ভাড়ার গেরো/১

ইচ্ছেমতো দাবি, সমস্যা কাটোয়ায়

রিকশা, টোটো-য় নেই ভাড়ার তালিকা। অভিযোগ, ইচ্ছেমতো নেওয়া হচ্ছে ভাড়া। কিন্তু কেন এই পরিস্থিতি, প্রশাসনই বা কী পদক্ষেপ করছে, খোঁজ নিল আনন্দবাজার।পুরসভা সূত্রে জানা যায়, কাছারি রোড, পুরসভা মোড়, ফেরিঘাট, বাসস্ট্যান্ডের মতো শহরের গুরুত্বপূর্ণ ৩৬টি জায়গায় রয়েছে রিকশা স্ট্যান্ড। প্রতিটি স্ট্যান্ডে ১০ থেকে ১২টি রিকশা দাঁড়াতে পারে, এই মর্মে পুরসভার নির্দেশিকাও নজরে পড়ে। কিন্তু এই মুহূর্তে রিকশার সংখ্যা গত কয়েক বছরে বেশ কিছুটা কমেছে বলেই জানা যায়।

Advertisement

সুচন্দ্রা দে

কাটোয়া শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৮ ০৮:০০
Share:

শহরের রাস্তায় ছুটছে রিকশা, টোটো। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়

ভাড়ার তালিকা ঠিক হয়েছিল একুশ বছর আগে। তার পরে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ‘ইচ্ছেমতো’ বেড়েছে রিকশার ভাড়া। সেই সঙ্গে পথে টোটো-র চল শুরু হয়। রিকশার সঙ্গে টোটো-র ভাড়াও লাগামছাড়া, অভিযোগ কাটোয়ার বাসিন্দাদের। সেই সঙ্গে যাত্রী পরিবহণ নিয়ে টোটো-রিকশার গোলমাল সমস্যা বাড়িয়েছে শহরে। এই পরিস্থিতিতে কাটোয়াবাসীর দাবি, ভাড়া নিয়ন্ত্রণে হস্তক্ষেপ করুক কাটোয়া পুরসভা।

Advertisement

পুরসভা সূত্রে জানা যায়, কাছারি রোড, পুরসভা মোড়, ফেরিঘাট, বাসস্ট্যান্ডের মতো শহরের গুরুত্বপূর্ণ ৩৬টি জায়গায় রয়েছে রিকশা স্ট্যান্ড। প্রতিটি স্ট্যান্ডে ১০ থেকে ১২টি রিকশা দাঁড়াতে পারে, এই মর্মে পুরসভার নির্দেশিকাও নজরে পড়ে। কিন্তু এই মুহূর্তে রিকশার সংখ্যা গত কয়েক বছরে বেশ কিছুটা কমেছে বলেই জানা যায়।

কিন্তু রিকশার সংখ্যা কমলেও ভাড়ায় লাগাম নেই রিকশার, অভিযোগ এলাকাবাসীর। যেমন, স্ট্যান্ড থেকে রিকশায় উঠলে যা ভাড়া দিতে হয়, মাঝরাস্তায় রিকশা ধরলে টাকা গুণতে হয় দ্বিগুণ। দু’দশক আগে গোয়ালপাড়া ঘাট থেকে গৌরাঙ্গপাড়ার ভাড়া সাড়ে তিন টাকা থাকলেও এই মুহূর্তে তা দশ টাকা। আবার আগে দেবরাজ ঘাট থেকে হরিসভা পাড়া, গৌরাঙ্গপাড়ার ভাড়া তালিকায় সাড়ে তিন টাকা থাকলেও এখন তা কুড়ি টাকা। যদিও রিকশা ইউনিয়নের সেক্রেটারি রায়হান শেখের দাবি, ‘‘টোটো-র সঙ্গে পাল্লা দিতেই এই ভাড়া বাড়ানো।’’

Advertisement

শহরবাসীর অভিজ্ঞতা, কাটোয়া স্টেশন থেকে পানুহাট বাজার-সহ বেশ কিছু এলাকায় রিকশায় চ়়ড়়লে ২৫ থেকে ৪৫ টাকা পর্যন্ত দিতে হয়। যাত্রীদের একাংশের অভিযোগ, ভাড়ার বিষয়ে প্রশ্ন করলে ‘চাপতে হলে চাপুন’ বা ‘ওটাই ভাড়া’ গোছের কথা শুনতে হয় রিকশা চালকদের কাছ থেকে। কলেজপাড়ার প্রসূন মল্লিক, মাস্টারপাড়ার প্রণতি ঘোষদের কথায়, ‘‘বৃষ্টির দিনে বা ছুটির দিন সন্ধ্যা গড়ালেই ভাড়়া বাড়ে রিকশার। দিনে নো-এন্ট্রি থাকায় ঘুরে যেতে হয়, এই বলেও অনেক সময় বেশি টাকা দাবি করা হয়।’’ অনেক সময় মাঝরাস্তায় দাঁড়িয়ে প্রয়োজনীয় কোনও জিনিস কেনার থাকলে দ্বিগুণ ভাড়া চাওয়া হয়। রায়হানের যদিও দাবি, ‘‘এ ভাবে রিকশা দাঁড় করালে সময় নষ্ট হয়, যাত্রীদের সেটাও বোঝা দরকার। তাই বেশি ভাড়া চাওয়া হয়।’’

রিকশা-ভাড়াতেই শেষ নয়, শহরবাসীর ভোগান্তি বাড়িয়েছে টোটো ভাড়াও। যাত্রীরা জানান, সাধারণত টোটো-য় চড়লে কাটোয়ার ভিতরে যে কোনও জায়গার ভাড়া, ১০ টাকা। কিন্তু বহিরাগত কোনও যাত্রী বুঝলেই ওই একই দূরত্ব যাওয়ার জন্য ২০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া চাইছেন টোটো চালকেরা। এ ক্ষেত্রেও রুট বা ভাড়ার তালিকা নির্দিষ্ট না হওয়ায় হয়রান হতে হচ্ছে বলে জানান যাত্রীরা। এ ছাড়া যাত্রী তোলা নিয়ে প্রায়শই গোলমাল বাধছে টোটো ও রিকশা চালকদের। টোটো ইউনিয়নের সেক্রেটারি শ্যামল মণ্ডলের দাবি, ‘‘অভিযোগ একেবারেই ঠিক নয়। তবে ফরিদপুর কলোনি বা কলেজপাড়া থেকে রেডক্রশ মোড় পেরোলে ভাড়া ১৫ টাকা হয়।’’

এই পরিস্থিতিতে নতুন ভাড়ার তালিকা তৈরি কেন হল না, তালিকার বিষয়ে টোটো ও রিকশা চালকেরাই বা কী বলছেন, প্রশাসন কি আদৌ কোনও পদক্ষেপ করছে এ বিষয়ে, ভাড়া-যন্ত্রণা উপশম কবে হবে, এমনই নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে শহরবাসীর মনে।

(চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন