বিল সংস্কারে ফিরবে মাছ

মজে গিয়েছে এলাকার তিনটি পুরনো জলাশয়। ফলে ফি বছর বর্ষায় বন্যা পরিস্থিতি যেন নিয়ম হয়ে গিয়েছে এলাকায়। এ বার পূর্বস্থলী ১ ব্লকের বাঁশদহ, চাঁদের বিল ও মুড়িগঙ্গা— তিনটি জলাশায় ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা নিয়েছে রাজ্যের মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন ও সেচ দফতর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পূর্বস্থলী শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০১৬ ০০:৫২
Share:

পূর্বস্থলীতে জোরকদমে চলছে বাঁশদহ বিল সংস্কারের কাজ। —নিজস্ব চিত্র।

মজে গিয়েছে এলাকার তিনটি পুরনো জলাশয়। ফলে ফি বছর বর্ষায় বন্যা পরিস্থিতি যেন নিয়ম হয়ে গিয়েছে এলাকায়। এ বার পূর্বস্থলী ১ ব্লকের বাঁশদহ, চাঁদের বিল ও মুড়িগঙ্গা— তিনটি জলাশায় ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা নিয়েছে রাজ্যের মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন ও সেচ দফতর। এর ফলে এলাকার পর্যটনও ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশা প্রশাসনের।

Advertisement

তিনটি জলাশয়ই রয়েছে শ্রীরামপুর এলাকায়। এই তিনটি জলাশয়ের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বহু জনশ্রুতি এবং লোক ইতিহাস। কথিত রয়েছে, চাঁদ সওদাগরের একটি ডিঙা নাকি পূর্বস্থলীর একটি জলাশয়ে ডুবে যায়। তারপরেই সেই জলাশয়ের নাম হয় চাঁদের বিল। আবার বিশ্বম্ভর পণ্ডিতের নাম থেকে অপভ্রংশ হয়ে বাঁশদহ বিলের নামকরণ করা হয়। আর মুড়িগঙ্গা তৈরি হয়েছে ভাগীরথীর গতিপথ বদলে।

চাঁদের বিল ও বাঁশদহের দু’পাড়েই রয়েছেন প্রচুর মৎস্যজীবী। রয়েছে প্রচুর চাষজমিও। তবে সংস্কার না হওয়ায় গত পাঁচ দশক ধরে এই দু’টি জালাশয়ই মজতে শুরু করে। এর জেরে প্রতি বছর বর্ষায় তৈরি হয় বন্যা পরিস্থিতি। বন্যা থেকে বাঁচতে কাছেই নবদ্বীপ স্টেশনে গিয়ে উঠতে হয় বাসিন্দাদের। আবার ওই দুই জলাশয় থেকে মাছও তেমন মিলছিল না বলে জানান মৎস্যজীবীরা।

Advertisement

জলাভূমি সংরক্ষণ ও সংস্কারের বিষয়ে দাবি উঠতে শুরু করে ২০০১ সাল থেকে। তৃণমূল নেতা স্বপন দেবনাথের উদ্যোগে শুরু হয় খালবিল উৎসব। বছর তিনেক আগে এলাকার জলাশয়গুলি সংস্কারের জন্য রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেন স্বপনবাবু। মৎস্যমন্ত্রীকে জানানো হয়, সংস্কার হলে বন্যা পরিস্থিতির মোকাবিলা, জলাশয়ের পাড়ে পানীয় জলের প্রকল্প, জলাশয় সাজিয়ে পর্যটনের ব্যবস্থা করা যাবে। স্বপনবাবু জানান, জলাশয় সংস্কার হলে তার পাশে হাঁস পালন করে স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর সদস্যরাও আয় করতে পারবেন। বছর তিনেক আগে নদিয়ায় একটি অনুষ্ঠানে এসে মুখ্যমন্ত্রী মুড়িগঙ্গার পাশের একটি সরকারি গেস্ট হাউসে ওঠেন। তখন জলাশয়ের অবস্থা দেখিয়ে তা সংস্কারের জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে আবেদন করা হয়। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরে মুড়িগঙ্গার সংস্কারের জন্য ১৪ কোটি টাকা বরাদ্দ করে সেচ দফতর। ২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ হয় বাঁশদহ ও চাঁদের বিলের জন্যও।

বরাদ্দ মেলার পরেই শুরু হয় কাজ। অত্যাধুনিক যন্ত্রের সাহায্যে জলাশয়ের তলার মাটি, পাঁক, ভাসমান আগাছা তুলে তা কয়েক কিলোমিটার দূরে ফেলা হচ্ছে। বাঁশদহ জলাশয়ের পাশেই তৈরি হয়েছে ৮ কিলোমিটার লম্বা ও ৪০ মিটার চওড়া একটি নালা। প্রশাসনের সূত্রে জানা গিয়েছে, জলাশয়ের এক পাড় থেকে অন্যপাড়ে যাওয়ার জন্য কয়েকটি সেতু, স্লুইস গেট, রাস্তাও তৈরি করা হবে। পঞ্চায়েত সমিতি জানিয়েছে, মুড়িগঙ্গার সংস্কারের কাজও দ্রুত শুরু হবে। মন্ত্রী স্বপনবাবু জানান, বাঁশদহ বিলের পাশেই গেস্ট হাউস তৈরি হচ্ছে। পূর্বস্থলী ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দিলীপ মল্লিকের আশা, ‘‘আগামীদিনে পর্যটনের উপরে ভিত্তি করে এলাকার অর্থনীতি শক্তিশালী হবে।’’ মৎস্যজীবী ভজন হালদার, কপিল হাওলাদারদের আশা, এর ফলে জলাশয়ে মাছের পরিমাণও বাড়বে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন