জলের আকাল সারা বছরই

সম্প্রতি আনন্দবাজারের পাঠকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন বারাবনি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বুধন বাউরি। নানা দাবি, প্রাপ্তি-প্রত্যাশা উঠে এল আলোচনায়। সঞ্চালনায় ছিলেন সুশান্ত বণিক। রইল বাছাই প্রশ্নোত্তর।সম্প্রতি আনন্দবাজারের পাঠকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন বারাবনি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বুধন বাউরি। নানা দাবি, প্রাপ্তি-প্রত্যাশা উঠে এল আলোচনায়। সঞ্চালনায় ছিলেন সুশান্ত বণিক। রইল বাছাই প্রশ্নোত্তর।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:৩৩
Share:

বারাবনি বাজার এলাকায় রাস্তায় দাঁড়ায় বাস। দাবি উঠেছে বাসস্ট্যান্ড তৈরির। —শৈলেন সরকার

• এলাকায় বেকারত্ব বাড়ছে। আর্থিক উন্নয়ন দরকার। শিল্পস্থাপনে কী উদ্যোগ হচ্ছে? এলাকায় প্রচুর চাষযোগ্য জমি আছে। কিন্তু সেগুলি বৃষ্টিনির্ভর। সেচের ব্যবস্থা হলে আয় বাড়বে। কী পরিকল্পনা আছে?

Advertisement

সুকুমার সাধু ইটাপাড়া

সভাপতি: ঠিকই বলেছেন, এলাকার অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিকটিও আমাদের দেখা উচিত। আমরা ইতিমধ্যে চাষযোগ্য জমিতে সেচের বন্দোবস্ত করেছি। প্রায় ৮০০ মিটার সেচের ব্যবস্থা হয়েছে। একাধিক পঞ্চায়েতে ৮টি সেচনালা তৈরি হয়েছে। পুকুরের জল থেকে বা নলকূপ বানিয়ে চাষযোগ্য জমিতে সেচের ব্যবস্থা করেছি। ব্লকে শিল্প স্থাপনের ব্যাপারেও আমরা কথা শুরু করেছি। এলাকার ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপতিদের সঙ্গে আমাদের আলোচনা শুরু হয়েছে।

Advertisement

• এলাকায় খুব পানীয় জলের সমস্যা আছে। বছরের সব সময়েই জলের জন্য নাভিশ্বাস ওঠে। এখনও যত্রতত্র আবর্জনার স্তূপ দেখা যায়। সাফাইয়ে আরও জোর দিতে হবে।

দেবাশিস গোপ বারাবনি

সভাপতি: জলের সমস্যা অনেকটাই মেটানো গিয়েছে। এটা ঠিক আরও কয়েকটি জায়গায় জলের সমস্য রয়েছে। আপনাদের জানাই, মাজিয়ারায় জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের সহায়তায় একটি বড় জলপ্রকল্প হবে। প্রায় পাঁচটি পঞ্চায়েত এলাকায় সেখান থেকে জল সরবরাহ করা হবে। আপনাদেরও সমাধান হয়ে যাবে। এ ছাড়া ব্লকের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে প্রায় ৭৫টি নলকূপ, ১৫টি কুয়ো ৮টি সাবমার্সিবল পাম্প ও ১১টি জায়গায় জোড়বাঁধ বানিয়ে পানীয় জলের সমস্যার হাল হয়েছে। জনসংখ্যা বাড়ছে। নাগরিকদের চাহিদাও বাড়ছে। আমরা চেষ্টা করছি সমাধান করতে। সাফাই ও নিকাশিতেও জোর দিয়েছি। শহর সাফাইয়ের মতো কাজ এক দিনে করা সম্ভব নয়। প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বাসিন্দাদেরও সচেতন হতে হবে। শহর পরিষ্কার রাখা তাঁদেরও কর্তব্য।

• চিচুরিয়া এলাকায় একটি হিন্দি প্রাথমিক স্কুল দরকার। ব্লকের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলির উন্নয়ন দরকার। সেখানে যাওয়ার রাস্তাগুলিও খারাপ। শিশুরা যেতে আসতে পারেনা।

মমতা রায় চিচুরিয়া

সভাপতি: আপনাদের এলাকায় হিন্দি প্রাথমিক স্কুল গড়ার দাবি আগেও পেয়েছি। প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। জেলা পরিষদের সভাধিপতির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আবার আলোচনা হবে। ব্লকের অঙ্গনওয়াড়িগুলির উন্নয়নে আমাদের পরিচালিত বোর্ড অনেকটা এগিয়েছে। মোট ১৮৭টি কেন্দ্রের ১০৮টিতে নতুন ভবন তৈরি করে দিয়েছি। এখনও অনেক কেন্দ্রের নিজের ভবন নেই। কথা দিচ্ছি, আগামি বছরের মধ্যেই বাকিগুলিতেও তৈরি করে দেব। রাস্তাও ঠিক করা হবে।

• এলাকায় অন্যতম প্রধান দ্রষ্টব্য পানিফলা উষ্ণ প্রস্রবণ বন্ধ হয়ে গেল। চালুর ব্যবস্থা হোক। ব্লকে বনসৃজনের কী পরিকল্পনা আছে? নুনি থেকে ভস্কাজুড়ির রাস্তাটি ঠিক করা দরকার।

পবিত্র রায় নুনি

সভাপতি: উষ্ণ প্রস্রবণটি নিয়ে আমরা ইতিমধ্যে ভাবনাচিন্তা করেছি। জেলা সভাধিপতির সঙ্গে কথা হয়েছে। এটি চালু করতে পারলে এলাকার কিছু বেকার যুবকের আয়ের রাস্তাও খুলে যাবে। জেলা প্রশাসনের সঙ্গেও আলাদা করে বিডিও কথা বলছেন। আশা করি আপনাদের ইচ্ছে পূরণ হবে। ব্লকে বনসৃজনের একাধিক পরিকল্পনা হয়েছে। ঝাড়গ্রাম কৃষি কেন্দ্র থেকে ফলের গাছ এনে বাগান করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। মঙ্গলবারই কিছু গাছ এসেছে। তবে শুধু গাছ লাগিয়ে আমরা থামছি না। সেগুলির যথাযথ পরিচর্যার ব্যবস্থা হচ্ছে। আগামি বর্ষায় ব্লকে কুড়ি হাজার আম গাছ লাগানো হবে। নুনি থেকে ভস্কাজুড়ির রাস্তাটি আমরা তৈরি করব। লালগঞ্জ থেকে পানিফলা পর্যন্ত রাস্তাটিও কিছু জায়গায় খারাপ। সেটিও সংস্কারের ব্যবস্থা হচ্ছে।

• সেনর‌্যালে বি-ব্লকে বহু দিন পাইপলাইন থাকলেও জল পড়ে না। আমাদের বহু দূর থেকে জল বয়ে আনতে হচ্ছে। মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির সদস্যদের আরও প্রশিক্ষণ দরকার। এ নিয়ে কিছু ভাবছেন?

ভবানী কেশ পাঁচগাছিয়া

সভাপতি: এখনও পর্যন্ত এই স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির প্রায় পাঁচশো মহিলাকে নানা কাজের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তাঁরা অনেকেই আজ প্রতিষ্ঠিত। ব্লকের ২৬টি মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে আমাদের উদ্যোগে ঋণ দেওয়া হয়েছে। তারা সর্বোচ্চ দেড় লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ পেয়েছে। তারা এখন প্রকৃতই স্বনির্ভর। আমরা প্রত্যেক পঞ্চায়েত প্রধানের সঙ্গে কথা বলেছি, তাঁদের এলাকার মহিলা গোষ্ঠীগুলির জন্য আরও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে। বি-ব্লক এলাকায় জলের সমস্যা আছে ঠিকই। তবে মাজিয়ারা প্রকল্পটি হয়ে গেলে সমাধান হয়ে যাবে।

• ব্লকে ১০০ দিনের কাজ ঠিক মতো হচ্ছে না। ইটভাটাগুলি বন্ধ। সমিতির উদ্যোগে বিকল্প কর্মসংস্থানের কী ব্যবস্থা হচ্ছে?

প্রভাস রায় পুঁচরা

সভাপতি: কেন্দ্র থেকে টাকা না আসায় সব ক’টি পঞ্চায়েতেই প্রচুর টাকা বাকি পড়ে গিয়েছে। সেই টাকা দিতে না পারলে কর্মীরা কাজ করবেন কী করে? তবে সভাধিপতির সঙ্গে কথা হয়েছে, অবিলম্বে বকেয়া মেটানো হবে। ইটভাটা যেগুলি বন্ধ রয়েছে সেগুলি খোলানো যায় কি না, সমিতির পক্ষ থেকে উদ্যোগ হবে।

• ব্লকের গুরুত্বপূর্ণ শহর এই বারাবনি। একটি বিশাল বাজার আছে। প্রচুর যাত্রিবাহী গাড়ি যাতায়াত করে। অথচ, কোনও যাত্রী-ছাউনি বা বাসস্ট্যান্ড নেই। মানুষ কষ্ট পান। বাজারটিরও সৌন্দর্যায়নের ব্যবস্থা করুন। ব্লকের ইটভাটাগুলি খুলিয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হোক।

সন্তোষ সিংহ দোমহানি

সভাপতি: আপনার কথা ঠিক। দোমহানি বাজার এলাকায় একটি বাসস্ট্যান্ড ও যাত্রী-ছাউনি তৈরির পরিকল্পনা আমরা করেছি। অনেক বারই উদ্যোগী হয়ে পিছিয়ে আসতে হয়েছে। প্রধান সমস্যা, সেখানে কোনও জায়গা পাচ্ছি না। আপনারা এগিয়ে এসে জায়গার ব্যবস্থা করে দিন। আমরা তৈরি করে দেব। অর্থের অভাব হবে না। তবে আমাদের ভূমি সংস্কার দফতরের সঙ্গে কথা চলছে। আধিকারিকেরা সরকারি ফাঁকা জমি খুঁজছেন। সন্ধান পেলেই আমরা নির্মাণ করে দেব। বাজারের সৌন্দর্যায়নেরও ব্যবস্থা হচ্ছে। ইটভাটাগুলির বিষয়ে জেলা সভাধিপতির সঙ্গে কথা বলব।

• প্রাথমিক স্কুলগুলিতে মিড-ডে মিলের রান্নাঘরগুলির পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর। তা ঠিক করা দরকার। গ্রীষ্মে মিড-ডে মিল রান্নার জল পাওয়া যায় না। প্রত্যেক পঞ্চায়েত এলাকায় একটি করে খেলার মাঠও চাই যেখানে পড়ুয়ারা খেলাধুলো করতে পারে।

সলিল মাজি কেলেজোড়া

সভাপতি: ভালই বলেছেন, প্রাথমিক স্কুলের রান্নাঘরের খুবই খারাপ অবস্থা। এই পরিবেশে রান্না হওয়া উচিত নয়। আমরা কথা দিচ্ছি, সেগুলি ভাল করে তৈরি করা হবে। এ ব্যাপারে প্রত্যেক পঞ্চায়েতের সঙ্গে কথা হয়েছে। তবে আপনারা জেনে রাখুন ব্লকের ৮৮টি প্রাথমিক স্কুলে পড়ুয়াদের বসে পড়াশোনা করার জন্য বেঞ্চের ব্যবস্থা হচ্ছে। আমরা একাধিক স্কুলে প্রায় ৪৭টি শ্রেণিকক্ষ গড়েছি। পাঁচগাছিয়ার একটি হিন্দি স্কুলে কয়েক লক্ষ টাকা ব্যয়ে রসায়নাগার বানানো হয়েছে। একাধিক শিশু শিক্ষাকেন্দ্রেরও উন্নয়ন করা হয়েছে।

• রাজ্য জুড়ে নির্মল বাংলা অভিযান চলছে। ব্লকে সেই অভিযান কতটা কার্যকর হয়েছে? বেশ কয়েকটি সাধারণ শৌচাগার তৈরি হয়েছে, কিন্তু সেখানে জলের সমস্যা আছে। কী ভাবে সমাধান হবে? কয়েকটি এলাকায় রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার লাইন নেই। ইসিএলের বিদ্যুতে কাজ চলছে। বণ্টন সংস্থার লাইন আনার ব্যবস্থা হলে ভাল হয়। ব্লকে একটি কলেজ তৈরির উদ্যোগ হলে উপকার হয়।

অসিত উপাধ্যায় পাঁচগাছিয়া

সভাপতি: নির্মল বাংলা অভিযান আমাদের ব্লকেও খুব ভাল ভাবে চলছে। এই কাজ সফল করার জন্য ৮২৫৬টি শৌচাগার তৈরির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। ছ’হাজারের বেশি তৈরি হয়ে গিয়েছে। বাকিগুলিও তাড়াতাড়ি করে দেব। পাঁচগাছিয়া পঞ্চায়েতটি ২ অক্টোবর ‘নির্মল’ হিসেবে স্বীকৃত হতে চলেছে। আমাদের লক্ষ্য, বাকি ৭টি পঞ্চায়েতকে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্মল করা। যাঁরা নিজেদের খরচে গড়তে পারছেন না, তাঁরা সমিতির সঙ্গে যোগাযোগ করলে শৌচাগার তৈরি করে দেওয়া হবে। আপনাদের জানিয়ে রাখি, স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষেত্রে বর্ধমান জেলায় বারাবনি ব্লক প্রথম স্থান পেয়েছে। যে সব এলাকায় রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার সংযোগ নেই সেখানকার বাসিন্দারা পর্ষদের কাছে আবেদন করলেই বিদ্যুৎ পাবেন। সে জন্য গ্রাহকদেরই এগিয়ে আসতে হবে। ব্লকে অনেক আগে একটি কলেজ তৈরির পরিকল্পনা হয়েছিল। সেটি কোন পর্যায়ে আছে দেখতে হবে। তবে আমি ব্যক্তিগত ভাবে ব্লকে একটি কলেজ চাই। এটি উচ্চ পর্যায়ের ব্যাপার। এলাকার বিধায়কের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করব।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন