দুর্ঘটনায় মৃত্যু তিন জনের

বাপিরা নেই,বিশ্বাস হচ্ছে না পাড়ার

পাড়াতে সকলেই ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে পরিচিত ছিলেন। পাড়ার ক্লাবের যে কোনও অনুষ্ঠান বা পুজোর আয়োজন, সকলকেই দেখা যেত এক সঙ্গে। শনিবার রাতে জাতীয় সড়কে দুর্ঘটনায় পাঁচ বন্ধুর তিন জনের অকাল মৃত্যুর পরে এমনই নানা কথা ভাসছে রানিগঞ্জের ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রানিগঞ্জ শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৭ ০২:৪৩
Share:

শোক: মৃত্যুর খবর পেয়ে ভিড় এলাকাবাসীর। —নিজস্ব চিত্র।

পাড়াতে সকলেই ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে পরিচিত ছিলেন। পাড়ার ক্লাবের যে কোনও অনুষ্ঠান বা পুজোর আয়োজন, সকলকেই দেখা যেত এক সঙ্গে। শনিবার রাতে জাতীয় সড়কে দুর্ঘটনায় পাঁচ বন্ধুর তিন জনের অকাল মৃত্যুর পরে এমনই নানা কথা ভাসছে রানিগঞ্জের ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে।

Advertisement

পাড়ার পুজোর বিসর্জন এবং খিচুড়ি খেয়ে দুর্গাপুরে ঘুরতে গিয়েছিলেন শৈলেশ পণ্ডিত (৩৫), গোবিন্দ গুপ্তা (৩০) ও বাপি রুইদাস (৪০), বলরাম সাউ ও বেনারসি সিংহ। সকলেরই বাড়়ি রানিগঞ্জের ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রানিগঞ্জের মুচিপাড়ার বাসিন্দা ছিলেন বাপিবাবু। শৈলেশবাবুর বাড়ি, অদূরেই বড়দহিতে। বাকিরা পিএন মালিয়া রোডের বাসিন্দা। সকলেই সদস্য ছিলেন রানিগঞ্জের শিশুবাগানের একটি ক্লাবের। দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় প্রথম তিন জনের। বলরামবাবু দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বেনারসিবাবুকে শুশ্রূষার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়।

রবিবার সকালে বেনারসিবাবু এলাকায় পৌঁছতেই তাঁকে ঘিরে ধরেন শোকগ্রস্ত বাসিন্দারা। তিনি বারবার আক্ষেপ করছিলেন, ‘‘খিচুড়ি ভোগ খেয়ে ঘুরতে বেরিয়েছিলাম একটু। এমনটা হবে ভাবতে পারিনি।’’ দুর্ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, ‘‘ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। হঠাৎ তীব্র ঝাঁকুনি। খানিক বাদেই দেখি রাস্তার উপরে কয়েক জন আমাদের গাড়ি থেকে বের করে শুশ্রূষা করছেন।’’

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বাপিবাবু নির্মাণকর্মী ছিলেন। গোবিন্দবাবু ও শৈলেশবাবু পেশায় গাড়ির চালক। এ দিন দুর্ঘটনার খবর এলাকায় পৌঁছতেই বারবার জ্ঞান হারাচ্ছিলেন শৈলেশবাবুর স্ত্রী গীতাদেবী। তাঁদের দু’টি কন্যা সন্তান রয়েছে। বাপিবাবুর আড়াই বছর আগে বিয়ে হয়েছে। তাঁর স্ত্রী রূপাদেবী দেড় বছরের মেয়েকে নিয়ে ভাইফোঁটা উপলক্ষে বাপের বাড়ি গিয়েছিলেন। স্বামীর মৃত্যুর খবর পেয়ে তিনি এলাকায় ফেরেন। তিনি কথা বলার মতো অবস্থায় নেই।

গোবিন্দবাবু অবিবাহিত। তাঁর মা অসুস্থ। দাদা মা’কে নিয়ে চিকিৎসার জন্য গিয়েছেন কলকাতায়। আরেক ভাই বিকিবাবু এ দিন কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে বলেন, ‘‘এমন মর্মান্তিক ঘটনায় গোটা পাড়াটা শোকে ভেঙে পড়েছে।’’

এ দিন দুর্ঘটনার খবর পৌঁছনো মাত্র দুর্ঘটনাগ্রস্তদের বাড়িতে ভেঙে পড়ে এলাকাবাসীর ঢল। একাধিক প্রবীণ বাসিন্দাকে বলতে শোনা যায়, ‘‘ছেলেগুলোকে বড় হতে দেখলাম। ভাবতেই পারছি না, ওদের শ্মশানযাত্রায় যেতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন