলাই তৈরি থেকে ভিন্‌ এলাকায় পাচারে জড়িত রয়েছেন অনেক পুরুষ-মহিলা। জেলা আবগারি দফতরের কর্তারা জানান, বিজয়রামে চোলাইয়ের সঙ্গে জড়িত মানুষজন যাতে এই পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় যান, সেই চেষ্টাই করছেন তাঁরা। সে জন্য দফতরের তরফে নামের একটি তালিকা জেলা প্রশাসনের হাতে তুলে দিতে চাইছেন। জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব জানান, আবগারি দফতরের তালিকা পেলে তাঁরা বিকল্প পেশার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করবেন।

Advertisement

জেলার এক প্রাক্তন আবগারি আধিকারিকের কথায়, ‘‘কার্যত উত্তরাধিকার সূত্রে চোলাই ব্যবসা চলছে ওই এলাকায়। সময়ের সঙ্গে ও লাগাতার অভিযানের ফলে চোলাই ছেড়ে কিছু লোকজন অন্য পেশায় যোগ দিলেও এখনও অধিকাংশ পরিবারের জীবিকা চোলাই কারবার।’’ জেলা আবগারি দফতরের দাবি, বছর দু’য়েক আগে গলসিতে বিষমদে ছ’জনের মৃত্যু হয়। তার পর থেকে বিজয়রামকে নিশানা করেন আধিকারিকেরা। তাঁদের দাবি, টানা অভিযানে চোলাই-ব্যবসা কমেছিল। শান্তিপুর-কাণ্ডের পরে জেলা পুলিশ ও আবগারি দফতরের যৌথ অভিযানে একেবারে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। জেলার আবগারি দফতরের সুপারিন্টেন্ডেন্ট তপনকুমার মাইতির বক্তব্য, ‘‘অন্য জেলায় কর্তব্যরত থাকাকালীনও বিজয়রামের নাম শুনতাম। মাঝে চোলাই কারবার বন্ধ হয়েছিল। এখন আবার শুরু হয়েছে খবর পেতেই অভিযান চলছে।’’

শুধু বিজয়রাম নয়, আবগারি কর্তাদের ‘মাথাব্যথা’ মেমারির মণ্ডলগ্রাম ও ভাতারের বড়বেলুন। দফতরের কর্মী-আধিকারিকদের একাংশ জানান, বিজয়রাম থেকে ভাতার, গুসকরা, বর্ধমান শহর, কাটোয়া পর্যন্ত চোলাই পাচার হয়। মেমারির মণ্ডলগ্রামে দু’শো লিটার পাত্রে চোলাই তৈরি হয়। সেখান থেকে পূর্বস্থলী, কালনা, মেমারিতে পাচার হয়। বড়বেলুন থেকে চোলাই যায় মন্তেশ্বরের বিভিন্ন গ্রামে। দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘এই সব পাচারের মূল পাণ্ডা মণ্ডলগ্রামের রঘু সাহা। তাঁকে আমরা খুঁজছি।’’

Advertisement

এ দিন বর্ধমান-কাটোয়া রাস্তার ধারে বিক্ষোভের সময়ে কিছু মহিলাকে চোলাইয়ের বিরুদ্ধে অভিযান না চালানোর জন্য দাবি জানাতে শোনা যায়। গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, কারও বড় বাড়ি রয়েছে, কেউ প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় বাড়ি পেয়েছেন, কারও আবার মাটির বাড়ি। কিন্তু প্রায় সব বাড়িতেই রয়েছে দামী মোটরবাইক। আবগারি দফতরের এক কর্তা দাবি করেন, “ওই মোটরবাইকেই বিভিন্ন জায়গায় চোলাই পাচার হয়। মাঝেমধ্যে পুলিশের হাতে ধরাও পড়ে।’’ স্থানীয় বাসিন্দা উৎপল কুণ্ডু, পূর্ণিমা দাসদের কথায়, ‘‘প্রশাসন বিকল্প আয়ের পথ তৈরি করলে ভাটি ভেঙে দেওয়া হবে।’’

তপনবাবু বলেন, ‘‘বিকল্প পেশা নিয়ে জেলাশাসকের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। যাঁরা বিকল্প পেশায় আসতে চান, তাঁদের নামের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। জেলাশাসক আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন