ধুন্ধুমার: বাবাকে হারিয়ে কান্না(ইনসেটে)। বাঁশ দিয়ে ভাঙচুর নার্সিংহোমে। ছবি: জাভেদ আরফিন মণ্ডল
ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু হয়েছে রোগীর, এই অভিযোগে ধুন্ধুমার চলল কালনার একটি নার্সিংহোমে। সোমবার বিকেলে নতুন বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া ওই নার্সিংহোমে ভাঙচুর চালানো হয়। দেহ আটকে এসটিকেকে রোড অবরোধও করেন কালনার কোম্পানিডাঙা গ্রামের লোকজন। পরে পুলিশ এবং শাসকদলের নেতারা দফায় দফায় আলোচনা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
নার্সিংহোম সূত্রে জানা গিয়েছে, অর্শের অস্ত্রোপচারের জন্য দিন দশেক আগে গোপীনাথ আরগ্য নিকেতন নামে ওই নার্সিংহোমে ভর্তি হন বছর তেত্রিশের হুমায়ুন কবির মোল্লা। ওই নার্সিংহোমের এক শল্য চিকিৎসক তাঁর অপারেশন করেন। পেশায় ধান, চালের ব্যবসায়ী মৃতের আত্মীয়দের অভিযোগ, অস্ত্রোপচারের পর থেকেই শরীর হলুদ হয়ে যায় হুমায়ুনের। চোখ মুখও ফুলে যায়। অস্ত্রোপচারের জায়গায় সংক্রমণ দেখা দেয়। ক্রমেই চলাফেরার ক্ষমতা হারান তিনি। মৃতের পরিবারের দাবি, পরিস্থিতি ক্রমশ অবনতি হওয়াই দিন চারেক আগে যে চিকিৎসক অস্ত্রোপচার করেছিলেন তাঁর পরামর্শে হুমায়ুনকে যাদবপুরের একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে গিয়ে জানা যায়, কিডনির অবস্থা মারাত্বক খারাপ। সোমবার সকালে মৃত্যু হয় ওই যুবকের।
কমবয়েসী ছেলের মৃত্যুর খবরে উত্তেজনা ছড়ায় এলাকায়। বিকেল তিনটে নাগাদ কালনার যে নার্সিংহোমে হুমায়ুনকে ভর্তি ছিলেন সেখানে জড়ো হয়ে যান তাঁর গ্রামের লোকজন। দেখা যায়, নার্সিংহোমে ঢোকার দরজায় তালা ঝুলছে। ভেতরে কোনও রোগীও নেই। এরপরেই বাঁশ, লাঠি নিয়ে ক্ষুব্ধ জনতার একাংশ ভাঙচুর চালান নার্সিংহোমের সামনের অংশ এবং লাগোয়া একটি ওষুধের দোকানে। ঘটনাস্থলে পৌঁছন কালনা থানার ওসি প্রণব বন্দ্যোপাধ্যায়। পুলিশ আসতেই শুরু হয় এসটিকেকে রোড অবরোধ। বিকেল চারটে নাগাদ এই রাস্তা দিয়েই ঘটনাস্থলে পৌঁছয় মৃত যুবকের দেহ। দেহ রেখে শুরু হয় অবরোধ। তাঁদের দাবি, দোষী চিকিৎসককে শাস্তি দিতে হবে। তার সঙ্গেই ক্ষতিপূরণ দিতে হবে ওই পরিবারকে।
জনরোষ বাড়তে থাকায় পৌঁছন শাসক দলের নেতা শ্যামল দাঁ এবং শঙ্কর হালদার। তাঁরাও দফায় দফায় আলোচনা করে অবরোধ তোলার চেষ্টা করেন। বিকেল চারটে পঁয়তাল্লিশ নাগাদ পুলিশ, মৃতের পরিবারের লোকজন এবং শাসকদলের নেতারা আলোচনায় বসলে ওঠে অবরোধ। ততক্ষণে এসটিকেকে রোডে দু’পাশে যানজট শুরু হয়ে যায়।
মৃতের ভাগ্নে এয়ারুল মণ্ডলের দাবি, ‘‘নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের চরম গাফিলতির কারণেই মামার মৃত্যু হয়েছে। আমরা চাই চিকিৎসক এবং নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে প্রশাসন ব্যবস্থা নিক।’’ ঘটনাস্থলে ছিল মৃতের ১১ বছরের মেয়ে বর্ষা খাতুন। সে কাঁদতে কাঁদতে বলে, ‘‘বাবাকে ছাড়া থাকার কতা ভাবতেই পারছি না।’’
তবে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ বা অভিযুক্ত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। পুলিশের দাবি, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।