ভগ্ন স্বাস্থ্য

ভাঙাচোরা বিছানায় রোগী, স্যালাইন বাঁকা স্ট্যান্ডে

গোটা মহকুমায় পাঁচটি ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, তেরোটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, একটি গ্রামীণ হাসপাতাল। কেমন চিকিৎসা হয় কাটোয়ার এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে? পরিকাঠামোর কী হাল? চিকিৎসক-কর্মীর সংখ্যাই বা কেমন? খোঁজ নিল আনন্দবাজার। মহকুমা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা যায়, কাটোয়ার পাঁচটি ব্লকে রয়েছে পাঁচটি ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র— শ্রীখণ্ড, নোয়াপাড়া, রামজীবনপুর, কেতুগ্রাম ও মঙ্গলকোট। এই পাঁচটি ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অধীনে আছে মোট ১৩টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। এ ছাড়াও রয়েছে মঙ্গলকোটের সিঙ্গত গ্রামীণ হাসপাতাল। প্রায় সব ক’টির পরিকাঠামো নিয়েই নানা রকম অভিযোগ বাসিন্দাদের।

Advertisement

সুচন্দ্রা দে

কাটোয়া শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৭:২০
Share:

বাঁ দিকে, শিবলুন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মুরগি। ডান দিকে, সিঙ্গতে ওয়ার্ডের সামনে কুকুর। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়

টিনের চাল দেওয়া বাঁশের খাচায় রাখা মুরগি। আশপাশে ছড়িয়ে রয়েছে নোংরা। ভগ্ন আবাসনের দেওয়াল জুড়ে ঘুঁটে। আলো চুরি যাওয়া ল্যাম্পপোস্ট ভাঙা পড়ে।

Advertisement

চিত্র ২: তোশক শতছিন্ন। স্যালাইনের লোহার দন্ড বেঁকে গিয়েছে। তা থেকেই ঝুলছে ছেঁড়া স্যালাইনের তার। ওয়ার্ডের বাইরে আরামে দুপুরের ঘুম দিচ্ছে কুকুর।

প্রথমটি কেতুগ্রামের শিবলুন প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ছবি। দ্বিতীয়টি মঙ্গলকোটের সিঙ্গত গ্রামীণ হাসপাতালের। পলেস্তারা খসা, ভেঙে যাওয়া দরজা-জানলা নিয়েই চলছে কাটোয়ার নানা স্বাস্থ্যকেন্দ্র।

Advertisement

মহকুমা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা যায়, কাটোয়ার পাঁচটি ব্লকে রয়েছে পাঁচটি ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র— শ্রীখণ্ড, নোয়াপাড়া, রামজীবনপুর, কেতুগ্রাম ও মঙ্গলকোট। এই পাঁচটি ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অধীনে আছে মোট ১৩টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। এ ছাড়াও রয়েছে মঙ্গলকোটের সিঙ্গত গ্রামীণ হাসপাতাল। প্রায় সব ক’টির পরিকাঠামো নিয়েই নানা রকম অভিযোগ বাসিন্দাদের।

দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের অভাবে ঝোপঝাড়, আগাছায় ভরেছে কেতুগ্রাম ২ ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অধীন শিবলুন প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র চত্বর। কর্মীদের থাকার আবাসনের দরজা-জানলা ভাঙা। কয়েকটি ইতিমধ্যে পরিত্যক্ত। দেওয়ালে শুকনো হচ্ছে ঘুঁটে। শ্যাওলা জমেছে মূল ভবনের দেওয়ালে। গজিয়েছে গাছও। পাঁচিল ভেঙেচুরে গিয়েছে। স্বাস্থ্যকেন্দ্র চত্বরে এক কোণে রমরমিয়ে চলছে মুরগি ব্যবসা। হাসপাতালের ভিতরেই রাখা হয়েছে ট্রাক্টর, শুকোচ্ছে ডেকরেটরের কাপড়।

স্থানীয় বাসিন্দা শুভাশিস মুখোপাধ্যায়, রাজা বৈদ্যদের অভিযোগ, ‘‘ঝোপঝাড়ে সাপের উপদ্রব। রাতে স্বাস্থ্যকেন্দ্র চত্বর অসামাজিক কাজের আখড়া হয়ে ওঠে।’’ ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভবনে রয়েছে উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র। সেখানকার কর্মী দুলু ঘোষ বলেন, ‘‘প্রায়ই ঘরের চাঙড় খসে পড়ছে। প্রাণ হাতে নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে।’’ সংস্কারের অভাবে ভাঙাচোরা ভবনে গাছ গজিয়েছে ওই ব্লকেরই সীতাহাটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও। সেখানেও ডাঁই দিয়ে রয়েছে খড়ের গাদা, ছড়িয়ে প্লাস্টিকের পাতা-সহ নানা আবর্জনা। পাঁচিল ভেঙে নিরাপত্তা ব্যবস্থাও বেহাল।

সিঙ্গত গ্রামীণ হাসপাতালে একই সঙ্গে চলছে পুরুষ ও মহিলা বিভাগ। বেহাল ভবনে আলাদা মহিলা বিভাগ চালানো সম্ভব হয়নি। আপতকালীন বিভাগের দরজা অবধি কুকুরের অবাধ আনাগোনা। ওয়ার্ডের বিছানা ভাঙাচোরা। ভেঙে ঝুলছে স্যালাইনের দণ্ডও। স্বাস্থ্যকর্মীদের আবাসনের বিভিন্ন অংশেও চাঙড় খসেছে।

কেতুগ্রাম ১ ব্লকের রামজীবনপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বহির্বিভাগের ছাদ থেকে বর্ষায় জল পড়ে, দেওয়াল ভেঙে শিক বেরিয়ে এসেছে। এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অধীনস্থ পাণ্ডগ্রাম স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আবার পর্যাপ্ত পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই। চত্বরের এক দিকের একটি ঘর স্থানীয় একটি ক্লাব দখল করেছে বলে অভিযোগ। কাটোয়া ২ ব্লকের নোয়াপাড়া স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অধীনে থাকা সিঙ্গি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাঁচিল নেই।

মঙ্গলকোট ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও আবাসনের ছাদ ভাঙা, পাঁচিল না থাকার সমস্যা রয়েছে। এমন পরিবেশের জন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের অনেকেই বিরক্ত। ক্ষুব্ধ রোগী ও তাঁদের পরিজনেরাও। তাঁদের মতে, এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির খানিক সংস্কার করলে মহকুমা হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপরে রোগীর চাপ হয়তো অনেকটাই কমবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন