এক দফা পাচারে দেড় লাখ পকেটে

ওয়াইল্ড লাইফ ক্রাইম কন্ট্রোল ব্যুরো সূত্রে জানা যায়, গঙ্গা অববাহিকার ‘রাইট ব্যাঙ্কে’ বিভিন্ন নদী-সেচখালে কচ্ছপ ঘুরে বেড়ায়। শীতে নদীর নিম্ন অববাহিকায় ডিম পাড়ার জন্য ঝাঁকে-ঝাঁকে কচ্ছপ নেমে আসে। সেই সুযোগে জলের নীচে জালের ফাঁদ পেতে কচ্ছপ ধরা হয়।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:৫৮
Share:

পুঁজি দরকার হয় সামান্যই। কিন্তু লাভ প্রায় ২০০ গুণ। সে কারণেই পাচারকারীরা বেপরোয়া। বারবার ধরা পড়া সত্ত্বেও কচ্ছপ পাচার বন্ধ না হওয়ার এটাই কারণ বলে মনে করছেন বন দফতর এবং ‘ওয়াইল্ড লাইফ ক্রাইম কন্ট্রোল ব্যুরো’র কর্তারা।

Advertisement

ওয়াইল্ড লাইফ ক্রাইম কন্ট্রোল ব্যুরো সূত্রে জানা যায়, গঙ্গা অববাহিকার ‘রাইট ব্যাঙ্কে’ বিভিন্ন নদী-সেচখালে কচ্ছপ ঘুরে বেড়ায়। শীতে নদীর নিম্ন অববাহিকায় ডিম পাড়ার জন্য ঝাঁকে-ঝাঁকে কচ্ছপ নেমে আসে। সেই সুযোগে জলের নীচে জালের ফাঁদ পেতে কচ্ছপ ধরা হয়। সামান্য টাকায় তা কিনে নেয় পাচারকারীরা। মুখ্য বনপাল (দক্ষিণ-পূর্ব সার্কেল) কল্যাণ দাসের কথায়, ‘‘কার্যত বিনা পুঁজিতেই গঙ্গা অববাহিকা থেকে কচ্ছপ নিয়ে এসে পাচার করা হয়।’’

ওয়াইল্ড লাইফ ক্রাইম কন্ট্রোল ব্যুরো সূত্রে জানা যায়, এক-একটি বস্তায় ২০-২৫টি কচ্ছপ থাকে। প্রতি বস্তা কচ্ছপ বিক্রি করে অন্তত ছ’হাজার টাকা লাভ হয়। ওই ব্যুরোর এ রাজ্যের অধিকর্তা অগ্নি রায় বলেন, ‘‘এক দফায় ২০-২৫ বস্তা কচ্ছপ পাচার করতে পারলে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত মেলে। সে জন্যই ঝুঁকি নেয় পাচারকারীরা।’’

Advertisement

আধিকারিকদের দাবি, এ রাজ্যেও ‘গ্যাঞ্জেস সফট শেলড টার্টেল’ বা ‘ইন্ডিয়ান ফ্লাগশিপ টার্টেল’র ভাল চাহিদা রয়েছে। উত্তরপ্রদেশ থেকে বর্ধমান হয়ে বনগাঁ সীমান্ত দিয়ে ভিন্‌ দেশে পাচার ছাড়া কিছু কচ্ছপ বিক্রি হয় এখানেও। বেশিরভাগই বিক্রি হয় বারাসাত থেকে বনগাঁর বিভিন্ন এলাকায়। কিছু লুকিয়ে বিক্রি হয় শিয়ালদহ-কলকাতার বিভিন্ন বাজারে। এক কর্তার কথায়, ‘‘সোজা পথে কলকাতার বাজারে কচ্ছপ মিলবে না। বিভিন্ন বাজারে কচ্ছপের নির্দিষ্ট সাংকেতিক নাম রয়েছে। সেই নাম ধরে নির্দিষ্ট লোকের কাছে খোঁজ করলে তবেই মিলবে।’’ তাঁর দাবি, কয়েক বছর আগেও যে কচ্ছপের দাম ছিল ৪০ টাকা, এখন চোরা বাজারে তা বিক্রি হয় ৫০০-৭০০ টাকায়। ভিন্‌ দেশে পাঠাতে পারলে পাচারকারীদের পকেটে ঢোকে বারোশো থেকে দেড় হাজার টাকা। ওয়াইল্ড লাইফ ক্রাইম কন্ট্রোল ব্যুরোর কর্তাদের দাবি, সমস্ত খরচ বাদ দিয়েও ২০০-৩০০ গুণ লাভ হয়। সে জন্যই ঝুঁকি নিতে পিছ-পা হয় না পাচারকারীরা।

বন দফতরের কর্তারা জানান, পুজোর পর থেকে দু’চারটি করে বস্তায় কচ্ছপ নিয়ে আসতে শুরু করে পাচারকারীরা। নজরদারির পরিস্থিতি বুঝে এক সঙ্গে ২০-২৫ বস্তা নিয়ে ট্রেন ধরে ব্যান্ডেল-নৈহাটি বা জাতীয় সড়ক ধরে গাড়িতে হাওড়া-ডানকুনির দিকে রওনা দেয় তারা। বন দফতরের এক পরিবেশবিদ বলেন, ‘‘বন্যপ্রাণ রক্ষা আইনের জন্য কচ্ছপ সংরক্ষণ করা হয়। গঙ্গা দূষণমুক্ত রাখার ক্ষেত্রেও কচ্ছপ ও ডলফিনের ভূমিকা অনস্বীকার্য। সে কারণে কেন্দ্রীয় সরকারের গঙ্গা দূষণ প্রকল্পে এই দু’টি প্রাণীর বিস্তারের কথা বিশেষ ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।’’

বন দফতরের দাবি, এক সময়ে খোলা বাজারে কচ্ছপ বিক্রি হত। ১৯৯১-৯২ সালে কচ্ছপ বিক্রি বেআইনি ঘোষণা হয়। তার পরে নিয়মিত ভাবে এ বিষয়ে সচেতন করা হয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে পাচার রুখতে অভিযান চলছে। পাচারের সময়ে উদ্ধার করা কচ্ছপ কখনও বর্ধমানের রমনাবাগান, কোনও সময় পূর্বস্থলীর চুপিতে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। বন দফতরের কর্তাদের দাবি, টানা নজরদারি রয়েছে বলেই কচ্ছপ উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন