BJP

East Bardhaman: দ্বন্দ্ব, নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে চর্চা বিজেপির বৈঠকে

কমিটি গঠন করে কয়েক জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তার কিছু দিন পরে জেলা সভাপতিও বদল করা হয়।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

বর্ধমান শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০২২ ০৭:৫৪
Share:

বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়।

শাসক দলের বিরুদ্ধে আন্দোলনের মতো নানা বিষয় সামনে আসছে। তবু তাঁদের আন্দোলন দানা বাঁধছে না, দলের উচ্চ নেতৃত্বের কাছে পূর্ব বর্ধমানের নানা এলাকার কয়েক জন বিজেপি নেতা এমন অভিযোগ জানিয়েছেন। গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এবং কর্মীদের একাংশের নিষ্ক্রিয়তাই এর কারণ বলে তাঁরা দাবি করেছেন দলের বর্ধমান সদর সাংগঠনিক বৈঠকে, দাবি বিজেপি সূত্রের।

Advertisement

গত শুক্রবার দিনভর বিজেপির বর্ধমান সদর সাংগঠনিক জেলার মণ্ডল সভাপতি ও বিধানসভা এলাকার আহ্বায়কদের নিয়ে বৈঠক হয়। ছিলেন রাজ্য বিজেপির সাংগঠনিক সম্পাদক অমিতাভ চক্রবর্তী, সাংসদ তথা রাঢ়বঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত লকেট চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ। দলের নানা সূত্রের দাবি, তৃণমূলের বিরুদ্ধে নানা বিষয় সামনে আসা সত্ত্বেও বুথ-পর্যায়ে দল জনমত তৈরি করতে পারছে না এই জেলায়, দায়সারা মনোভাব নিয়ে আন্দোলন চলছে— এমন অভিযোগ তোলেন নেতৃত্ব। এর কারণ জানার জন্যই তাঁরা এই বৈঠক করছেন বলেও জানান। তখন মণ্ডল সভাপতিদের কয়েক জন দাবি করেন, তৃণমূলের ভয়ে অনেকে নিষ্ক্রিয় রয়েছেন। তৃণমূলের ‘প্রলোভনে’ অন্তত তিন জন মণ্ডল সভাপতি দলের সঙ্গে কার্যত সম্পর্ক ‘ছিন্ন’ করে দিয়েছেন। আবার, দলের নতুন কমিটি গঠনের পরে, পুরনো কমিটির সদস্যদের একাংশ নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন।

বিজেপি সূত্রে জানা যায়, পূর্ব বর্ধমানে দলে ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব’ নতুন নয়। গত বিধানসভা ভোটের আগে বর্ধমান সদরের সাংগঠনিক দফতরে ভাঙচুর, গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। তদন্ত কমিটি গঠন করে কয়েক জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তার কিছু দিন পরে জেলা সভাপতিও বদল করা হয়। এখন দলের নিচুতলার কী পরিস্থিতি, তা জানাই বৈঠকের উদ্দেশ্য ছিল বলে দল সূত্রের দাবি। বৈঠক শেষে বিজেপির এক শীর্ষ নেতার দাবি, ‘‘বর্ধমান সদর সাংগঠনিক জেলায় ৯১ জনের কমিটি রয়েছে। ৪৬ জন মণ্ডল সভাপতি রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে কারা নিষ্ক্রিয় এবং কেন, সে রিপোর্ট নেওয়া হচ্ছে। সব দিক খতিয়ে নিষ্ক্রিয়দের সরিয়ে নতুন মুখ আনার সম্ভাবনা রয়েছে।’’ দল সূত্রের দাবি, বৈঠকে নেতৃত্ব বার্তা দিয়েছেন, দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে না চাইলে সরে যেতে হবে। তবে তৃণমূলের ‘ভয়ে’ যাঁরা এখনও আতঙ্কে রয়েছেন, তাঁদের পাশে নেতানেত্রীদের দাঁড়াতে হবে। দলের নিচুতলার নেতারা যদি ভয়ে থাকেন, তাহলে কর্মী-সমর্থকদের কী ভাবে আন্দোলনে পাওয়া যাবে, সে নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

Advertisement

বিজেপি সূত্রে জানা যায়, জেলার ২১৫টি পঞ্চায়েতেই কমিটি গঠনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল অগস্টের প্রথম সপ্তাহে। তার পরে বুথ কমিটি তৈরিতে জোর দিত দল। কিন্তু বেশিরভাগ পঞ্চায়েতে খাতায়-কলমেও কোনও কমিটি গঠন হয়নি। যে সব পঞ্চায়েতে কমিটি গঠন হয়েছে, তা প্রকাশ্যে আনতে পারেনি দল। বিজেপির এক নেতার দাবি, “এখানেও ভয় ও দ্বন্দ্ব কাজ করছে। কমিটিতে যাঁদের নাম রয়েছে, তাঁদের অনেকে তৃণমূলের ভয়ে প্রকাশ্যে আসতে রাজি হচ্ছেন না। আবার কমিটি প্রকাশ হলে পঞ্চায়েত ও লোকসভা ভোটের আগে পুরনো নেতা-কর্মীদের অনেক বসে যাবেন বলেও আশঙ্কা থাকছে।’’ দলের কাজকর্মে ‘নিষ্ক্রিয়’, জেলা ও মণ্ডল কমিটির এমন কয়েক জন নেতার আবার অভিযোগ, “ভোট-পরবর্তী হিংসার পরে দলের নেতারা তো আমাদের খোঁজ নেননি! প্রতিকূল পরিস্থিতিতে কর্মীদের রক্ষা করার মতো নেতৃত্বও কি এই মুহূর্তে আমাদের দলে আছে?”

বিজেপির বর্ধমান সদর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অভিজিৎ তা বলেন, “ভোট-পরবর্তী হিংসার শিকার হওয়া কর্মী-সমর্থকদের পাশে আমরা ছিলাম। তাঁদের বাড়ি ফেরানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাঁদের মনোবল বাড়াতে সেই এলাকাতেই আন্দোলন হচ্ছে। গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই। তৃণমূলের ভয় কেটে গেলেই সবাই রাস্তায় নামবে।’’ দল কর্মীদের আগলাবে, পাশে থাকবে— শনিবার বর্ধমানে দলের কর্মসূচিতে এসে বার্তা দিয়েছেন দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও।

তৃণমূলের অন্যতম জেলা সাধারণ সম্পাদক বাগবুল ইসলামের পাল্টা দাবি, “হিংসা-সন্ত্রাসের কোনও বিষয় নেই। বিজেপির সঙ্গে লোকজন নেই। তার উপরে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে শীর্ণ চেহারা বেরিয়ে পড়ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন