প্রতীকী ছবি।
প্রয়োজনীয় জমি না পাওয়ায় পূর্ব বর্ধমানের দাঁইহাট শহরে পরিশ্রুত পানীয় জল প্রকল্পের কাজ থমকে রয়েছে। এ নিয়ে ক্ষোভ জমেছে শহরে। রাজ্যে তাদের দল ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও জমি জোগাড় করতে না পারায় তৃণমূল পরিচালিত দাঁইহাট পুরকর্তৃপক্ষকে কটাক্ষ করছেন বিরোধীরা। মহকুমা শাসক (কাটোয়া) জামিল ফতেমা জেবা বলেন, “ওই বিষয়ে পুরকর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।’’
প্রাচীন শহর দাঁইহাটে দীর্ঘদিন ধরেই পুরসভার দেওয়া জল নিয়ে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। পুরভোটের প্রচারেও পানীয় জলের সমস্যার কথাই অন্যতম প্রধান বিষয় হয়ে ওঠে। শাসক থেকে বিরোধী— সব দলই বাড়ি-বাড়ি পরিশ্রুত পানীয় জল দেওয়ার আশ্বাস দিলেও, তা বাস্তবায়িত না হওয়ায় ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। অভিযোগ, পাইপলাইন বহু পুরনো হওয়ায় ট্যাপ থেকে নোংরা জল বেরোয়। কখনও আবার সরু সুতোর মতো জল পড়ে।
তাই শহরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি মেনে বাড়ি-বাড়ি পরিশ্রুত পানীয় জল পৌঁছে দিতে বছর তিনেক আগে দাঁইহাট পুরসভা উদ্যোগী হয়। ভাগীরথী থেকে জল তুলে পরিশোধন করে সরবরাহ করার কথা ভাবা হয়েছিল। পুরসভা সূত্রের খবর, পরিবারের সদস্য পিছু ১৩৫ লিটার করে দৈনিক পরিশ্রুত জল দেওয়ার লক্ষ্য নেওয়া হয়।
এই কাজের জন্য শহরের চারটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা আমদানিঘাট, শবরি সিনেমাহলপাড়া, বিএলএলআরও অফিস ও ঘোষপাড়ায় পাঁচ লক্ষ লিটার জল ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন রিজ়ার্ভার করার কথা ভাবা হয়। সেই সঙ্গে সমগ্র শহরের ৩৯ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে পুরনো পাইপলাইনও বদল করার পরিকল্পনাও ছিল।
সে মতো ‘গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যান’ প্রকল্পে ৫০-৬০ কোটি টাকা খরচ ধরে প্রকল্পের বিশ রিপোর্ট তৈরি করা হয়। মিউনিসিপ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিরেক্টরেটের (এমইডি) প্রতিনিধি দল দাঁইহাট শহর পরিদর্শনও করে।
কিন্তু জল পরিশোধন করার পরিকাঠামো গড়ে তুলতে প্রায় তিন বিঘা জমির প্রয়োজন ছিল। তা আজও পুরসভা পায়নি। তাতেই ওই প্রকল্প বিশ বাঁও জলে পড়ে রয়েছে।
দাঁইহাটের বাসিন্দা দেবু পোদ্দার বলেন, “দীর্ঘদিন ধরেই জলের সঙ্গে নোংরা শ্যাওলা ভেসে আসে। আবার কখনও জলের বেগ থাকে না। পুরসভা নতুন জল প্রকল্পের কথা জানালেও জমিই পেল না।’’
দাঁইহাট পুরসভার বিদায়ী বোর্ডের বিরোধী দলনেতা সিপিএমের অনিন্দ্য মণ্ডলের অভিযোগ, “পুর-প্রশাসক মিথ্যা কথা বলে শহরবাসীকে ভুল বুঝিয়ে আসছেন। সামনেই পুরভোট। তাই আবার মানুষকে জল সমস্যা মেটানোর টোপ দেখাচ্ছেন।’’
যদিও দাঁইহাটের পুরপ্র-শাসক শিশিরকুমার মণ্ডল দাবি করেছেন, “শহরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি মেটাতেই আমরা ‘গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যান’ থেকে বাড়ি-বাড়ি পানীয় জল পৌঁছে দিতে উদ্যোগী হয়েছি। কিন্তু প্রায় তিন বিঘা জমি পাচ্ছি না। ভাগীরথী তীরবর্তী এলাকায় প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা মূল্যের একটি জমি চিহ্নিত করা হয়েছে। চেষ্টা চলছে তা কিনে প্রকল্প বাস্তবায়িত করার। বিরোধীরা সব জেনেও এ নিয়ে কুৎসা ছড়াচ্ছেন।”