Raju Jha

‘দাদার’ জুতোয় পা গলাবেন কে?

বেআইনি কয়লার কারবারের অভিযোগে ২০০৬-এ কিছু দিন জেলে থাকতে হয় রাজুকে। ওয়াকিবহাল মহলের পর্যবেক্ষণ, এর পরেই রাজুকে বিভিন্ন ব্যবসায় বিনিয়োগ করতে দেখা যায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০২৩ ০৯:০৬
Share:

মৃত রাজু ঝা। — ফাইল চিত্র।

সম্প্রতি গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যান দুর্গাপুরের রাজু ঝা। তাঁর বিরুদ্ধে বেআইনি কয়লা কারবারের বহু অভিযোগ যেমন রয়েছে, তেমনই তাঁর বিভিন্ন ব্যবসাতেও বিপুল বিনিয়োগের কথা শহর দুর্গাপুরের অজানা নয়। ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের দাবি, রাজুর মৃত্যুর পরে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আপাত ভাবে তাঁর ‘বেআইনি কয়লা কারবার’ ও বৈধ ব্যবসা, কোনও ক্ষেত্রেই দৃশ্যত কোনও প্রভাব দেখা যায়নি। তবে ব্যবসাগুলির অন্দরমহলে কান পাতলে একটি চোরা-শঙ্কার প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছে বলেই মত সূত্রের।

Advertisement

বেআইনি কয়লার কারবারের অভিযোগে ২০০৬-এ কিছু দিন জেলে থাকতে হয় রাজুকে। ওয়াকিবহাল মহলের পর্যবেক্ষণ, এর পরেই রাজুকে বিভিন্ন ব্যবসায় বিনিয়োগ করতে দেখা যায়। নিরাপত্তা সংস্থা খোলা, কলকাতাগামী দূরপাল্লার বিলাসবহুল বাস পরিষেবা চালু, সিটি সেন্টারে বকলমে বিলাসবহুল হোটেল, রেস্তরাঁ, পার্কিং প্লাজ়া, শাড়ির দোকান, স্টিল টাউনশিপে একটি গেস্টহাউস ‘লিজ’, বিধাননগরে রেস্তরাঁ, বাণিজ্যিক ভবন, মলানদিঘিতে পেট্রল পাম্প, কুলডিহার কাছে ট্রাক টার্মিনাস— এ সব কিছুর নেপথ্যেই রাজুর প্রত্যক্ষও পরোক্ষ ছায়া আছে বলে দাবি। পরে অবশ্য কিছু ব্যবসা থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন রাজু। এ ছাড়া, বাঁশকোপার কাছে জমি কিনেছিলেন একটি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল গড়বেন বলে। কলকাতার বাগুইআটি এবং ইএম বাইপাসের ধারেও ফ্ল্যাট আছে রাজুর। দুর্গাপুরের বিধাননগরে রয়েছে রাজুর বিশাল বাড়ি। সেখানেই থাকেন তাঁর বড় ছেলে। এ ছাড়া, বিহারের বাড়িতে থাকেন তাঁর স্ত্রী ও ছোট ছেলে।

রাজুর ঘনিষ্ঠদের সূত্রে জানা গিয়েছে, এ সবের বাইরেও ‘দাদার’ লগ্নি আছে। সে সবই এখন খুঁজে বার করার চেষ্টা করছে রাজুর পরিবার। কারণ, রাজু না কি ব্যবসার বিষয়ে পরিবারকে তেমন কিছু জানাতেন না। একটি সূত্রের মতে, রাজুর পরিবার আপাতত তাঁর আইনি ভাবে বৈধ ব্যবসাগুলির নিয়ন্ত্রণ কী ভাবে হস্তগত করা যায়, সে দিকেই বিশেষ ভাবে নজর দিচ্ছে। সে ক্ষেত্রে দুর্গাপুর থেকে ধীরে-ধীরে ওই পরিবার পাট চুকিয়ে ফেলবে কি না, তা নিয়ে কৌতূহল রয়েছে।

Advertisement

তবে রাজুর মৃত্যুর পরে, এ দিনও দেখা গিয়েছে, তাঁর সব ব্যবসা চালু রয়েছে। তা ‘আপাতত’ কি না, সেটা ভাঙেননি তাঁর ঘনিষ্ঠদের। বিশেষ সূত্রে জানা গেল, তাঁর সঙ্গী ও কর্মীরা রাজুর অভাব প্রতি মুহূর্তে অনুভব করলেও প্রকাশ্যে তা বুঝতে দিতে চাইছেন না। তবে ঘনিষ্ঠ মহলে তাঁরা অনিশ্চয়তার কথা জানাচ্ছেন। এমনকি একাধিক কর্মী এক জায়গায় হলেই তাঁরা নিজেদের মধ্যে সে কথা আলোচনা করছেন বলেও জানা গিয়েছে। তবে প্রকাশ্যে তাঁরা কিছু বলছেন না। তাঁদের মতে, কয়েক দিন গেলে টালমাটাল পরিস্থিতি কেটে যাবে। ব্যবসার গতিপ্রকৃতিও বোঝা যাবে।

এ দিকে, রাজুর অবর্তমানে এখনও পর্যন্ত ‘ডিও’র নিয়ন্ত্রণ নিয়ে রাজুর চালু করা ব্যবস্থা (‘সিন্ডিকেট’) কাজ করছে আগের মতোই বলে দাবি। একটি সূত্র জানাচ্ছে, অন্ডালের যে সব খনিতে ডিও-র নিয়ন্ত্রণে রাজুর হাত সম্প্রতি শক্ত হয়েছিল, এ দিন পর্যন্ত তা চলেছে রাজুর দেখানো পথেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজুর বেশ কয়েক জন সঙ্গী জানালেন, রাজু খনি দেখভালের দায়িত্ব ভাগ করে দিয়েছিলেন। সে দলে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ঘনিষ্ঠ বলে এলাকার পরিচিত কয়লা কারবারিরা যেমন আছেন, তেমনই রাজুর পুরনো সঙ্গী, এমনকি, রাজুর জায়গায় যাঁর কয়লা-ক্ষেত্রে উত্থান, সেই অনুপ মাজি ওরফে লালার অনুগামীও রয়েছেন বলে দাবি। রাজু নিহত হওয়ার পরে এই দলটি এ দিন পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকা ঘুরে কয়লা কারবারের খোঁজখবর নিয়েছেন।

কিন্তু এত সব কিছুর পরে রাজুর ঘনিষ্ঠ লোকজনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে একটাই প্রশ্ন, ‘দাদার’ জুতোয় পা গলাবেন কে! এ নিয়ে কি কোনও ‘রফার’ মাধ্যমে, না কি অন্য কোনও রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে, তা সময়ই বলবে।

যদিও, পুলিশ বা ইসিএল, কেউই পশ্চিম বর্ধমানে অবৈধ কয়লা কারবারের অভিযোগ মানতে চায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন