Purba Bardhaman

বরাদ্দ মিলল দ্রুত, কাজে গতির আশা

নতুন বছরের গোড়াতেই পূর্ব বর্ধমানের জন্য চতুর্দশ কেন্দ্রীয় অর্থ কমিশনের দ্বিতীয় কিস্তির টাকা এসে গিয়েছে রাজ্যে।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

বর্ধমান শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০২০ ০০:৪৯
Share:

ছবি: সংগৃহীত

নতুন বছরের গোড়াতেই পূর্ব বর্ধমানের জন্য চতুর্দশ কেন্দ্রীয় অর্থ কমিশনের দ্বিতীয় কিস্তির টাকা এসে গিয়েছে রাজ্যে। চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে পঞ্চায়েতের অ্যাকাউন্টে টাকা আসতে শুরু করেছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। এর ফলে, বছরের শুরুতেই গ্রামের মানুষের হাতে বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা পৌঁছনোর সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা হবে বলে আধিকারিকদের ধারণা।

Advertisement

অতিরিক্ত জেলাশাসক (‌জেলা পরিষদ) প্রবীর চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘১৪ জানুয়ারি থেকে চতুর্দশ অর্থ কমিশনের দ্বিতীয় কিস্তির প্রাপ্য টাকা পঞ্চায়েতগুলি পেতে শুরু করেছে। বেশ কয়েকটি পঞ্চায়েত টাকা পেয়েছে বলে প্রধানেরা জানিয়েছেন। তবে জেলার সব পঞ্চায়েতে টাকা পৌঁছেছে কি না, এখনই বলা যাচ্ছে না।’’ জেলা পরিষদের অর্থ বিভাগ জানায়, পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর থেকে সরাসরি পঞ্চায়েতে টাকা যাচ্ছে। তাই তাদের কাছে এ বিষয়ে সম্পূর্ণ তথ্য নেই। তবে কোন পঞ্চায়েতের কত টাকা প্রাপ্য, সে তালিকা রয়েছে। দ্বিতীয় কিস্তিতে জেলার প্রাপ্য প্রায় ১০৩ কোটি টাকা।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, পূর্ব বর্ধমানে মোট ২১৫টি পঞ্চায়েত রয়েছে। এক-একটি পঞ্চায়েত বছরে দু’টি কিস্তিতে গড়ে দেড় কোটি টাকা পায়। সাধারণত প্রথম কিস্তির টাকা দেওয়া হয় সেপ্টেম্বর-অক্টোবর নাগাদ। তার ৬০ শতাংশ খরচ হলে তবেই দ্বিতীয় কিস্তির টাকা দেওয়া হয়। বিগত বছরগুলিতে প্রথম কিস্তির টাকা নির্দিষ্ট সময়ে দেওয়া হলেও দ্বিতীয় কিস্তির টাকা আসতে অনেক সময়ে ফেব্রুয়ারি-মার্চ হয়ে যেত। ফলে, ওই অর্থবর্ষের বাকি সময়ের মধ্যে সব টাকা খরচ করতে পারত না পঞ্চায়েতগুলি। অভিযোগ, তাতে গ্রামের উন্নয়ন থমকে যেত। কাজ না হওয়ায় মানুষের হাতে টাকা পৌঁছত না। সে দিক থেকে এ বার নতুন বছরের গোড়ায় রাজ্যে টাকা আসা ‘ব্যতিক্রম’ বলে জেলা প্রশাসনের কর্তাদের দাবি।

Advertisement

চতুর্দশ অর্থ কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী, আগের মতো ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের তিনটি স্তরেই টাকা দেওয়া হয় না। আগে পঞ্চায়েত পেত ৬০ শতাংশ, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদ পেত ২০ শতাংশ করে। ২০১৫-১৬ সাল থেকে গ্রামের উন্নয়নের জন্য ভৌগোলিক আয়তন, লোকসংখ্যা বিচার করে সরাসরি পঞ্চায়েতের অ্যাকাউন্টে প্রতিটি আর্থিক বছরে দু’টি কিস্তিতে টাকা পাঠানো হয়। ওই তহবিল থেকে পঞ্চায়েতগুলি পানীয় জল, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, রাস্তা, সাধারণের জন্য ব্যবহৃত সম্পদ, আলো, শ্মশান ও কবরস্থানের পরিকাঠামো-সহ নানা উন্নয়নমূলক কাজ করতে পারে। পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর থেকে ১০৩ কোটি টাকার মধ্যে কোন পঞ্চায়েত কত টাকা পাচ্ছে, তা জানানো হয়েছে। জেলা প্রশাসনের কর্তাদের মতে, এই টাকায় কাজ করার জন্য প্রায় আড়াই মাস সময় হাতে পাওয়া যাচ্ছে। তাতে গ্রামের মানুষজনের আয়ের সুযোগ বাড়বে। তার প্রভাব পড়বে গ্রামীণ অর্থনীতিতে।

প্রায় দেড় মাস আগে টাকা মেলার কারণ কী? জেলা প্রশাসনের কর্তাদের একাংশের দাবি, এটা ই-গভর্ন্যান্সের ফল মিলতে শুরু করার ইঙ্গিত। পঞ্চায়েতগুলি একটি অর্থবর্ষে কী কাজ করতে চায়, তার দফা ধরে হিসেব সে বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে ই-গভর্ন্যান্স পদ্ধতিতে জানাতে হয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রককে। তাতে সুবিধা হচ্ছে মন্ত্রকের। শুধু তা-ই নয়, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধায় নিজেও বিভিন্ন প্রশাসনিক সভায় সময়ে কাজ শেষ করার জন্য জেলাশাসকদের নির্দেশ দিয়েছেন। পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক বিজয় ভারতী এখন প্রতি বুধবার গ্রামে ঘুরে প্রশাসনিক বৈঠক করছেন। বরাদ্দ খরচে কোনও সমস্যা থাকলে তা সমাধান করা হচ্ছে।

তবে এ বার প্রথম কিস্তির টাকা নিয়ম মেনে পঞ্চায়েতগুলি খরচ করতে পারেনি, জানায় জেলা প্রশাসন। বিভিন্ন পঞ্চায়েতের প্রধানদের দাবি, ভোটের কারণে গত বছর জানুয়ারি থেকে মে মাসের মধ্যে উন্নয়নমূলক কাজ বিশেষ করা যায়নি। সে ক্ষতি আর পূরণ করা যায়নি। কাজ শুরুর পরেই প্রথম কিস্তির টাকা এসে যায়। দ্বিতীয় কিস্তির টাকা আসতে শুরু করায় কাজ গতি পাবে বলে মনে করছেন তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন