চলছে বালির কারবার। —নিজস্ব চিত্র।
পিছনের সিটে বাঁধা খানকতক বস্তা। দ্রুত গতিতে ছুটে যাচ্ছে মোটরবাইক।
চিত্র দুই: অলিগলি পেরিয়ে চলে যাচ্ছে বস্তাবোঝাই রিকশা। খানিক দূরের একটি গুদামে বস্তাগুলি রেখেই চম্পট দিলেন রিকশা চালক। — খোঁজ নিয়ে জানা গেল, চালের বস্তায় আসলে চালান হচ্ছে বালি! পুলিশের চোখে ধুলো দিতে বর্ধমানের শিল্পাঞ্চলে বালি কারবারিদের আপাতত এটাই পরিবহণ মাধ্যম।
অথচ বর্ধমানে প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া নির্দেশ মেনে বালি চুরির রমরমা আটকাতে অভিযান, বালি খাদানের নিলাম ডাকার প্রক্রিয়ায় বদল-সহ বেশ কিছু পদক্ষেপ করে বর্ধমান জেলা প্রশাসন। জেলার প্রায় সাড়ে চারশো বালি খাদানের নিলাম ডাকা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই দেড়শোর বেশি ঘাটের নিলাম ডাকার প্রক্রিয়া শেষও হয়ে গিয়েছে। ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাকিগুলির নিলাম ডাকাও শেষ হয়ে যাবে বলে জানান জেলাশাসক। তবে প্রক্রিয়ায় বদলের ফলে মেয়াদ পেরনোর পরেও বেশ কয়েকমাস নিলাম ডাকা স্থগিত রাখতে হয়। তার জন্য বহু কোটি টাকা রাজস্ব ক্ষতিও হয় সরকারের। যদিও জেলাশাসক সৌমিত্র মোহনের দাবি, ‘‘ক্ষতি ছাপিয়ে রেকর্ড পরিমাণ রাজস্ব আদায় করা হবে।’’
আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে ২২টি বালিঘাট রয়েছে। জেলা প্রশাসনের আশা, পাঁচ বছরের জন্য নিলামে দেওয়া এই বালিঘাটগুলি থেকে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা রাজস্ব আসবে।
এত সবের পরেও যদিও ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের একটি সূত্রের দাবি, কুলটির রামনগর, ডিসেরগড়, মনবেড়িয়া, হিরাপুরের ভূতাবুড়ি, নেহরুপার্ক, কালাঝড়িয়া, রানিগঞ্জের তিরাট, নারায়ণকুড়ি এবং দুর্গাপুর ব্যারাজ লাগোয়া এলাকায় বেশ কিছু অবৈধ বালি খাদান এখনও চলছে। বালি তোলা নিয়ে কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রকের তিনটি নির্দেশ রয়েছে— প্রথমত, জলের তলা থেকে বালি তোলা সম্পূর্ণ বেআইনি। দ্বিতীয়ত, কোনও রকম যন্ত্রের সাহায্যে বালি তোলা যাবে না। তৃতীয়ত, সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত বালি তোলা যাবে। এই খাদানগুলিতে এগুলির কোনওটাই তেমন মানা হয় না বলে প্রশাসনের কর্তাদের একাংশের দাবি। শুধু তাই নয়, অবৈধ খাদানগুলি থেকে বালি তুলে সাইকেল, মোটরবাইক, রিকশা, ভ্যানে চাপিয়ে সরাসরি ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
দফতরের কর্তারা জানান, বালির অবৈধ কারবারিরা সাধারণত ট্রাকে বালি পাচার করে। তা ধরে ফেলাও অপেক্ষাকৃত অনেক সহজ। কিন্তু এখন বালি কারবারিরার পরিবহণের ধরণ পাল্টে ফেলায় সমস্যা তৈরি হচ্ছে। যদিও জেলাশাসক বলেন, ‘‘দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করে চুরি আটকাতে ব্যবস্থা নিচ্ছি। আরও কড়া নজরদারিও চালানো হবে।’’