বান্ধবীর ফোন বিয়ে ঠেকাল নাবালিকার

স্কুলে এক শিবিরে ‘পুলিশকাকু’রা বুঝিয়েছিলেন, ১৮ বছরের আগে বিয়ে কোনও মতেই নয়। সে প্রায় এক বছর আগের কথা। কিন্তু, পুলিশের পরামর্শ মাথায় গেঁথে গিয়েছিল একরত্তি মেয়েটির। কানাঘুষোয় ক’দিন ধরেই সে শুনছিল, প্রিয় বান্ধবীর বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মঙ্গলকোট শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০১৭ ০০:০০
Share:

স্কুলে এক শিবিরে ‘পুলিশকাকু’রা বুঝিয়েছিলেন, ১৮ বছরের আগে বিয়ে কোনও মতেই নয়। সে প্রায় এক বছর আগের কথা। কিন্তু, পুলিশের পরামর্শ মাথায় গেঁথে গিয়েছিল একরত্তি মেয়েটির। কানাঘুষোয় ক’দিন ধরেই সে শুনছিল, প্রিয় বান্ধবীর বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে। হঠাৎ করে বান্ধবী স্কুলেও আসা বন্ধ করায় তার সন্দেহ বাড়ে। শিবিরে দেওয়া হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করে বিষয়টি চাইল্ড লাইনে জানায় সে।

Advertisement

সেই ফোন পেয়েই বিয়ের সপ্তাহখানেক আগে এক নাবালিকার বিয়ে বন্ধ করলেন প্রশাসনের আধিকারিকেরা। মঙ্গলকোটের কাশেমনগর অঞ্চলের কাশিয়ারা গ্রামের ঘটনা। দোরগোড়ায় পুলিশ দেখে ১৮ বছরের আগে মেয়ের বিয়ে না দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন অভিভাবকেরাও। এবং জানা গেল, লেখাপড়া করার ইচ্ছা থাকলেও স্রেফ বাড়ির লোকে চাপে মেয়েটি বিয়ে রাজি হয়েছিল।

প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কাশেমনগর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী বছর চোদ্দোর ওই নাবালিকা পড়াশোনায় বরাবরই ভাল। সপ্তাহখানেক আগে ক্লাস নাইনের ফল প্রকাশের দিনই এক ঘটকের মাধ্যমে আউশগ্রাম থানার পিচকুরিঢালের বাসিন্দা এক যুবকের সঙ্গে নাবালিকা মেয়ে বিয়ের ঠিক করেন অভিভাবকেরা। বিয়ের ‘পণ’ বাবদ হাজার পাঁচেক টাকাও দেওয়া হয় পাত্রপক্ষকে। তার পর থেকেই স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয় ওই নাবালিকার। এ দিকে নতুন ক্লাসে উঠে পড়াশোনা শুরু হলেও তাকে স্কুলে আসতে না দেখে মেয়েটির এক সহপাঠিণীর সন্দেহ হয়। এ দিন সে বলে, ‘‘ওকে রাস্তায় দেখতাম না। স্কুলেও আসত না। শুনছিলাম, ওর বিয়ে ঠিক হয়েছে। কী করব কী করব ভাবতে ভাবতে হঠাৎই এক দিন মনে পড়ে গেল, বছরখানেক আগে স্কুলে এক সচেতনতা শিবির হয়েছিল। সেখানে বলা হয়েছিল, বাড়ির লোক জোর করে বিয়ে দিতে চাইলে হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করতে। সেই নম্বরটা ছিল। সেখানেই ফোন করি।’’

Advertisement

বৃহস্পতিবার করা ওই একটি ফোনই এক অনিশ্চয়তার জীবন থেকে বাঁচিয়ে দিল বিয়ে ঠিক হওয়া নাবালিকাকে। হেল্পলাইন নম্বরটি ছিল চাইল্ড লাইনের। নাবালিকার সহপাঠীর ফোন পেয়ে চাইল্ড লাইনের কর্মকর্তারা বিষয়টি ব্লক প্রশাসনকে লিখিত ভাবে জানান। যুগ্ম-বিডিও (মঙ্গলকোট) সৌমাল্য ঘোষ শুক্রবার মঙ্গলকোট থানার এসআই গণেশ চন্দ্র সেনের সহায়তায় কাশিয়ারায় গিয়ে বিয়ে বন্ধ করে দেন। চাইল্ড লাইনের কাটোয়া শাখার কর্মকর্তা অরূপ সাহা বলেন, ‘‘প্রথমে মেয়েটির পরিজনেরা পাত্রের নাম-ঠিকানা বলতে না চাইলেও পরে পুলিশের চাপে তা বলেন।’’ সৌমাল্যবাবু বলেন, ‘‘সোমবার থেকে মেয়েটিকে আবার স্কুলে যেতে বলা হয়েছে। স্কুলে নিয়মিত যাচ্ছে কিনা, সে বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হবে।’’

মেয়েটির বাবা পেশায় দিনমজুর। গ্রামের ছোট্ট পাকা বাড়িতে কাকু-জেঠুদের নিয়ে যৌথ সংসার। মেয়েটির মা এ দিন বাড়িতে ছিলেন না। বাবার দাবি, ‘‘আমরা গরিব। পাত্রের পরিবার ভাল বলেই বিয়ে ঠিক করেছিলাম।’’ প্রশাসন সূত্রের খবর, প্রথম দিকে কিছুতেই বিয়ে ভাঙায় রাজি হচ্ছিলেন না মেয়েটির বাবা-মা। শেষে পুলিশ আইনের নিয়ম বলার পরে অভিভাবকেরা নিমরাজি হন। ১৮-র আগে মেয়ের বিয়ে দেবেন না বলে মুচলেকাও দেন।

বিয়ে ভাঙার পরে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারবে বুঝে খুশি হলেও মনে মনে এখনও ভয় কাটছে না ছিপছিপে চেহারার মেয়েটির। তার কথায়, ‘‘বিয়েতে রাজি ছিলাম না বলে বাড়িতে মারধরও করেছিল। ভয় হয়, আবার যদি ওরা জোর করে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন