কলেজের কী হাল! ক্ষুব্ধ প্রাক্তনীরা

বহিরাগতদের দেদার আনাগোনা, তোলাবাজির অভিযোগ বা স্টাফ রুমে শিক্ষকদের হেনস্থা— অভিযোগের অন্ত নেই। গত কয়েক মাসে এ সব কাণ্ড ঘটে চলেছে বর্ধমান রাজ কলেজ।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৬ ০০:৫৯
Share:

বহিরাগতদের দেদার আনাগোনা, তোলাবাজির অভিযোগ বা স্টাফ রুমে শিক্ষকদের হেনস্থা— অভিযোগের অন্ত নেই। গত কয়েক মাসে এ সব কাণ্ড ঘটে চলেছে বর্ধমান রাজ কলেজ। শিক্ষায় উৎকর্ষের বদলে এমন সব কারণে বারবার প্রতিষ্ঠান শিরোনামে আসায় ক্ষুব্ধ কলেজের প্রাক্তন পড়ুয়া থেকে শিক্ষক সংগঠনের নেতারা। যত দ্রুত সম্ভব কলেজে সুষ্ঠু পরিবেশ ফেরানো হোক, দাবি তাঁদের।

Advertisement

কলেজের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তারকেশ্বর মণ্ডলের অনুগামীরা তোলা চাইছেন, কয়েক সপ্তাহ আগে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে অভিযোগ করেছিলেন জনা পঞ্চাশ শিক্ষক-শিক্ষিকা। তার পরেই শিক্ষা দফতর তারকেশ্বরবাবুকে পদ থেকে সরিয়ে তদন্ত শুরু করে। শিক্ষা দফতর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এখনও বাছাই না করায় কলেজের পরিচালন সমিতি শিক্ষক বিজয় চন্দকে আপাতত সেই দায়িত্ব দিয়েছে। তিনি আবার তারকেশ্বরবাবুর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। শুক্রবার কলেজে বিজয়বাবু ও তারকেশ্বরবাবুর মদতে কলেজের স্টাফ রুমে আটকে তাঁদের গালিগালাজ, ধাক্কাধাক্কি করা হয় বলে বর্ধমান থানায় অভিযোগ করেন জনা কুড়ি শিক্ষক-শিক্ষিকা।

বর্ধমান জেলা টিএমসিপি-র তরফে শনিবার জানানো হয়, এই ঘটনায় সংগঠনের সদস্য কিছু ছাত্রের নাম জড়ানোয় ওই কলেজের ইউনিট ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আপাতত কলেজে কোনও সংগঠন থাকছে না। সোমবার থেকে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনায় ছাত্রেরা জড়ালে তার দায় নেবে না টিএমসিপি। কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, শুধু সাম্প্রতিক গোলমাল নয়, অশান্তির পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে আগেও। পরিচালন সমিতির কাজকর্মে অসন্তুষ্ট হয়ে ২০১২-র এপ্রিলে একযোগে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশ।

Advertisement

বারবার কলেজে এই ধরনের ঘটনা ভাল চোখে দেখছেন না প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীরাও। তাঁদের মতে, জেলার ঐতিহ্যশালী এই কলেজের নাম ছিল নিয়মশৃঙ্খলার জন্য। বর্ধমানের মহরাজা তেজ চাঁদ, মহাতাব চাঁদ ও আফতাব চাঁদ মিলে এই কলেজ তৈরি ও বিস্তারে নজর দিয়েছিলেন। গোড়ায় নতুনগঞ্জে রাজ কলেজিয়েট স্কুলে কলেজ হত। জেলার ইতিহাস গবেষক সর্বজিৎ যশের কথায়, “ঐতিহ্য ও শিক্ষার মানের জন্য রাজ কলেজকে বর্ধমানের প্রেসিডেন্সি বলা হত।’’ নানা বিভাগে ছিলেন নামী শিক্ষকেরা। তাঁদের কাছে পড়ার জন্য শুধু এই জেলা নয়, আশপাশের জেলা থেকে পড়ুয়ারা ভর্তি হতে আসতেন। সেই সব দিনের সঙ্গে কলেজের এখনকার পরিস্থিতি মেলাতে পারছেন না বলে দাবি করেন অনেক প্রাক্তনীই।

প্রাক্তন ছাত্র দেবেশ ঠাকুর বলেন, ‘‘পড়াশোনা নয়, শিক্ষক নিগ্রহের জন্য কলেজকে খবরে আসতে দেখে কষ্ট হয়।’’ আর এক প্রাক্তন ছাত্র সুকৃতী ঘোষালের প্রতিক্রিয়া, ‘‘কলেজের পরিবেশ যেন ক্লাবে পরিণত হয়েছে মনে হচ্ছে।’’ কলেজের প্রাক্তন ছাত্রী তথা শহরের একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা কৃষ্ণা মুখোপাধ্যায়েরও একই বক্তব্য। প্রাক্তনীদের অনেকে মনে করেন, প্রশাসন হস্তক্ষেপ করুক। তার পরেও কলেজে সুষ্ঠু পরিস্থিতি না ফিরলে তাঁরা পথে নামবেন।

অভিযুক্ত শিক্ষক তারকেশ্বরবাবু অবশ্য কলেজের এই পরিস্থিতির জন্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশকেই দায়ী করেছেন। তিনি দাবি করেন, ‘‘৩১ মে পরিচালন সমিতির বৈঠকে এক শিক্ষিকা-সদস্যের একক ভাবে চেকে সই করার ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হয়। তার পর থেকেই তিনি সিপিএম সমর্থক ৫২ জন শিক্ষকের সঙ্গে হাত মিলিয়ে অশান্তি করছেন, রাজ্য সরকারকে কালিমালিপ্ত করতে চাইছেন। আমার নেতৃত্বে তিন বছর কলেজ চলেছে, কোনও গোলমাল হয়নি।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, “এখন তো গাছের পাতা পড়লেও তা আমার মদতে বলে অভিযোগ হচ্ছে!’’

বর্তমানে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্বে থাকা বিজয়বাবু অবশ্য বলছেন, ‘‘কলেজ সুষ্ঠু ভাবেই চলছে।’’ তবে তা মানতে নারাজ শাসকদলেরই অনেকে। শহরের তৃণমূল বিধায়ক রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায় যেমন বলেন, ‘‘কলেজ পরিচালন সমিতি আমার পরামর্শও গ্রহণ করেনি। ফলে, সমস্যা বেড়ে চলেছে।’’ রাজ কলেজের প্রশাসন ‘অযোগ্য’ বলে দাবি করেছেন কলেজেরই প্রাক্তন শিক্ষক তথা তৃণমূল প্রভাবিত সংগঠন ওয়েবকুপার সাধারণ সম্পাদক শ্রীধর বন্দ্যোপাধ্যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন