প্রশ্নে নজরদারি, সচেতনতা

দামোদরে বারবার মৃত্যু, ক্ষোভ

এ দিন দুর্গাপুরের মায়াবাজারের দুই কিশোর রোহিত সাহানি, বিশাল বাউরি তলিয়ে যাওয়ার খবর পাড়ায় পৌঁছয়। একই পাড়ায় বাড়ি ওই দুই কিশোর এবং তাদের বন্ধু, রঞ্জন বাগদি। রঞ্জনও স্নান করতে নেমেছিল। বিপদের মুখ থেকে বেঁচে ফিরেছে সে। এ দিনের ঘটনায় শোকগ্রস্ত পুরো পাড়া।

Advertisement

বিপ্লব ভট্টাচার্য

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০১৭ ০২:১০
Share:

উদ্ধারকাজ: রবিবার, দুর্ঘটনাস্থলে ভিড়।  নিজস্ব চিত্র

দুর্ঘটনার পরে দিনকয়েক কড়াকড়ি। চলে নজরদারি। তার পরে অবস্থা যে কে সেই। রবিবার দুপুরে দুর্গাপুর ব্যারাজের লকগেটের সামনে দামোদরে তলিয়ে দু’জন ছাত্রের তলিয়ে যাওয়ার ঘটনার পরে এমনই অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। সেই সঙ্গে তাঁদের দাবি, বারবার দুর্ঘটনার পরেও হুঁশ ফেরেনি অনেকেরই। বিপদের ঝুঁকি নিয়ে চলছে স্নান করা, মাছ ধরা। উল্টো দিকে, দুই কিশোরের মৃত্যুর খবর পৌঁছলে দুর্গাপুরের মায়াবাজারে নেমেছে শোকের ছায়া।

Advertisement

এ দিন দুর্গাপুরের মায়াবাজারের দুই কিশোর রোহিত সাহানি, বিশাল বাউরি তলিয়ে যাওয়ার খবর পাড়ায় পৌঁছয়। একই পাড়ায় বাড়ি ওই দুই কিশোর এবং তাদের বন্ধু, রঞ্জন বাগদি। রঞ্জনও স্নান করতে নেমেছিল। বিপদের মুখ থেকে বেঁচে ফিরেছে সে। এ দিনের ঘটনায় শোকগ্রস্ত পুরো পাড়া। ওই পাড়ারই এক জন সমীর সিংহ বলেন, ‘‘ওরা এক সঙ্গে পড়াশোনা, খেলাধুলে করত। ভীষণ খারাপ লাগছে।’’

তবে এ দিনের দুর্ঘটনাস্থলে বিপদ নতুন নয়। পুলিশ জানায়, চলতি বছর ৫ জুন ওই একই জায়গায় স্নান করতে যায় দুর্গাপুরের এমএএমসি, ডিপিএল কলোনি ও রায়ডাঙা এলাকার বাসিন্দা ছয় বন্ধু। তাদের তিন জন, সুপ্রতিম গোস্বামী, শুভজিৎ বাউরি ও বন্ধু শুভজিৎ সুরের তলিয়ে গিয়ে মৃত্যু হয়। প্রত্যেকেই দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়া। এলাকাবাসীর দাবি, শুধু এই ঘটনায় নয়, এ ছাড়া প্রায় প্রতি বছরই নানা বিপত্তি ঘটছে দামোদরের ওই অংশে।

Advertisement

এলাকাবাসীর দাবি, কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে তার পরে কিছু দিন লকগেটের নীচে নজরদারি চালায় পুলিশ-প্রশাসন। কিন্তু ঘটনার কথা থিতিয়ে যেতেই সে সব উধাও হয় বলে অভিযোগ। বছর তিনেক আগে কয়েক জন কলেজ পড়ুয়ার মৃত্যুর পরে ওই এলাকায় বড়জোড়া থানা নজরদারি চালায়। মাইকে করে নদীতে না নামার প্রচারও চালানো হয়। কিন্তু তা-ও দিন কয়েক। বাসিন্দাদের আরও অভিযোগ, ওই এলাকায় আগে যে নিষেধাজ্ঞা বোর্ডটি ছিল, এখন একটি পাঁচিলের কারণে তা দেখা যায় না।

কেন একই এলাকায় বারবার দুর্ঘটনা? জেলেদের দাবি, লকগেটের নীচে যে অংশে জল পড়ে, তা অনেকটাই গভীর। যা বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই। তা ছাড়া এ বার বন্যায় নদীগর্ভে বেশ কিছু বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে বলে দাবি স্থানীয় বাসিন্দা প্রভারঞ্জন মণ্ডল, স্থানীয় জেলে মাধব আঁকুড়েদের। ফলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা আরও বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে নজরদারি বাড়ানো ও সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর দিকে নজর দেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন বীরভানপুরের বাসিন্দা তারক গঙ্গোপাধ্যায়।

মহকুমাশাসক (দুর্গাপুর) শঙ্খ সাঁতরা বলেন, ‘‘প্রতিটি ক্ষেত্রেই পড়ুয়ারা দুর্ঘটনাগ্রস্ত হচ্ছে, যা খুবই উদ্বেগের। স্কুল ও কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পড়ুয়াদের কী ভাবে সচেতন করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করব। নজরদারির বিষয়ে বাঁকুড়া জেলা প্রশাসনের সঙ্গেও আলোচনা করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন