উদ্যোগ নতুন প্রজন্মের, বদলাচ্ছে পুজোর রীতি

বাড়ির পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে নানা গল্প। কথিত রয়েছে, কারও পূর্বপুরুষ পুজো শুরু করেন স্বপ্নাদেশ পেয়ে। কেউ বা কোনও সাধুর নির্দেশে। কেউ আবার স্ত্রীর আব্দার রাখতে।

Advertisement

অর্পিতা মজুমদার

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:৩৮
Share:

পুজোর প্রস্তুতি। নিজস্ব চিত্র।

বাড়ির পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে নানা গল্প। কথিত রয়েছে, কারও পূর্বপুরুষ পুজো শুরু করেন স্বপ্নাদেশ পেয়ে। কেউ বা কোনও সাধুর নির্দেশে। কেউ আবার স্ত্রীর আব্দার রাখতে।

Advertisement

পুরনো সব পারিবারিক পুজোয় সাজ-সাজ রব। কোথাও চলছে মন্দির রঙ করার কাজ, কোথাও মন্দিরেই মূর্তি গড়ার তোড়জোড়। বাড়ির পুজো মানে হাজারো নিয়ম। কিন্তু নানা পরিবার সূত্রেই জানা যায়, নতুন প্রজন্মের সদস্যেরা রীতিনীতি করে নিচ্ছেন নিজেদের সুবিধে মতো। সেই সূত্রে বেশির ভাগ পরিবারেই উঠে যাচ্ছে বলি প্রথা।

দুর্গাপুরের ন’ডিহার মুখোপাধ্যায় ও বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির পুজো সাড়ে তিনশো বছরের পুরানো। স্ত্রী আনন্দময়ী দেবীর আব্দারে যদুনাথ মুখোপাধ্যায় দু’মাসের মধ্যে প্রতিমা তৈরি করে পুজো শুরু করেন। তাড়াহুড়োয় দেবীর দু’টি হাত প্রমাণ আকৃতির হলেও বাকি আটটি হাত ছিল আকারে অনেকটা ছোট। এ ভাবেই পুজো হয়েছে বহু বছর। কিন্তু এখন ঠাকুরের দশটি হাতই সমান, জানান পরিবারের সদস্য অঞ্জন মুখোপাধ্যায়। বাদ্যযন্ত্র হিসেবে থাকে একটি ঢোল, একটি কাঁসি। সপ্তমীর সকালে দোলায় কলাবউ নিয়ে আসে বাড়ির সবচেয়ে ছোট সদস্যেরা। আগে বলি হত। কিন্তু বছর কয়েক আগে তা বন্ধ করে দিয়েছেন বাড়ির সদস্যেরা।

Advertisement

বীরভানপুরের আচার্য বাড়ির পুজো প্রায় ৩০০ বছরের পুরনো। বর্ধমানের কাঞ্চননগরের কাঠের ব্যবসায়ী পরিবারের দুই ছেলে বীরভানপুরে এসে বাস শুরু করেন। কথিত রয়েছে, চতুর্থীর দিন দেবীর স্বপ্ন দেখে তালপাতার ছাউনিতে পুজো শুরু হয়। ঢোল, কাঁসির সঙ্গে বাজত সানাই। সময়ের সঙ্গে সানাই আর বাজে না। নবমীতে বাড়ির বউয়েরা সিঁদুর খেলায় মাতেন।

পানাগড়ের কাছে সোঁয়াইয়ের মুখোপাধ্যায় বাড়ির পুজোর প্রায় ৩৩০ বছরের। পানাগড়ের টোলে সংস্কৃত পড়তেন বাসুদেব মুখোপাধ্যায়। জনশ্রুতি, তিনি স্বপ্ন দেখে পুজো শুরু করেন সোঁয়াইয়ে। কসবা থেকে মাটির দেবী মূর্তি সোঁয়াই নিয়ে যাওয়ার পথে রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের সঙ্গে দেখা হয়। রাজার সেনারা পথ ছেড়ে দিতে বললে, তিনি পথ ছাড়তে অস্বীকার করেন। রাজা এই ব্রাহ্মণের ভক্তিতে প্রসন্ন হয়ে ৬ হাজার বিঘা জমি দান করেন দেবীর পুজোর জন্য। তাতেই জাঁকজমকে শুরু হয় পুজো। এই দেবীর সঙ্গে জড়িয়ে আছে নানা বিশ্বাস। পুজোর কোনও অংশ বাদ দেওয়ার কথা ভাবতেই পারেন না বাড়ির সদস্যেরা। পুজো উপলক্ষে দেশ-বিদেশ থেকে পরিবারের সদস্যরা জড়ো হন। পরিবারের ষষ্ঠ পুরুষ হিমালয় মুখোপাধ্যায় আমদাবাদে চাকরি করেন। পুজোয় আগেভাগেই চলে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘‘বাড়ির পুজোর অনেক কাজ। নিষ্ঠার সঙ্গে পুজো হয়। এই পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে নানা ইতিহাস। সারা বছর বাড়ি আসতে না পারলেও এই সময়টা সবাই চলে আসে।’’

দুর্গাপুরের করঙ্গপাড়ার কেশ বাড়ির পুজো ১১৬ বছরের। মহেশ কেশ পুত্রলাভের আশায় এক সাধুর পরামর্শে পুজো শুরু করেন বলে কথিত রয়েছে। অষ্টমীর দিন যজ্ঞে ২১ কেজি ঘি পোড়ে। আগে তিন দিন বলির রেওয়াজ থাকলেও এখন তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, জানান বাড়ির বর্তমান সদস্যেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন