দলের ভূমিকায় প্রশ্ন পরিবারের

রবিবার কাঁদতে-কাঁদতে তিনি বলেন, ‘‘দল যদি আগে থেকে কড়া পদক্ষেপ করত, তাহলে এটা ঘটত না। এখন দুই ছেলে নিয়ে আমি অথৈ জলে পড়লাম। খুনিদের শাস্তি চাই।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কালনা শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৮ ০১:০৯
Share:

শোকার্ত: সুকুরের বাড়ি। নিজস্ব চিত্র

গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রুখতে দলীয় নেতৃত্ব আগেই কড়া পদক্ষেপ করলে প্রাণ হারাতে হতো না প্রধান সুকুর শেখকে, দাবি করলেন তাঁর স্ত্রী সাহানারা বিবি। রবিবার কাঁদতে-কাঁদতে তিনি বলেন, ‘‘দল যদি আগে থেকে কড়া পদক্ষেপ করত, তাহলে এটা ঘটত না। এখন দুই ছেলে নিয়ে আমি অথৈ জলে পড়লাম। খুনিদের শাস্তি চাই।’’ একই বক্তব্য নিহত তৃণমূল কর্মী বাপন শেখের পরিবারেরও।

Advertisement

শনিবার বিকেলে সুকুর যেখানে গুলিবিদ্ধ হন, সেই হরিশঙ্করপুর মোড় থেকে প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরে ভাটরা গ্রামে তাঁর বাড়ি। সন্ধ্যায় সুকুরকে কালনা থেকে কলকাতার হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে, এই খবর পাওয়ার পরে আশায় ছিল পরিবার। কিন্তু রাতে মৃত্যুর খবর আসতেই শোকের ছায়া নামে এলাকায়। এ দিন সকাল থেকে বাড়ির সামনে ভিড় করে প্রতিবেশীরা। অনেকে কান্নাকাটিও করছিলেন।

সুকুরের বৃদ্ধ বাবা রহিম শেখ এ দিন বাড়িতে এক কোণে বসেছিলেন। শনিবার রাতে খবর পাওয়ার পর থেকে শয্যাশায়ী সাহানারা। বৃদ্ধ বাবা-মাকে নিয়ে সুকুরদের তিন ভাইয়ের সংসার। সুকুরের দুই ছেলে। বড় আকাশ শেখ এ বার উচ্চ মাধ্যমিকে বসবে। পরীক্ষা শুরু হবে মঙ্গলবার। এই পরিস্থিতিতে সে কী ভাবে পরীক্ষা দেবে, বুঝে উঠতে পারছে না পরিবার। ছোট ছেলে সাইন শেখ নবম শ্রেণির ছাত্র। সুকুরের বোন জাহিফা বেগমের খেদ, ‘‘ভাই যখন আলু ব্যবসা করত, কারও সঙ্গে শত্রুতা ছিল না। প্রধান হওয়ার পরেই শত্রু বাড়ল।’’

Advertisement

বাপনের বাড়ি। নিজস্ব চিত্র

পরিজনদের দাবি, এর আগেও বার চারেক হামলার মুখে পড়েছেন সুকুর। সুকুরের বন্ধু নুর আমিন মোল্লা বলেন, ‘‘এলাকায় কাজের মানুষ হিসেবে পরিচিত ছিল সুকুর। কেউ বিপদে পড়লেই ও ঝাঁপিয়ে পড়ত। ওকেও প্রাণ খোয়াতে হল!’’ এলাকাবাসীর অনেকের দাবি, সুকুর পঞ্চায়েত প্রধান হওয়ার পর থেকে এলাকায় রাস্তা, সেচ, পানীয় জল, একশো দিনের প্রকল্প-সহ নানা কাজে গতি এসেছিল। কাজের নিরিখেও মহকুমায় ৪৭টি পঞ্চায়েতের মধ্যে সব সময়েই প্রথম পাঁচে ছিল সুলতানপুর। পরিজনদের অভিযোগ, এ বারও পঞ্চায়েত ভোটে এলাকায় সুকুরের উপরেই ভরসা রাখছিল দল। সে কারণেই পরিকল্পনা করে তাঁকে খুন করা হল। সাহানারার আক্ষেপ, ‘‘স্বপন দেবনাথ ডাকলেই আমার স্বামী ছুটে যেতেন। কিন্তু ঘটনার পর থেকে তিনি বা তৃণমূলের কোনও নেতা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি।’’

সুলতানপুর পঞ্চায়েতের শেষ প্রান্তে উতরা গ্রামে বাড়ি বাপনের। তিনি ও তাঁর বাবা মেহের আলি শেখ লোহালক্কড়ের ব্যবসা করেন। একতলা মাটির বাড়িতে বাপনের বৃদ্ধ বাবা-মা ছাড়া রয়েছেন স্ত্রী ও বছর তেরোর ছেলে। স্ত্রী রূপালি বিবি ঘটনার পর থেকে বাকরুদ্ধ। পড়শিরা জানান, বাপন সক্রিয় ভাবে তৃণমূল করছিলেন মাস চারেক। সুকুরের অনুগামী বলেই পরিচিত ছিলেন। শনিবার বিকেল ৩টে নাগাদ বৈঠকের জন্য গ্রামের জনা দুয়েক কর্মী তাঁকে ডেকে নিয়ে যান। স্থানীয় বাসিন্দা ভাগ্যধর প্রামাণিক, ঝন্টু শেখরা বলেন, ‘‘বাপন এলাকায় ভাল ছেলে বলে পরিচিত ছিলেন। ওর এমন পরিণতি হবে, ভাবতে পারিনি।’’ বাপনের মা নমিতা বিবি, শ্বশুর আনিরুল শেখরা বলেন, ‘‘একমাত্র ছেলে চলে গেল। সংসারটার কী হবে জানি না!’’

জেলা তৃণমূল সভাপতি স্বপন দেবনাথ বলেন, ‘‘সুকুর দলের একনিষ্ঠ কর্মী, আমার কাছের লোক ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে অপূরণীয় ক্ষতি হবে। আমরা তাঁর পরিবারের পাশে রয়েছি। যারা এই কাজ করেছে তারা ছাড়া পাবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন