সিদ্ধান্ত দু’পক্ষের বৈঠকে

চাষিদের থেকে সরাসরি ধান কিনবে না চালকল

চালকল মালিকদের ‘চাপে’ শেষমেশ পিছু হটল জেলা প্রশাসন। মঙ্গলবার বিকালে বর্ধমান জেলাশাসকের কনফারেন্স হলে চালকল মালিক, গলসির স্থানীয় পঞ্চায়েত কর্তা, পুলিশ, প্রশাসন এবং জেলা খাদ্য নিয়ামকের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ বৈঠক করেন অতিরিক্ত জেলাশাসক (পঞ্চায়েত ও খাদ্য) রত্নেশ্বর রায়। প্রায় দু’ঘন্টা তর্কবিতর্ক চলার পরে সিদ্ধান্ত হয়, বৃহস্পতিবারের মধ্যে গলসি থানা এলাকার ৪৩টি চালকলই খুলে দেবেন মালিকেরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০১৫ ০১:৩৮
Share:

বৈঠক শেষে বেরিয়ে আসছেন চালকল মালিকেরা।—নিজস্ব চিত্র।

চালকল মালিকদের ‘চাপে’ শেষমেশ পিছু হটল জেলা প্রশাসন।

Advertisement

মঙ্গলবার বিকালে বর্ধমান জেলাশাসকের কনফারেন্স হলে চালকল মালিক, গলসির স্থানীয় পঞ্চায়েত কর্তা, পুলিশ, প্রশাসন এবং জেলা খাদ্য নিয়ামকের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ বৈঠক করেন অতিরিক্ত জেলাশাসক (পঞ্চায়েত ও খাদ্য) রত্নেশ্বর রায়। প্রায় দু’ঘন্টা তর্কবিতর্ক চলার পরে সিদ্ধান্ত হয়, বৃহস্পতিবারের মধ্যে গলসি থানা এলাকার ৪৩টি চালকলই খুলে দেবেন মালিকেরা। এর সঙ্গেই বৈঠকে চালকল মালিকেরা আর সরাসরি চাষিদের থেকে সহায়ক মূল্যে ধান কিনবেন না বলেও সিদ্ধান্ত হয়। তার বদলে চাষিদের কাছ থেকে ধান কেনার জন্য কিসান মান্ডির পাশাপাশি বিডিওদের পর্যবেক্ষণে প্রশাসনের তরফে নতুন করে বেশ কয়েকটি ধান কেনার শিবির খোলার কথাও হয়। এই কিসান মান্ডি ও শিবিরের ধান চালকল মালিকরা কিনবেন বলে প্রশাসনের কাছে আশ্বাস দিয়েছেন।

গত বৃহস্পতিবার গলসিতে টোকেন ছাড়াই ধান বিক্রি করতে আসা ফড়েদের সঙ্গে চালকলের মালিক ও কর্মীদের ঝামেলা বাধে। মালিকদের অভিযোগ ছিল, ব্লক অফিস থেকে টোকেন না নিয়েই ধান কিনতে জোর জবরদস্তি করছিলেন ফড়েরা। দাবি মানতে না চাওয়ায় চালকল মালিক অশোক অগ্রবালকে মারধরও করা হয়। এরপরেই গলসি থানা এলাকার ৪৩টি চালকল অনির্দিষ্ট কাল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন মালিকেরা। সোমবার চালকল কেন বন্ধ রয়েছে তা নিয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট দেন জেলা খাদ্য নিয়ামক সাধনকুমার পাঠক। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার সকালে ওই রিপোর্ট দেখে খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক সরাসরি চালকল মালিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য বৈঠক ডাকতে নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসনকে। নির্দেশ পাওয়ার পরে এ দিন বিকেল পাঁচটায় বৈঠক শুরু হয়।

Advertisement

বৈঠকের শুরুতেই চালকল মালিকরা চারটি দাবি পেশ করেন। প্রথমত, গলসি-সহ অন্য এলাকার চালকল মালিক ও কর্মীদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে। দ্বিতীয়ত, চালকলগুলি সরাসরি চাষিদের কাছ থেকে সহায়ক মূল্যে ধান কিনবে না। সরকার ধান কিনে চালকলে দিলে তা নিশ্চিত ভাবে মালিকরা নেবেন। তৃতীয়ত, সরকার লেভি বাবদ যে চাল কিনেছে, তার বকেয়া টাকা মিটিয়ে দিতে হবে এবং চলতি সময়ের মধ্যে সরকার চাষিদের কাছ থেকে সহায়ক মূল্যে যে ধান কিনতে বাধ্য করেছে, তা লেভি বাবদ চালকলগুলির কাছে আদায় করুক প্রশাসন। এই চার দফা দাবি নিয়ে খাদ্য নিয়ামকে সঙ্গে চালকল মালিকদের তুমুল তর্ক বেধে যায়। খাদ্য নিয়ামক আধিকারিক সাধনকুমার পাঠক বৈঠক চলাকালীন অভিযোগ করেন, “আপনারা সহায়ক মূল্যে চাল কিনব না বলতে পারেন না। আপনারা বিনা নোটিসে চালকল বন্ধ করে দিয়েছেন। ফলে প্রচুর চাষি সহায়ক মূল্যে ধান কিনতে না পেরে ঘুরে গিয়েছে।” বৈঠক থেকে এক বার বেরিয়েও যান সাধনবাবু। পরে অবশ্য ফিরে আসেন। আড়াই ঘন্টা ধরে বৈঠক চলার পর চালকল মালিকদের দাবি মতো প্রথম তিনটি সিদ্ধান্ত মেনে নেয় প্রশাসন।

এ দিনের বৈঠকে প্রত্যেকেই পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। অতিরিক্ত জেলাশাসক (পঞ্চায়েত ও খাদ্য) রত্নেশ্বর রায় গলসি থানার ওসিকে দ্রুত অভিযুক্তদের গ্রেফতার করার নির্দেশ দেন। বৈঠকে ঠিক হয়, গলসি ১ ব্লকে ৯টি, গলসি ২ ব্লকে ৫টি ও কিসান মান্ডি থেকে ধান কেনা হবে। অতিরিক্ত জেলাশাসক (খাদ্য ও কর্মাধ্যক্ষ) রত্নেশ্বর রায় বলেন, “চালকল মালিকদের চাষিদের থেকে ধান কেনার জন্য অনেকবার বলেছি। কিন্তু ওরা বৈঠক করে জানিয়ে দিয়েছেন সরাসরি ধান কিনবেন না। আর জোরাজুরি করব না, কিসান মান্ডি ও শিবির করেই আমরা সহায়ক মূল্যে চাষিদের কাছ থেকে ধান কিনব।” এ দিনের বৈঠকে জানা গিয়েছে, লেভি বাবদ বকেয়া ২১ কোটি টাকা বর্ধমান জেলা প্রশাসনের কাছে চলে আসছে। চলতি মাসের শেষে আরও ২০ কোটি টাকা চলে আসবে।

চালকল মালিকদের অন্যতম প্রতিনিধি আব্দুল মালেক বলেন, “ফড়েরাজ বন্ধ করার দাবিতে প্রতিবাদ জানিয়ে চালকল বন্ধ রেখেছিলাম। প্রশাসন আমাদের সঙ্গে সহমত দেখানোয় আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে চালকলগুলি খুলে যাবে। আমরা সরকারের তত্ত্বাবধানে হওয়া শিবির থেকে ধান কিনতেও রাজি আছি।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement