অবশেষে পুরভোটের তোড়জোড় শুরু হল। তবে মেয়াদ শেষের পরেই ভোট হতে চলেছে দুর্গাপুরে। জুনেই বর্তমান পুরবোর্ডের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, তার পরে প্রশাসক বসবে পুরসভায়। রাজ্যের অন্য ছয় পুরসভার সঙ্গে দুর্গাপুরেও ৬ অগস্ট ভোট করানোর জন্য রাজ্যের তরফে নির্বাচন কমিশনকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তা জানার পরেই তাল ঠুকতে শুরু করেছে সব পক্ষ।
২০১২ সালের পুরভোটে ৪৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৯টিতে জিতে ক্ষমতায় আসে তৃণমূল। বামেরা পায় ১১টি আসন। এ ছাড়া কংগ্রেস, বিজেপি এবং নির্দল প্রার্থীরা জয়ী হন একটি করে আসনে। পরে নির্দল ও বিজেপি কাউন্সিলর তৃণমূলে যোগ দেন। এক সিপিএম কাউন্সিলরের মৃত্যু হয়েছে। সম্প্রতি তাদের তিন কাউন্সিলর তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরে বামেদের হাতে এখন রয়েছেন ৭ জন কাউন্সিলর।
পুরভোট সময়ে করানোর দাবিতে অনেক দিন ধরেই আন্দোলনে নেমেছে বিরোধীরা, বিশেষ করে বামফ্রন্ট। ভোটের ঢাকে নতুন করে কাঠি পড়তেই তৎপরতা শুরু হয়ে গিয়েছে বাম শিবিরে। বিধানসভা ভোটে আসন সমঝোতা করে দুর্গাপুরের দু’টি আসনই তৃণমূলের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়েছিল বাম ও কংগ্রেস। তবে পুরভোটে কংগ্রেসের সঙ্গে কোনও সমঝোতা হবে কি না, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি বলে দুই শিবির সূত্রে জানা গিয়েছে।
রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূলের জেলা পর্যবেক্ষক অরূপ বিশ্বাস ফেব্রুয়ারিতে পাড়ায়-পাড়ায় গিয়ে বাসিন্দাদের ক্ষোভের কথা শুনেছিলেন। তৃণমূল সূত্রে জানা যায়, তার পরে সংগঠন জোরদার করায় নজর দেন দলীয় নেতৃত্ব। সম্প্রতি গাঁধী মোড়ে আয়োজিত দলের জনসভায় ভিড় দেখে অরূপবাবু দাবি করে গিয়েছেন, বিধানসভা ভোটে অপপ্রচার করে মানুষকে ভুল বুঝিয়ে জিতেছিল বাম ও কংগ্রেস। এ বার আর তা হবে না।
সিপিএমের দুর্গাপুর ২ পূর্ব জোনাল কমিটির সম্পাদক পঙ্কজ রায় সরকারের প্রশ্ন, ‘‘মন্ত্রী এসে বলে যাচ্ছেন, দুর্গাপুর উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে। তাহলে নির্দিষ্ট সময়ে ভোট কেন হল না? কেন মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়া বাম কাউন্সিলরদের নিয়ে টানাটানি করছে তৃণমূল?’’ তিনি এ দিন দাবি করেন, নির্দিষ্ট সময়ে ভোটের দাবিতে লাগাতার আন্দোলন করে এসেছেন বলেই পুরবোর্ডের মেয়াদ ফুরনোর অন্তত মাস দু’য়েকের মধ্যে ভোট হচ্ছে। তা না হলে আরও পিছিয়ে দেওয়া হতো। সিপিএমের আরও দাবি, মানুষ যাতে ভোট দিতে পারেন, তা নির্বাচন কমিশনের তরফে নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
কংগ্রেসের জেলা শিল্পাঞ্চল সভাপতি দেবেশ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘শেষ পর্যন্ত ভোটের দিন নির্দিষ্ট হয়েছে বলে জেনেছি। আমরা তৈরি।’’ বিজেপি-র আসানসোল জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক কল্যাণ দুবে বলেন, ‘‘পাঁচ বছর ধরে যা অনিয়ম করেছে এই পুরবোর্ড, এ বার মানুষ তার জবাব দেবেন। আমরা ভোটের জন্য তৈরি।’’
অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূলের দুর্গাপুর জেলা সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘নির্বাচন কখন হবে তা প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন ঠিক করে। মানুষ বিরোধীদের অপপ্রচারে আর কান দেবেন না। তাই ভোট যখনই হবে, আমরা প্রস্তুত।’’