আবর্জনা ফেলায় বুজেছে গারুই নদীর একাংশ। ফাইল চিত্র
আবর্জন ফেলা বা বেআইনি নির্মাণের জেরে নদীর গতিপথ আটকানোর পরিণতি কতটা ভয়ঙ্কর, দু’দিনের বৃষ্টি তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখাল আসানসোলের গারুই নদী। বয়ে যাওয়ার জায়গা না পেয়ে জল উপচে প্লাবিত হল রেলপাড় এলাকার পাঁচটি ওয়ার্ড। গৃহহীন হয়েছেন হাজারেরও বেশি বাসিন্দা। বাসিন্দাদের বাঁচাতে উদ্ধারকাজে নামতে হয়েছে পুরসভা, দমকল ও বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরকে। শহরের মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারি বলেন, ‘‘আমরা বেআইনি নির্মাণ ভেঙে নদী সংস্কারের ব্যবস্থা করছি। আগামী বর্ষায় এই সমস্যা আর থাকবে না।’’
কোথাও সিমেন্ট, কংক্রিটের অবৈধ নির্মাণ। আবার কোথাও ডাঁই করা আবর্জনা। বয়ে চলার পথে নিয়মিত ঠোক্কর খাচ্ছে গারুই। দামোদর থেকে জন্মানো এই নদীটি আসানসোল শহরের মাঝ বরাবর বয়ে গিয়েছে। শীত বা গরমে গোড়ালি পর্যন্ত জল থাকে। কিন্তু প্রতি বর্ষায় সেই নদীই দু’কূল ছাপিয়ে ওঠে। জল ঢুকে যায় লোকালয়ে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, নদীবক্ষে আবর্জনা ফেলে ভরাট করে অবৈধ নির্মাণ তুলছে এক দল লোক।
এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মূলত পুরসভার ২৪, ২৫ ও ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের কসাইমহল্লা, মসজিদমহল্লা, ধাদকাপুল, মুতসুদ্দি মহল্লা, হাজিনগর অঞ্চলে নদীতে নিয়মিত আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। নদীর গতি আটকেই অবৈধ নির্মাণ চলছে। অভিযোগ, সিদ্দিক সেতু লাগোয়া নদীর প্রায় মাঝ বরাবর দেওয়াল তুলে একটি বহুতলও নির্মাণ করা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা মহম্মদ মুস্তাক কুরেশি বলেন, ‘‘পুরসভা উদ্যোগী হয়ে অবৈধ নির্মাণ ভেঙে নদী সংস্কার করলে প্লাবনের সমস্যা মিটে যাবে।’’
নদীবক্ষে অবৈধ নির্মাণ ও আবর্জনা ভরাটের ফলে যে প্রতি বর্ষায় প্লাবন হচ্ছে, সে কথা স্বীকার করেন পুর কর্তৃপক্ষও। মেয়র বলেন, ‘‘পুজোর পরেই নদী সংস্কার শুরু করব।’’ তিনি জানান, এই সমস্যা উল্লেখ করে মাস দুয়েক আগে সেচ দফতরকে চিঠি পাঠানো হয়। দফতরের দুই আধিকারিক নদী ঘুরে দেখে বিশদ প্রকল্প রিপোর্ট জমার পরামর্শ দিয়েছেন। সেটি তৈরি হচ্ছে। পুরসভার মুখ্য বাস্তুকার সুকোমল মণ্ডল জানান, প্রাথমিক ভাবে সেচ দফতর এই কাজের জন্য দু’কোটি টাকা অনুমোদন করেছে। তিনি জানান, নদীর নাব্যতা বাড়িয়ে জলধারণ ক্ষমতা বাড়ানো হবে। অবৈধ নির্মাণ ভেঙে ফেলা হবে। নদীর দু’পাড়ে উঁচু দেওয়াল তুলে সৌন্দর্যায়ন ও সংরক্ষণ করা হবে। নদীর জল সেচে ব্যবহার হবে।