তৈরি হচ্ছে প্লাস্টিকের ইট। নিজস্ব চিত্র।
এক বারই ব্যবহার করা যাবে, এমন প্লাস্টিকের বাড়বাড়ন্তে উদ্বেগ এখন গোটা বিশ্বে। জঞ্জালের স্তূপ ছাপিয়ে নর্দমা, পুকুর ছড়িয়ে প্লাস্টিকের প্যাকেট, ঠান্ডা পানীয়ের বোতল উপচে পড়ছে বহু জায়গায়। এমন প্লাস্টিক পরিবেশের সমূহ বিপদের কারণ। আর সেই প্লাস্টিক ব্যবহার করেই বাঁকোলো কোলিয়ারিতে তৈরি হচ্ছে ইট। বাগান সাজানো, সীমানা পাঁচিল তৈরির কাজে এই ইট ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে পরিবেশ রক্ষার সঙ্গে হচ্ছে মুনাফাও।
ইসিএল সূত্রে জানা গিয়েছে, বাঁকোলা এরিয়ার জেনারেল ম্যানেজার সঞ্জয়কুমার সাউয়ের উদ্যোগে বছরখানেক আগে পরীক্ষামূলক এই প্রকল্প ভাবে শুরু হয়েছে। জানা গিয়েছে, একটি ইট বানাতে গড়ে এক কেজি প্লাস্টিক লাগে। তিনটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই ইট তৈরি করা হচ্ছে। প্রথম ধাপে একবারই ব্যবহার করা যাবে এমন প্লাস্টিক সংগ্রহ করে ছোট ছোট টুকরোয় কেটে নেওয়া হয়। সেই টুকরোগুলিকে যন্ত্রের সাহায্যে কিছুটা গলানো হয়। নির্দিষ্ট পরিমাণ প্লাস্টিক গলার পরে নির্দিষ্ট ছাঁকনিতে জমা হয়। এরপর প্রশিক্ষিত কর্মীরা সেই অর্ধ-গলিত প্লাস্টিক সংগ্রহ করে ঠান্ডা জলে ফেলে দেন। এরপর মেশিনে তৈরি করে নেওয়া হয় বিভিন্ন আকৃতির ইট।
প্লাস্টিক কিছুটা গলাতে মোট সময় লাগে ১০ থেকে ১৫ মিনিট। শীতকালে বাইরের তাপমাত্রা কম থাকলে একটু বেশি সময় লাগে। তেমনই গরমে কম সময় লাগে। ইট তৈরির সময় উৎপন্ন ধোঁয়া চিমনি দিয়ে বার করে দেওয়া হয়। ভবিষ্যতে আরও উঁচু চিমনি তৈরির পরিকল্পনা আছে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। এলাকার দুঃস্থ পরিবারগুলি এই প্রকল্পে কাজ পেয়েছে। চার জন মহিলা প্লাস্টিকগুলিকে ছোট ছোট টুকরোয় কেটে নেন। আর চার জন প্রশিক্ষিত কর্মী দিনের দুটি অর্ধে ইট তৈরির কাজ করে থাকেন। পুরো কাজ দেখে নেওয়ার জন্য দু’জন ম্যানেজার আছেন। সকালে ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত কাজ হয়।
অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার অর্ণব পাহাড়ি জানান, কোলিয়ারির পরিবেশ স্বচ্ছ ও সুন্দর রাখতে ইসিএলের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়। বাঁকোলা কোলিয়ারির বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে গাছ লাগানো হয়েছে। ব্যবহৃত জল নষ্ট না-করে পদ্মের বাগান তৈরি হয়েছে। সেই ভাবে একবারই ব্যবহার করা যাবে এমন প্লাস্টিক দিয়ে ইট তৈরি করা হচ্ছে। প্রাথমিক পর্যায়ে ইসিএলের বিভিন্ন কাজে তা ব্যবহার করা হচ্ছে। সেনাবাহিনীর সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছে। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের দুর্গাপুর কার্যালয়ের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘সরকারি ও বেসরকারি স্তুরে নানা ভাবে প্লাস্টিকের পুনর্ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এতে পরিবেশের দূষণ কমবে।’’