অভিযুক্ত অধরা, কর্মবিরতির নোটিস খনিতে

ঘটনার চার দিন পরেও ধরা হয়নি খনি-কর্তাকে মারধরে অভিযুক্ত শাসক দল প্রভাবিত শ্রমিক সংগঠনের (আইএনটিটিইউসি) নেতাকে। এর মধ্যে সেই নেতা আবার অন্য অফিসারকে হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ। কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার অভাবের কারণ দেখিয়ে রানিগঞ্জের জেকে নগর কোলিয়ারিতে কর্মবিরতির নোটিস ঝোলালো ‘ইস্টার্ন কোলফিল্ডস লিমিটেড’ (ইসিএল)। আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের জামুড়িয়ায় শ্যাম সেল কাণ্ডের জেরে ইতিমধ্যেই তৃণমূলের একাংশকে নিয়ে ইতিমধ্যেই অস্বস্তি তৈরি হয়েছে শিল্পমহলে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রানিগঞ্জ ও আসানসোল শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৪ ০২:৪৯
Share:

নিজের বাড়িতে চুনুলাল মিশ্র। ফাইল চিত্র

ঘটনার চার দিন পরেও ধরা হয়নি খনি-কর্তাকে মারধরে অভিযুক্ত শাসক দল প্রভাবিত শ্রমিক সংগঠনের (আইএনটিটিইউসি) নেতাকে। এর মধ্যে সেই নেতা আবার অন্য অফিসারকে হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ। কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার অভাবের কারণ দেখিয়ে রানিগঞ্জের জেকে নগর কোলিয়ারিতে কর্মবিরতির নোটিস ঝোলালো ‘ইস্টার্ন কোলফিল্ডস লিমিটেড’ (ইসিএল)।

Advertisement

আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের জামুড়িয়ায় শ্যাম সেল কাণ্ডের জেরে ইতিমধ্যেই তৃণমূলের একাংশকে নিয়ে ইতিমধ্যেই অস্বস্তি তৈরি হয়েছে শিল্পমহলে। সেখানে এই ঘটনা কি নতুন করে বিব্রত করছে না শাসক দলকে? বহু বার ফোন করা হলেও ধরেননি এলাকার নেতা তথা রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক। তবে তৃণমূল প্রভাবিত কয়লাখনি শ্রমিক সংগঠনের সম্পাদক হরেরাম সিংহ বলেন, “আমরা অভিযুক্ত নেতার কাছে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের সন্তোষজনক ব্যাখ্যা চেয়েছি। তা না পেলে তাঁকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হবে।” ইসিএল কর্তৃপক্ষের কাছে কর্মবিরতি তোলার আবেদন করবেন বলেও জানান তিনি।

পক্ষান্তরে ইসিএলের সিএমডি-র কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায় বলেন, “নিরাপত্তাহীনতার জন্য ওই খনিতে কর্মবিরতির নোটিস দেওয়া হয়েছে। প্রশাসন উপযুক্ত ব্যবস্থা না নিলে খনি বন্ধও করা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে কর্মীদের অন্যত্র বদলি করা হবে।” পুলিশ অবশ্য তাদের তরফে কোনও গাফিলতির জেরে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মানেনি।

Advertisement

ঘটনার সূত্রপাত, শুক্রবার সকালে। ইসিএলের সাতগ্রাম এরিয়ার অন্তর্গত এই কোলিয়ারিতে দেরিতে কাজে আসায় কয়েকজনকে ঢুকতে দেননি ম্যানেজার বি কে সিংহ। অভিযোগ, ওই শ্রমিকদের ঢুকতে দেওয়ার দাবিতে ম্যানেজারের উপরে চড়াও হয়ে তাঁকে মারধর করেন আইএনটিটিইউসি নেতা চুনুলাল মিশ্র। ম্যানেজার পুলিশে অভিযোগ করেন। চুনুলালও ম্যানেজারের বিরুদ্ধে মারধরের পাল্টা অভিযোগ করেন। খনি কর্তৃপক্ষ চুনুলালকে সাসপেন্ড করে তদন্ত-কমিটি গড়েন। ইসিএলের অফিসারেরা অভিযুক্তকে ধরার দাবিতে বিক্ষোভ দেখালেও চুনুলালকে ধরেনি পুলিশ। সোমবার ওই নেতা আবার ফোনে কোলিয়ারির এক আধিকারিককে হুমকি দেন বলে অভিযোগ।

সবিস্তার দেখতে ক্লিক করুন

ইসিএল সূত্রের খবর, এই খনিতে ১,২৪৮ জন কর্মী রয়েছেন। দৈনিক উৎপাদন প্রায় ৪০০ টন। ভূগর্ভে শ্রমিকদের নিরাপত্তাজনিত কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু কাজের ‘সুস্থ পরিবেশ’ না থাকায় কর্মবিরতির নোটিস দিতে তাঁরা বাধ্য হলেন বলে খনি কর্তৃপক্ষের দাবি। তাঁদের এই সিদ্ধান্ত সমর্থন করেছে ইসিএলের অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনের সম্পাদক দামোদর বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, “খনি বন্ধ হলে সব পক্ষের ক্ষতি। কিন্তু বারবার শাসকগোষ্ঠীর শ্রমিক সংগঠনের হাতে যে ভাবে অফিসারেরা আক্রান্ত হচ্ছেন, তা দুশ্চিন্তার। অভিযুক্তকে না ধরে পাল্টা অভিযোগ করার সুযোগ দিচ্ছে পুলিশ। দু’পক্ষের অভিযোগের তদন্ত করতে গিয়েই সময় চলে যাচ্ছে। শাস্তি হচ্ছে না!” দামোদরবাবুর দাবি, মঙ্গলবার চুনুলাল প্রহৃত ম্যানেজারকে এসএমএস করে জানান, যা ঘটেছে তার জন্য তিনি দুঃখিত। তবে অন্য এক অফিসারকে দুর্নীতিগ্রস্ত দাবি করে তাঁকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন।

আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেট সূত্রের খবর, দু’পক্ষই নির্দিষ্ট অভিযোগ দায়ের করেছে। সব অভিযোগের তদন্ত হচ্ছে। তা শেষ হলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ দিন কোনও এসএমএস করার কথা অস্বীকার করে চুুনুলালের দাবি, “বারবার অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় খনি-কর্তারা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন। আমি পুলিশ এবং ইসিএলকে চিঠি লিখে জানিয়েছি, এর প্রতিকার না হলে অনশনে বসব।” আসানসোলের বিজেপি সাংসদ বাবুল সুপ্রিয় জানান, তিনিও খনি কর্তৃপক্ষের কাছে কর্মবিরতি তোলার আবেদন জানিয়েছেন। তাঁর মন্তব্য, “এই ঘটনা শোনার পরে হিন্দুস্তান কেব্লস নিয়ে সুখবরের আনন্দ আমার কাছে মাটি হয়ে গিয়েছে।” স্থানীয় সিপিএম নেতা বংশগোপাল চৌধুরীর বক্তব্য, “অনেক দিন পরে ইসিএল সুদিনের মুখ দেখছে। এই অবস্থায় শাসকদলের লোকেরা যে কাণ্ড করছেন, তাতে কয়লাশিল্পেরই ক্ষতি হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন