অনলাইন প্রতারণার ধরনে বদল, কী করবেন জানাচ্ছে পুলিশ

ব্যাঙ্কের কার্ড আছে গ্রাহকের কাছেই, কেনাকাটা করছেন অন্য কেউ। ফাঁকা হচ্ছে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট। সাইবার প্রতারণার রকমফের, কী ভাবে চলছে প্রতারণা, সেই প্রতারণা রুখতে কতটা প্রস্তুত পুলিশ-প্রশাসন, খোঁজ নিল আনন্দবাজার। আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট সূত্রে জানা যায়, একটা সময়ে দুষ্কৃতীরা এটিএম কাউন্টারের বাইরে ওঁত পেতে বসে থাকত। কখনও সাহায্যের অছিলায় ভিতরে ঢুকে কার্ড বদলে দিয়ে, কখনও বা আগে থেকে ‘বোতামে’ কারিকুরি করে রেখে গ্রাহকের টাকা হাতিয়ে নিত তারা।

Advertisement

সুব্রত সীট

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:৪৭
Share:

কখন যে কে কী ভাবে ‘সাইবার অপরাধে’র খপ্পরে পড়বেন, কেউ তা জানেন না। প্রতীকী ছবি।

ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড বা ইএমআই কার্ডের গ্রাহক। প্রতারকদের হাত থেকে রেহাই নেই কারও। কখন যে কে কী ভাবে ‘সাইবার অপরাধে’র খপ্পরে পড়বেন, কেউ তা জানেন না! সাম্প্রতিক কয়েক বছরে দুর্গাপুরের নানা প্রান্তে একের পর এক ঘটনায় এমনই অভিজ্ঞতা শহরবাসীর। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রতারণার ধরনেও বদল ঘটেছে বলে জানান শহরবাসী। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, টাকা সরাসরি অ্যাকাউন্ট থেকে উঠিয়ে নেওয়া নয়, বরং প্রতারকেরা প্রতারণার জন্য বেছে নিচ্ছে অনলাইন কেনাকাটা।
আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট সূত্রে জানা যায়, একটা সময়ে দুষ্কৃতীরা এটিএম কাউন্টারের বাইরে ওঁত পেতে বসে থাকত। কখনও সাহায্যের অছিলায় ভিতরে ঢুকে কার্ড বদলে দিয়ে, কখনও বা আগে থেকে ‘বোতামে’ কারিকুরি করে রেখে গ্রাহকের টাকা হাতিয়ে নিত তারা। পরে ছক বদলে ব্যাঙ্কের নামে ফোন করে কার্ডের মেয়াদ পুনর্নবীকরণ বা আধার সংযুক্তির কথা বলে কার্ডের নম্বর ও পিন নম্বর জেনে নিয়ে প্রতারণা চালিয়ে গিয়েছে।
কিন্তু এমন ‘সাবেক’ প্রতারণার ছক বর্তমানে অনেকটাই বদলে গিয়েছে। কী তা? তদন্তকারীরা জানান, সাম্প্রতিক কয়েক বছরে দেখা যাচ্ছে গ্রাহকের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ না করেই তাঁর কার্ড ব্যবহার করে দিব্যি কেনাকাটা করা হচ্ছে।

Advertisement

সাইবার প্রতারণা রুখতে পুলিশের সতর্কবার্তা। —নিজস্ব চিত্র।

২০১৬-র অক্টোবর। বিধাননগর সমবায় আবাসনের এক বাসিন্দার ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে আমেরিকায় বসে ইতালির এক সংস্থার ওয়েবসাইট থেকে প্রায় ৮০ হাজার টাকার কেনাকাটা করে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ। তাঁর মোবাইলে একটি এসএমএস আসলে সংশ্লিষ্ট গ্রাহক বিষয়টি বুঝতে পারেন। সাধারণত ক্রেডিট কার্ডে কেনাকাটার সময় ‘সিভিভি’ নম্বর, ‘পিন’ বা ‘ওটিপি’ (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড) লাগে। কিন্তু ওই গ্রাহক কাউকে কিছুই বলেননি বলেই দাবি করেছিলেন।
২০১৭-র মার্চে বুদবুদের এক বাসিন্দা অভিযোগ করেন, তাঁর কার্ড ব্যবহার করে অনলাইনে প্রায় ৫০ হাজার টাকার কেনাকাটা করা হয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টটি রয়েছে তাঁর স্ত্রীর নামে। তিনি নিজে ওড়িশায় থাকেন। তাঁর কাছেই ডেবিট কার্ডটি থাকে। তিনি কাউকে কখনও কার্ড বা কার্ডের তথ্য দেননি বলে দাবি করেছিলেন। অথচ মোট ২৪ বার দু’হাজার টাকা করে ও তিন বার পাঁচশো টাকা করে অনলাইনে কেনাকাটা করা হয় ওই কার্ড ব্যবহার করে। ওই বছরেরই ডিসেম্বরে আসানসোলের এক দমকল কর্মী অনলাইন মার্কেটিং সংস্থার কাছে একটি ‘মোবাইল ইন্টারনেট ডিভাইস’ কেনেন। তাঁর অভিযোগ, ক্যুরিয়ারের মাধ্যমে তাঁর হাতে সেটি পৌঁছানোর পর থেকে দফায় দফায় তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় ৭২ হাজার টাকা উধাও হয়ে যায়। অনলাইন শপিংয়ের জন্য ডেবিট কার্ডের তথ্য দিয়েছিলেন তিনি। তা ব্যবহার করেই তাঁর সঙ্গে প্রতারণা হয়েছে বলে তাঁর মত।
এত দিন ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড থেকেই প্রতারণার ঘটনাগুলি ঘটেছে। তবে সাম্প্রতি ঘটনাটি ঘটেছে ইএমআই কার্ড ব্যবহার করে। এখন অনেকেই বিভিন্ন বেসরকারি ঋণদান সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে নানা সামগ্রী কেনেন। সংস্থার তরফে বার বার কাগজপত্রের ঝামেলা এড়াতে গ্রাহককে ইএমআই কার্ড দিয়ে থাকে। সেই কার্ডটি দোকানে দেখিয়ে সঙ্গে সঙ্গে পছন্দের সামগ্রী ঘরে নিয়ে আসতে পারেন তিনি। সম্প্রতি ডিএসপি টাউনশিপের এ-জোনের আইনস্টাইন অ্যাভিনিউয়ের এক ডিএসপি কর্মীর তেমন একটি কার্ডের নম্বর ব্যবহার করে ৪০ হাজার টাকার কেনাকাটা করে দুষ্কৃতীরা। তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে ইএমআই বাবদ ৬৭৫৫ টাকা কেটে নেওয়ার পরে তিনি বিষয়টি জানতে পারেন।
পুলিশ ও ব্যাঙ্কের পক্ষ থেকে অনলাইন প্রতারণা রুখতে ধারাবাহিক ভাবে সচেতনতা গড়ার প্রয়াস নেওয়া হয়। কিন্তু তার পরেও কেন রোখা যাচ্ছে না এই ধরনের প্রতারণা, কী ভাবে হচ্ছে এই প্রতারণা, পুলিশ-ব্যাঙ্ক কতটা প্রস্তুত এই ধরনের প্রতারণা রুখতে, সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শহরবাসী।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন