এখনও অধরা তিন ভুয়ো ডাক্তার, প্রশ্ন

তদন্তে নেমে জেলা স্বাস্থ্য দফতর জানতে পারে, ওই পাঁচ জনই ‘ভুয়ো’ চিকিৎসক। এর পরে ওই পাঁচ জনের বিরুদ্ধে বর্ধমান থানায় অভিযোগ করেন পূর্ব বর্ধমানের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) প্রণব রায়।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

বর্ধমান শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০০:২৩
Share:

প্র্যাকটিস করতে গিয়ে তাঁরা বাধা পাচ্ছেন, এই অভিযোগে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন বর্ধমানের পাঁচ জন ডাক্তার। তদন্তে নেমে জেলা স্বাস্থ্য দফতর জানতে পারে, ওই পাঁচ জনই ‘ভুয়ো’ চিকিৎসক। এর পরে ওই পাঁচ জনের বিরুদ্ধে বর্ধমান থানায় অভিযোগ করেন পূর্ব বর্ধমানের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) প্রণব রায়। তাঁদের দু’জনকে শ্রীঘরে পাঠানো গেলেও বাকি তিন জন এখনও অধরা। চিকিৎসক মহলের আরও প্রশ্ন, জেলায় নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা বাকি ‘ভুয়ো’ ডাক্তারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না কেন।

Advertisement

জেলা স্বাস্থ্য দফতরেরই এক কর্তা জানান, ওই পাঁচ জন ছাড়া কাটোয়ায় বেশ কয়েক জন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে তদন্তে দেখা গিয়েছে তাঁদের ডিগ্রিও ‘ভুয়ো’। কালনা, মন্তেশ্বরে দু’জনের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। ভুয়ো চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে সে ভাবে অভিযান না চালানোর কারণ হিসেবে ওই স্বাস্থ্যকর্তার দাবি, সব ভুয়ো ডিগ্রিধারী ডাক্তারদের ধরার মতো পরিকাঠামো নেই দফতরের। তাই অভিযোগ পেলেই তদন্তের পরে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়। প্রণববাবুও জানান, ওই সব তদন্ত রিপোর্ট জমা পড়লেই ভুয়ো চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশকে চিঠি দেওয়া হবে।

জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা যায়, কয়েক মাস আগে ভুয়ো চিকিৎসক নিয়ে রাজ্য জুড়ে হইচই শুরু হয়। কাটোয়াতে ‘রোগী’রাই বেশ কয়েক জন ভুয়ো চিকিৎসককে পাকড়াও করেন। পরিস্থিতি ঠিক নেই দেখে বর্ধমানে বেশ কয়েক জন চেম্বারের ঝাঁপ ফেলে গা ঢাকা দেন বলে পুলিশ জানায়। কিন্তু হইচই খানিক কমতেই অভিযুক্ত ওই পাঁচ জন পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক ও সিএমওএইচ চিকিৎসা-পরিষেবা দেওয়ায় বাধা দিচ্ছেন, এই অভিযোগে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। বিচারক সিএমওএইচের কাছে রিপোর্ট তলব করেন। সিএমওএইচ জানান, আবেদনকারীদের কোনও ডাক্তারি ডিগ্রিই নেই। তাঁরা বেআইনি ভাবে চিকিৎসা করছেন। হাইকোর্ট পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে আবেদনকারীদের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট ধারায় এফআইআর করার নির্দেশ দেয়। পুলিশ লাকুর্ডির সুকান্ত সাহা, লক্ষ্মীপুরের দীপেশ কুমারকে গ্রেফতার করে। পুলিশ এখনও ধরতে পারেনি খণ্ডঘোষের তোরকোনা-শঙ্করপুরের সুদীপ্তকুমার দে, বর্ধমানের তিন নম্বর ওয়ার্ডের শঙ্কর বিশ্বাস ও মেমারির পাল্লা ক্যাম্পের মণিমোহন শিকদারকে।

Advertisement

বর্ধমান সদরের এসিএমওএইচ আয়েত্রী চক্রবর্তীর তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রত্যেকেই কলকাতার কোনও একটি বেসরকারি সংস্থা থেকে ‘অল্টারনেটিভ মেডিসিন’ কোর্স করে নিজেদের চিকিৎসক ভাবতে শুরু করেছিলেন। প্রত্যেকেই ডিগ্রি হিসেবে ‘এমবিবিএস (এএম)’ লিখতেন। কেউ কেউ প্রেসক্রিপশনে রেজিস্ট্রেশন নম্বরও লিখেছিলেন। সেগুলির অস্তিত্ব অবশ্য পাননি স্বাস্থ্যকর্তারা।

প্রণববাবু ভুয়ো চিকিৎসকদের প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘বেশির ভাগই উচ্চমাধ্যমিক পাস নন। অথচ ডাক্তারি ডিগ্রি লিখে লোক ঠকাচ্ছেন। আবার বন্ধনীর মধ্যে অল্টারনেটিভ মেডিসিনকে ছোট করে ‘এএম’ও লিখেছেন!” পুলিশ জানায়, বাকি অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন