ডাক্তার নিগ্রহে কি স্থানীয় মদত

ছুতো পেলেই কেন নিগ্রহ করা হচ্ছে চিকিৎসকদের? হাসপাতালের কর্তাদের ধারণা, বেশ কিছু ঘটনার পিছনে স্থানীয় কিছু লোকজনের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষে মদত রয়েছে।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৮ ০১:৫৬
Share:

বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। নিজস্ব চিত্র

এক সময়ে পর্যাপ্ত সংখ্যায় রক্ষী ছিল না। ওয়ার্ডের ভিতর চিকিৎসকদের উপরে হামলার ঘটনা ঘটত তখনও। এখন রক্ষীর সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। রয়েছে পুলিশ ক্যাম্প। চিকিৎসক নিগ্রহের ঘটনায় কিন্তু রাশ পড়েনি বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। গত এক মাসে বেশ কয়েক বার তেমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে ডাক্তারদের।

Advertisement

ছুতো পেলেই কেন নিগ্রহ করা হচ্ছে চিকিৎসকদের? হাসপাতালের কর্তাদের ধারণা, বেশ কিছু ঘটনার পিছনে স্থানীয় কিছু লোকজনের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষে মদত রয়েছে। হাসপাতালের সামনে গজিয়ে ওঠা অস্থায়ী বিভিন্ন দোকানদার থেকে টোটো চালকদের একাংশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। বিষয়টি তাঁরা জেলা প্রশাসনকেও জানিয়েছেন।

নিরাপত্তার দাবিতে গত বছর ডিসেম্বরে টানা ২৮ দিন কর্মবিরতি পালন করেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। তাঁদের বিরুদ্ধে সুপারের দফতর ভাঙচুরের অভিযোগও উঠেছিল। তখন পরিষেবা সামলে দিয়েছিল সিনিয়র ডাক্তারেরা। নিরাপত্তার দিকটি অবশ্য তার পরেও নিশ্চিত হয়নি। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত ৬ জুন বাবুরবাগের এক দম্পতি কীটনাশকে অসুস্থ হয়ে ভর্তি হয়েছিলেন রাধারানি ওয়ার্ডে। দম্পতির পরিজনেরা চিকিৎসার গাফিলতির অভিযোগ তুলে মারধর করে চিকিৎসককে। তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে নিরাপত্তারক্ষী ও পুলিশকর্মীরা প্রহৃত হন।

Advertisement

ওই ঘটনার দিন পাঁচেক পরে জরুরি বিভাগের অস্থি ওয়ার্ড থেকে শল্য বিভাগের দিকে যাচ্ছিলেন প্রবীণ চিকিৎসক কৃষ্ণকমল দে। বারান্দায় ভর্তি ছিলেন একাধিক রোগী। তাঁদের ঘিরে ছিলেন পরিজনেরা। অভিযোগ, সেই সব পরিজনদের সরে যেতে বলায় ওই প্রবীণ চিকিৎসককে মারধর করা হয়। কৃষ্ণকমলবাবুর প্রশ্ন, ‘‘রোগীর চিকিৎসার স্বার্থে শুধু ওয়ার্ডের রাস্তা থেকে সরে যাওয়ার কথা বলায় গায়ে হাত তোলা হবে?’’

শুধু এমন সামান্য কারণে নয়, নানা ধরনের চাপের কাছে নতি স্বীকার না করলেই নিগৃহীত হতে হচ্ছে বলে ডাক্তারদের অভিযোগ। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, রাধারানি ওয়ার্ডে ভর্তি এক রোগীকে আউসিইউতে ভর্তির দাবি জানাচ্ছিলেন পরিজনেরা। কিন্তু তার প্রয়োজন নেই জানানোয় ১৬ জুন দু’জন জুনিয়র চিকিৎসকের উপরে হামলা হয় বলে অভিযোগ। তাঁদের মারধর করা হয়। এর সপ্তাহ দুয়েক পরে ২ জুলাই ফের এক চিকিৎসকের উপরে হামলা হয়। অভিযোগ, বর্ধমানের লক্ষ্মীপুর মাঠের কয়েকজন যুবক মদ্যপ অবস্থায় রাধারানি ওয়ার্ডে হুজ্জুতি করছিল। তাদের বাইরে যেতে বলায় চিকিৎসকদের সঙ্গে বচসা, তার পরে গোলমাল বেধে যায়। ওই চিকিৎসকেরা প্রশাসনকে জানান, তাঁরা নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন।

ডাক্তারদের দাবি, প্রয়োজন ছাড়াই আইসিসিইউ বা সিসিইউ-তে ভর্তি করানোর জন্য চাপ দেওয়া হয়। তা মানতে না চাইলে অনেক সময়ে পরিজনেরা গাফিলতির অভিযোগ তুলে অশান্তি পাকান। এ ছাড়া রাধারানি ওয়ার্ড বা জরুরি বিভাগের ব্লকগুলিতে অত্যধিক রোগীর চাপ তো রয়েছেই। ওই সব ওয়ার্ডে রোগীদের সঙ্গে ‘দেখা’ করতে যাওয়ার নামে পরিজনেরা অবাধে যাতায়াত করেন। এক-এক জন রোগীর সঙ্গে চার-পাঁচ জন করে বসে থাকেন। রীতিমতো আড্ডার আসর বসে যায়। তা বন্ধ করতে বলা হলে বা পাশের রোগীর অসুবিধার কথা জানানো হলেও হামলার শিকার হতে হয় বলে অভিযোগ। (চলবে)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement