কাকলির ঠিকানা হাসপাতাল

হাসপাতালের শিশু বিভাগের ‘শিশু নিকেতন’ ওয়ার্ডের দরজার পাশে একটি বিছানা। সেটাই ঠিকানা কাকলির। দু’বেলা তাকে খাওয়ানো থেকে ঘুম পাড়ানো, সবই করছেন নার্স-আয়ারা।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

বর্ধমান শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০১৭ ০২:২০
Share:

পুতুল কোলে কাকলি। —নিজস্ব চিত্র।

এক মেয়ে হাসপাতাল থেকে চলে গিয়েছে বুধবার। কিন্তু হাসপাতালে এখনও রয়েছে আরও এক মেয়ে। সে মূক, বধির এবং শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত বছর আটেকের কাকলি বর্মন। গুঞ্জার মতো তারও পরিচর্যায় ব্যস্ত বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের আয়া থেকে নার্স, সকলেই।

Advertisement

হাসপাতালের শিশু বিভাগের ‘শিশু নিকেতন’ ওয়ার্ডের দরজার পাশে একটি বিছানা। সেটাই ঠিকানা কাকলির। দু’বেলা তাকে খাওয়ানো থেকে ঘুম পাড়ানো, সবই করছেন নার্স-আয়ারা। কী ভাবে হাসপাতালে এল কাকলি? হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, চিকিৎসার নথি অনুযায়ী, ওই বালিকার নাম কাকলি বর্মন। সেখানে কোনও ঠিকানা বা অভিভাবকের নাম না থাকায় মেয়েটির বাড়ির বিষয়ে আর কোনও তথ্য মেলেনি। হাসপাতালের সহকারী সুপার (প্রশাসন) শিবপ্রসাদ দাস বলেন, “চলতি বছরের ১৮ মে সকালে শিশু বিভাগের এক সাফাই কর্মী ওই বালিকাকে নর্দমার পাশে পড়ে থাকতে দেখেন। তার বাবা-মায়ের খোঁজ করেও না মেলেনি। তার পরে নার্সরা কাকলিকে জরুরি বিভাগে পরে শিশুবিভাগে নিয়ে ভর্তি করান।”

চিকিৎসকরা জানান, জন্ম থেকেই মেয়েটি ‘সেরিব্রাল পালসি’তে আক্রান্ত। হাঁটতেও পারে না। তাঁদের অনুমান, ‘অনাময়’-এ মেয়েটির স্নায়ুর চিকিৎসা চলছিল। সেখানে থেকে কাকলির এমআরআই করাতে তাকে নিয়ে মূল হাসপাতালে আসেন অভিভাবকেরা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ খোঁজ নিয়ে জেনেছেন, ১৭ মে বিকেল থেকেই এমআরআই ঘরের বারান্দায় ওই বালিকাকে নিয়ে বসেছিলেন ‘বাবা-মা’। গভীর রাতে কাকলি ঘুমিয়ে পড়লে বাবা-মা চম্পট দেন। ডেপুটি সুপার অমিতাভ সাহা বলেন, “ওই বালিকার মানসিক ও শারীরিক সমস্যাগুলি রীতিমতো চ্যালেঞ্জ ছিল। নার্স, আয়া, ডাক্তারদের ভালবাসা ও ঠিক চিকিৎসায় মেয়েটি এখন ধীরে ধীরে হাঁটতেও পারছে। কাকলির দেখভালের জন্য মায়া পণ্ডিত নামে এক জন মহিলাকে সবসময়ের জন্য রেখে দিয়েছেন চিকিৎসক, নার্সরা। প্রতি দিন বিকেলে মায়াদেবীই কাকলিকে নিয়ে বেড়াতে যান। তাঁর কথায়, “প্রথম দিকে কাকলি বসতেই পারত না। এখন সে খানিকটা হাঁটছে।’’ কাকলির জন্য নতুন জামাকাপড় কিনে দিয়েছেন নার্স এবং অন্যান্য রোগীর পরিজনেরা।

Advertisement

হাসপাতাল সুপার উৎপল দাঁ বলেন, ‘‘ওই বালিকা নার্সদের কাছে মায়ের যত্নই পাচ্ছে। কিন্তু অসুস্থদের ভিড়ে এক জন সুস্থকে রেখে দেওয়াটাও তো অমানবিক। তাই কাকলিকে জেলা শিশুকল্যাণ কমিটির হাতে তুলে দেওয়ার জন্য চিঠি দিয়েছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন