তদন্তেও টলেনি তারকেশ্বরের চেয়ার

শিক্ষা দফতর থেকে পাঠানো সাসপেনশনের নির্দেশ পাওয়ার পরে রাজ কলেজের শিক্ষক তারকেশ্বর মণ্ডলকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদ (টিচার-ইন-চার্জ) থেকে সরতে হয়েছে। প্রশাসন সূত্রে খবর, এই নির্দেশের অনেক আগে ২০১৫ সালের ২৯ জানুয়ারি ডিরেক্টর অফ পাবলিক ইনস্ট্রাকশন (ডিপিআই) দফতর থেকে কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতির কাছে তারকেশ্বরবাবু কেন এই পদে রয়েছেন, তার কৈফিয়ৎ চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

বর্ধমান শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০১৬ ০৬:৪৭
Share:

তদন্তকারীদের সেই চিঠি।—নিজস্ব চিত্র।

শিক্ষা দফতর থেকে পাঠানো সাসপেনশনের নির্দেশ পাওয়ার পরে রাজ কলেজের শিক্ষক তারকেশ্বর মণ্ডলকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদ (টিচার-ইন-চার্জ) থেকে সরতে হয়েছে। প্রশাসন সূত্রে খবর, এই নির্দেশের অনেক আগে ২০১৫ সালের ২৯ জানুয়ারি ডিরেক্টর অফ পাবলিক ইনস্ট্রাকশন (ডিপিআই) দফতর থেকে কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতির কাছে তারকেশ্বরবাবু কেন এই পদে রয়েছেন, তার কৈফিয়ৎ চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়। ওই চিঠিতে কলেজের বিভিন্ন অনিয়মের কথাও সবিস্তারে তুলে ধরা হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট মহলের ধারণা, সে যাত্রা প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে ‘যোগাযোগে’র জেরেই রক্ষা পান তারকেশ্বরবাবু।

Advertisement

ওই চিঠিতে জানানো হয়েছে, বিভিন্ন আর্থিক গরমিল নজরে আসার পরে ১১ ডিসেম্বর ২০১৪ সালে একটি তদন্ত কমিটি কলেজ পরিদর্শনে আসে। সেই কমিটিতে ছিলেন জয়েন্ট ডিপিআই পরিমল ভৌমিক ও জয়েন্ট ডিপিআই (আইন) তুষারকান্তি ঘড়া। পরিচালন সমিতির সভাপতিকে পাঠানো চিঠিতে স্পষ্ট ভাবে ৫ ধরনের গরমিলের কথা বলা হয়েছে।

তদন্তকারীরা জানান, কলেজ কর্তৃপক্ষ তাঁদের কোনও ক্যাশ বই দেখাতে পারেননি। অথচ ওই বইতে কলেজের হিসেব রক্ষক ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের সই থাকার কথা। কলেজ কর্তৃপক্ষের তরফে তখন দাবি করা হয়, তাঁরা সফ্‌টওয়্যারের মাধ্যমে ক্যাশ বই ও অ্যাকাউন্টের হিসেব রাখা হয়। যদিও সেই সফ্‌টওয়্যারেও ১১ ডিসেম্বর ২০১৪-র আগে ৭ মাস পর্যন্ত নিয়মিত ক্যাশ বুক আপডেট করা হয়নি বলে জানান তদন্তকারীরা।
শুধু তাই নয়, তদন্তকারীরা দেখেন মার্বেল, হার্ডওয়্যারের বিভিন্ন জিনিসপত্র কেনা হয়েছে। কিন্তু কোনও স্টক রেজিস্ট্রার রাখা হয়নি। অথচ সরবরাহকারীদের পুরো টাকা মেটানো হয়েছে। ওই চিঠিতে জানানো হয়েছে, ১ লক্ষ টাকার বেশি জিনিসপত্র কিনলে দরপত্র ডাকতে হয়। কিন্তু রাজ কলেজ কর্তৃপক্ষ সেই নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন তদন্তকারীরা।

Advertisement

কলেজের শিক্ষক, শিক্ষাকর্মীদের পেনশন, বোনাস-সহ বিভিন্ন বিষয়েও একাধিক গরমিল রয়েছে বলে ওই চিঠিতে জানানো হয়েছে। যেমন, নিয়ম মতো কোনও শিক্ষক বা শিক্ষাকর্মীর অবসরের ৬ মাস আগে প্রয়োজনীয় নথিপত্র পাঠাতে হয় ডিপিআই দফতরে। রাজ কলেজের ক্ষেত্রে অন্তত ৪ জন শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর ক্ষেত্রে পেনশনের কাগজপত্র পাঠাতে দেরি হয়েছে বলে বলে জানান তদন্তকারীরা। যেমন, তাপসী রায় সোম নামে এক শিক্ষিকা ৩০ এপ্রিল ২০১৪ সালে অবসর নেন। অথচ তাঁর সমস্ত কাগজপত্র পাঠানো হয়েছে ওই বছরের ৯ জুন তারিখে। সাইদুল হক নামে আরও এক শিক্ষকের ক্ষেত্রেও এমন ঘটনা ঘটেছে। চিঠিতে বলা হয়েছে সাইদুল ২০১৪-র ৩০ এপ্রিল অবসর নিয়েছিলেন। অথচ অবসরের মাত্র দিন চারেক আগে তাঁর সমস্ত কাগজপত্র পাঠানো হয়। ২০১৩-১৪ আর্থিক বর্ষে শিক্ষাকর্মীদের উৎসবের বোনাস সংক্রান্ত বেশ কিছু গরমিল নজরে আসে তদন্তকারীদের। যেমন, চুক্তির ভিত্তিতে নিযুক্ত কর্মী, যাঁদের বেতন ২২ হাজার টাকা পর্যন্ত তাঁরা শুধুমাত্র অ্যাডহক বোনাস পেতে পারেন। কিন্তু বাস্তবে দেখা গিয়েছে তাঁরা অ্যাডহক বোনাসের পাশাপাশি উৎসবের ভাতাও পেয়েছেন।

ওই চিঠিতে তদন্তকারীরা দাবি করেছেন, চুক্তির ভিত্তিতে নিযুক্ত এক অস্থায়ী কর্মীকে জিনিসপত্র কেনার জন্য ৬৫ হাজার টাকা অগ্রীম দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তার প্রয়োজনীয় কোনও নথি তদন্তকারীরা দেখতে পাননি। তদন্তকারীদের দাবি, কোনও অবস্থাতেই অস্থায়ী কর্মীকে এ ভাবে অগ্রীম দেওয়া যায় না।

ওই চিঠিতে দেখা গিয়েছে, তদন্তকারীরা এমনই বিভিন্ন অভিযোগ জানিয়ে পরিচালন সমিতির সভাপতি সুভাষ সোমের কাছে জানতে চান, ‘‘কেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কেন তাঁর পদে থাকতে দেওয়া হয়েছে?’’ কলেজ সূত্রে খবর, ওই সময়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তারকেশ্বরবাবু নিজের ‘যোগাযোগে’র কথা বলে রীতিমতো হম্বিতম্বি শুরু করেন।

সুভাষবাবু শনিবার দাবি করেন, ‘‘এই রিপোর্টটি অসত্য। তাই তখন কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’’ তবে সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশের ধারণা, বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সূত্রেই সে যাত্রা চেয়ার চলেনি তারকেশ্বরবাবুর। এ দিন অবশ্য তারকেশ্বরবাবু বিষয়টি নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে তাঁর অনুগামীর কথায়, ‘‘দশ চক্রের ভগবান যেন ভূত হয়ে গেলেন। অভিযুক্তের কোনও বক্তব্য না শুনেই নামল শাস্তির খাঁড়া।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন