রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় এবং স্বপন দেবনাথ।
প্রায় আড়াই মাস আগে ‘ভার্চুয়াল’ সাংগঠনিক বৈঠকে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, দলে ‘এক ব্যক্তি এক পদ’ নীতি কার্যকর করা হবে। সে প্রসঙ্গে উদাহরণ হিসেবে নিয়েছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী ও দলের পূর্ব বর্ধমান জেলা সভাপতি পদে থাকা স্বপন দেবনাথের নাম। সোমবার রাজ্য জুড়ে দলের সংগঠনে রদবদলের যে ঘোষণা তৃণমূল নেতৃত্ব করেছেন, তাতে স্বপনবাবুকে সরিয়ে পূর্ব বর্ধমান জেলা তৃণমূল সভাপতি করা হয়েছে কাটোয়ার বর্ষীয়ান নেতা রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়কে। শুধু জেলা সভাপতি নয়, বদল হয়েছে দলের জেলা চেয়ারম্যান, দাঁইহাট, মেমারি ও কালনার শহর সভাপতি এবং বিভিন্ন শাখা সংগঠনের সভাপতি পদেও।
তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকেই স্বপনবাবু সামলে দলের জেলা সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। সভাপতি থাকাকালীন নিজে বিধায়ক হন। তাঁর নেতৃত্বে এ বার বিধানসভা ভোটে জেলার সব ক’টি আসনে জয়ী হয় তৃণমূল। তবে গত ৫ জুন নেত্রীর ওই ‘ভার্চুয়াল’ সভার পরে, জেলা সভাপতি হিসেবে বৈঠক করতে দেখা যায়নি স্বপনবাবুকে। তৃণমূল সূত্রের দাবি, ওই বৈঠকের পরে, জেলার বেশ কয়েকজন নেতা দলের রাজ্যের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে স্বপনবাবুর ঘনিষ্ঠ কিছু লোকজন যেমন ছিলেন, তেমনই দলের অন্দরে তাঁর ‘বিরুদ্ধ গোষ্ঠী’র বলে পরিচিত কিছু নেতাও ছিলেন। স্বপনবাবুর অনুগামীদের একাংশ অবশ্য দাবি করে আসছিলেন, জেলা সভাপতি পদে এখনই বদল ঘটবে না।
কিন্তু এ দিন বিকেলে নতুন সভাপতি হিসেবে কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথবাবুর নাম ঘোষণা করা হয়। সেই সঙ্গে মমতাজ সঙ্ঘমিতার জায়গায় দলের জেলা চেয়ারম্যান পদে আনা হয় পূর্বস্থলী ১ ব্লকের নেতা অশোক বিশ্বাসকে। মহিলা তৃণমূলের সভাপতি হিসেবে শিখা দত্ত সেনগুপ্তের বদলে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কাটোয়ার চন্দনা মাঝিকে। দলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র সভাপতি ইফতিকার আহমেদকে সরিয়ে সেই পদে আনা হয়েছে ভাতারের নেতা মানগোবিন্দ অধিকারীকে। জেলা যুব সভাপতি পদে ছিলেন রাসবিহারী হালদার। তাঁর জায়গায় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জামালপুরের বিধায়ক অলোক মাঝিকে।
পরিবর্তন করা হয়েছে দলের শহর সংগঠনেও। জেলার তিনটি শহরের সভাপতি পদে বদল করা হয়েছে। মেমারিতে অচিন্ত্য চক্রবর্তীর পরিবর্তে স্বপন ঘোষাল, কালনায় দেবপ্রসাদ বাগের বদলে তপন পোড়েল, দাঁইহাটে রঞ্জিত সাহার জায়গায় রাধানাথ ভট্টাচার্যকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এ দিন দলের পদে রদবদল নিয়ে অবশ্য তৃণমূলের একাংশ প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁদের দাবি, বিধায়ক রবীন্দ্রনাথবাবু পুরসভার প্রশাসক পদেও রয়েছেন। তাই ‘এক ব্যক্তি এক পদ’ নীতি কতটা মানা হল, তা নিয়ে প্রশ্ন তাঁদের। তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য এ নিয়ে কোনও কথা বলতে চাননি। তৃণমূলের রাজ্যের অন্যতম মুখপাত্রা দেবু টুডু শুধু বলেন, ‘‘আগামী দিনেও বেশ কিছু পরিবর্তনে দল আরও শক্তিশালী হবে।’’
স্বপনবাবু বলেন, ‘‘রবীন্দ্রনাথবাবু অভিজ্ঞ নেতা। তাঁকে জেলা সভাপতি করায় আমি খুশি হয়েছে। তিনি-সহ যাঁরা নতুন দায়িত্ব পেয়েছেন, তাঁদের অভিনন্দন জানিয়েছি। যে কোনও বিষয়ে সাহায্যেরও আশ্বাস দিয়েছি।’’ রবীন্দ্রনাথবাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘দল আমাকে যোগ্য মনে করায় আমি কৃতজ্ঞ। যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তা পালন করব।’’