সব হারিয়ে। কালনায় তোলা নিজস্ব চিত্র।
তখন মাঝ রাত। আচমকা হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ার শব্দে ঘুম ভেঙে গিয়েছিল প্রভাতী রাজবংশীর। কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেখেন, ঘরের দেওয়াল, ছাদ, আসবাব ভেঙে পড়ছে। অন্যদের ঘুম থেকে ডাকার আগেই চাপা পড়ে যান বাড়ির সবাই। পরে বড়দের বাঁচানো গেলেও বাঁচাতে যায়নি প্রভাতীদেবীর ১৩ মাসের শিশুটিকে।
মঙ্গলবার রাত ১টা নাগাদ কালনা শহরের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ডাঙাপাড়ার ওই ঘটনায় দুই বৃদ্ধাকে কালনা মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। বুধবার সকালে আহতদের দেখতে হাসপাতালে যান পুরপ্রধান দেবপ্রসাদ বাগ ও বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুণ্ডু। চিকিৎসা ও বাড়ি তৈরির জন্য সাহায্যের আশ্বাসও দেন তাঁরা। উদ্ধার কাজে সাহায্য করে ‘আইমা’ নামে একটি সংগঠনও।
শহরে বেশ কয়েকটি পুরনো বাড়ি রয়েছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি সংস্কারের অভাবে বিপজ্জনক। এমনই একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন নিতাই বিশ্বাস ও তাঁর পরিবার। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, একতলা বাড়িটি কাদার গাঁথনি দিয়ে তৈরি ছিল। পুরনো ইটের বেশির ভাগই নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। টিন এবং টালির ছাউনির সঙ্গে থাকা বাঁশ, কাঠের কাঠামোতেও ঘুন ধরেছিল। কয়েকদিনের বৃষ্টিতে গাঁথনি আরও দুর্বল হয়ে পড়েছিল বলেও তাঁদের দাবি। মঙ্গলবার রাতে ওই বাড়িতেই ঘুমোচ্ছিল নিতাইবাবুর নাতি রাহুল রাজবংশী। কয়েকদিন আগেই মা প্রভাতীদেবীর সঙ্গে কৃষ্ণদেবপুর থেকে মামারবাড়ি এসেছিল সে। রাত একটা নাগাদ ছাদ, দেওয়াল ভেঙে পড়ে। স্থানীয় বাসিন্দারা আসবাব, ইট, বাঁশ, পাথর সরিয়ে সবাইকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু রাহুলকে বাঁচানো যায়নি। নিতাইবাবুর আক্ষেপ, সবই বেঁচে গেলেও একরত্তি শিশুটাই আর ফিরল না। আহত ডলি বিশ্বাসের কথায়, ‘‘বিকট আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায়। চোখ খুলে দেখি ইট, কাঠে চাপা পড়ে আছি।’’
এই ঘটনার পরে প্রশ্ন উঠছে, শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পুরনো বাড়িগুলি সংস্কারে কোনও উদ্যোগ করবে কী পুরসভা? দেবপ্রসাদবাবু জানান, ইচ্ছা থাকলেও আইনি বাধায় পুরসভা তা করতে পারে না। তবে পুরসভা দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়া পুরানো বাড়ির মালিকদের নিয়ে একটি বৈঠক করবে। সেখানে মালিকদের বিষয়টি নিয়ে সতর্ক করা হবে।