রিপোর্ট দিতে হবে ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে, নির্দেশ দিয়েছিলেন জেলাশাসক। কিন্তু জেলার সেতুগুলির হাল নিয়ে সময়ের মধ্যে সেই রিপোর্ট দেয়নি পূর্ত দফতর। তাদের মতো সেচ দফতরও নিজেদের হাতে থাকা সেতুগুলির বর্তমান অবস্থা নিয়ে রিপোর্ট জমা দেয়নি জেলাশাসকের কাছে। তবে বর্ধমান উন্নয়ন পর্ষদ (বিডিএ) শহরের সেতুগুলির হাল নিয়ে রিপোর্ট দিয়েছে। জেলা পরিষদও প্রশাসনের কাছে প্রাথমিক রিপোর্ট জমা দিয়েছে।
জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব বলেন, ‘‘পূর্ত দফতর একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে সেতুগুলির হাল খতিয়ে দেখছে। রিপোর্ট পাঠানোর পরে তারা আমাদের জানাবে।’’ সেচ দফতর জানায়, তাদের হাতে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় দেড়শো সেতু রয়েছে। তার বিশদ রিপোর্ট তৈরি করতে সময় লাগছে।
সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, পূর্ব বর্ধমানে দফতরের দামোদর ডিভিশন ক্যানালে প্রায় ৬০টি বড় সেতু রয়েছে। যার মধ্যে গলসির দয়ালপুর, পাণ্ডুদহ, কুলগোড়িয়া, বর্ধমানের বড়শুল-সহ ৩০টি সেতুর অবস্থা বিপজ্জনক বলে ওই ডিভিশনের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারকে প্রাথমিক রিপোর্ট দিয়েছেন সহকারী ইঞ্জিনিয়াররা। সেখানে তাঁরা জানিয়েছেন, ওই সেতুগুলির পাশে নতুন সেতু তৈরি আবশ্যিক। পুরনো সেতুগুলির বয়স ৬০ বছর পেরিয়েছে। তাদের পক্ষে এখন গাড়ির চাপ নেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ছে।
সেচ দফতরের দামোদর ক্যানাল ডিভিশনের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার ভাস্করসূর্য মণ্ডল বলেন, ‘‘৩০টি সেতুর পাশে নতুন সেতু গড়ার কথা বলা হয়েছে। সরকারের কাছে ওই রিপোর্ট পাঠানো হচ্ছে।’’ ওই ডিভিশনের একটি বড় সেতু তুলে দেওয়া হচ্ছে পূর্ত দফতরের হাতে। ওই সেতুটি ছাড়া পূর্ত দফতরের হাতে থাকা অন্য সেতুগুলির অবস্থা ‘সঙ্গিন’ নয় বলে দাবি করেছেন কর্তারা। তাঁরা জানান, বর্ধমান শহর লাগোয়া কৃষক সেতু সংস্কারের কাজ চলছে। তবে পূর্ত দফতরের (সড়ক) হাতে থাকা কাটোয়ার কাশীরাম দাস সেতু, মঙ্গলকোটের লোচনদাস সেতু সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে। এ ছাড়া কাটোয়ার গৌড়ডাঙা, মন্তেশ্বরের সেতু সংস্কার করা দরকার। পূর্ত দফতরের এক কর্তার দাবি, ‘‘খোলা চোখে সেতু ভাল লাগলেও আসলে ভিতরে হাল খারাপ— এমন বিষয় বারবার ধরা পড়ে। মুশকিল হল, গোটা বিভাগে এর জন্য একটি যন্ত্রই বরাদ্দ। সে জন্য বেশিরভাগ রিপোর্টই তৈরি হচ্ছে খালি চোখে ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে!’’
বিডিএ জেলাশাসককে জানিয়েছে, শহরে বাঁকার উপরে সাতটি সেতু রয়েছে। দু’এক জায়গায় গাছের শিকড় গজিয়েছে। তা ছাড়া খালি চোখে সেতুগুলির অবস্থা ভাল বলেই তারা মনে করছে। তবে বিশেষ যন্ত্র ও অভিজ্ঞ চোখে পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন। সে জন্য তারা চাইছে, পূর্ত দফতর ওই সেতুগুলি পরীক্ষা করে দেখুক। জেলা পরিষদ জানিয়েছে, গলসির সর, খণ্ডঘোষের কামারগোড়িয়া ছাড়া তাঁদের কাছে থাকা সেতুগুলির অবস্থা ভাল। রিপোর্টে জানানো হয়েছে, ওই সেতুগুলির রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে। জেলায় সবচেয়ে খারাপ হাল গুসকরার কাছে কুনুর নদীতে বর্ধমান-সিউড়ি রোডের সেতুটির। এই সেতুর নীচে ফাটল রয়েছে, আগাছা জন্মেছে। সেতুর স্তম্ভগুলির ইট-পলেস্তারা খসে পড়ছে। ফুটপাথ ভেঙে পড়ছে। ওই রাস্তার দায়িত্বে পূর্ত দফতরের শাখা জাতীয় সড়ক (২বি) কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ওই সেতু সংস্কারের জন্য ২ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে।