হিন্দুস্তান কেব্্লস কারখানা

সম্পত্তি বিক্রির বিজ্ঞপ্তি দেখে আশঙ্কায় কর্মীরা

কারখানার অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ, এমন বিজ্ঞপ্তি জারি হওয়ায় ফের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে হিন্দুস্তান কেব‌্লসের কর্মীদের মধ্যে। একে বেশ কয়েক মাসের বেতন বকেয়া। তার উপরে এমন বিজ্ঞপ্তিতে কাজ হারানোর ভয় পাচ্ছেন তাঁরা। হিন্দুস্তান কেবলসের কর্পোরেট অফিস থেকে সম্প্রতি এই বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আসানসোল শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০১৫ ০১:৫৩
Share:

কারখানার অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ, এমন বিজ্ঞপ্তি জারি হওয়ায় ফের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে হিন্দুস্তান কেব‌্লসের কর্মীদের মধ্যে। একে বেশ কয়েক মাসের বেতন বকেয়া। তার উপরে এমন বিজ্ঞপ্তিতে কাজ হারানোর ভয় পাচ্ছেন তাঁরা।
হিন্দুস্তান কেবলসের কর্পোরেট অফিস থেকে সম্প্রতি এই বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। তাতে জানানো হয়েছে, কেব‌্লসকে কোনও রাষ্ট্রায়ত্ত বা বেসরকারি সংস্থা অধিগ্রহণ করতে পারে। অথবা কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে কারখানার অস্থাবর সম্পত্তি যেমন, ছাউনি, যন্ত্রাংশ ইত্যাদি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে নষ্ট হবে। সেগুলি দ্রুত বিক্রি করা হলে সর্বোচ্চ দাম পাওয়া যেতে পারে ও নষ্ট হওয়া থেকে বাঁচানো যেতে পারে। কারখানার শ্রমিক সংগঠনগুলির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে সেগুলি বিক্রির বিষয়ে কারখানার স্থানীয় কর্তাদের উদ্যোগী হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কারখানা সূত্রের খবর, ৩০ জুনের মধ্যে পুরো প্রক্রিয়া শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এই বিজ্ঞপ্তি দেখার পরেই শ্রমিক-কর্মীদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে। তাঁদের দাবি, ১৬ মাস ধরে বেতন নেই। তার পরে আবার এই রকম একটি নির্দেশ আসায় কারখানার চারটি অনুমোদিত শ্রমিক সংগঠন গণসম্মেলন ডেকে যৌথ মঞ্চ তৈরি করে আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। শ্রমিক নেতারা দাবি করেছেন, কারখানার সম্পদ বিক্রি করা যাবে না। শ্রমিক-কর্মীদের বকেয়াও মিটিয়ে দিতে হবে। সিটু নেতা মধু ঘোষ বলেন, ‘‘সম্পদ বিক্রি করা মানেই কারখানার ইতি। আমরাও কর্মহীন হব। বকেয়াও পাব না। কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছি।’’ আইএনটিইউসি-র উমেশ ঝায়ের বক্তব্য, ‘‘আমরা কারখানা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি, আগে বকেয়া মেটানো হোক। তার পরে অন্য বিষয়ে আলোচনা হবে।’’ এআইটিইউসি-র নয়ন গোস্বামী, এইচএমএস নেতা বিরোজা বন্দ্যোপাধ্যায়রাও জানান, এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আন্দোলনে নামবেন। যৌথ মঞ্চে না থাকলেও প্রতিবাদ করেছে বিএমএস। সংগঠনের নেতা ওমপ্রকাশ শর্মা বলেন, ‘‘কর্মীদের বকেয়া না মিটিয়ে সম্পদ বিক্রির সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছি।’’

Advertisement

ফোনের কেব‌্ল তৈরির জন্য রূপনারায়ণপুরে এই কারখানাটি তৈরি হয় ১৯৫২ সালে। জেলি ফিল‌্ড কেব্‌লের বাজার পড়তে থাকায় সংস্থা রুগ্‌ণ হতে শুরু করে ১৯৯৫ থেকে। ১৯৯৭ সালে কারখানা বিআইএফআরে যায়। ২০০৩-এ কারখানার ভাগ্য নির্ধারণের দায়িত্ব বর্তায় বিআরপিএসই-র হাতে। কারখানাকে পুনরুজ্জীবনের প্রশ্নে বহু বৈঠক হয়েছে গত কয়েক বছরে। কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অধীনস্থ অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ড এই কারখানা অধিগ্রহণে রাজি হলেও গত এক বছরে সেই প্রক্রিয়া এগোয়নি বলে শ্রমিক সংগঠনগুলির দাবি। যদিও আশা পুরোপুরি নিভে গিয়েছে, এ কথা মানতে চাননি আসানসোলের সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। তিনি বলেন, ‘‘ভারী শিল্প মন্ত্রক ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রক কিছুটা সময় চেয়েছে। কথা চলছে। আমিও লেগে রয়েছি।’’

কারখানা বাঁচানোর আর্জি নিয়ে সম্প্রতি ভারী শিল্পমন্ত্রী অনন্ত গীত ও রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কাছে যায় সিটুর একটি প্রতিনিধি দল। সেই দলের সদস্য তথা প্রাক্তন সাংসদ বংশোগোপাল চৌধুরী বলেন, ‘‘আমরা শ্রমিক-কর্মীদের দুর্দশা ও এলাকার বেহাল অর্থনৈতিক অবস্থার কথা দু’জনকেই জানিয়েছি। আশা করি তাঁরা ইতিবাচক পদক্ষেপ করবেন।’’

Advertisement

কারখানা সূত্রে জানা গিয়েছে, শ্রমিক-কর্মীদের বকেয়া বেতন-সহ কারখানার মাথায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার দায় রয়েছে। অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ডের প্রস্তাব ছিল, কারখানা অধিগ্রহণের আগে তা মিটিয়ে দিতে হবে। কিন্তু ভারী শিল্প মন্ত্রক তাতে গররাজি হওয়ায় পরিস্থিতি জটিল হয়েছে।

সম্পদ বিক্রির বিজ্ঞপ্তি নিয়ে কারখানার কর্তারা সরাসরি কিছু বলতে চাননি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক আধিকারিক জানান, উৎপাদন শূন্য এই কারখানায় গত ১৩ বছর ধরে ভারী শিল্প মন্ত্রকের পরিকল্পনা বহির্ভূত তহবিল থেকে কর্মীদের বেতন দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রক এ ভাবে আর কোনও টাকা এখন খরচ করতে চাইছে না। তাই সংস্থার প্রায় সাড়ে আটশো কর্মীকে স্বেচ্ছাবসর দেওয়ার ভাবনা রয়েছে। কর্তৃপক্ষের এই মনোভাব বুঝে প্রতিবাদের রাস্তায় যাওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে বলে জানায় শ্রমিক সংগঠনগুলি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন