কেন্দ্রীয় সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দফতরের একটি গবেষণামূলক প্রকল্পে সহকারীদের বেতন না দেওয়া, নিয়ম না মেনে টাকা খরচের অভিযোগ উঠেছে ওই প্রকল্পের কো-অর্ডিনেটর তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। ৩১ অগস্ট তাঁকে চিঠি পাঠিয়ে শো-কজ করেছেন রেজিস্ট্রার দেবকুমার পাঁজা। রসায়নের ওই শিক্ষক মানস বন্দ্যোপাধ্যায়ের যদিও দাবি, পুরোটাই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের চক্রান্ত।
মঙ্গলবার রেজিস্ট্রার জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাহী পরিষদের (ইসি) তদন্ত রিপোর্টে ওই প্রকল্প নিয়ে একাধিক প্রশ্ন তোলা হয়েছে। ১৫ দিনের মধ্যে তার ব্যাখ্যা চেয়ে ওই শিক্ষককে চিঠি দেওয়া হয়েছে। যদিও এখনও পর্যন্ত জবাব মেলেনি বলে দেবকুমারবাবুর দাবি।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ওই প্রকল্পের সহায়ক হিসেবে ১১ জনকে নিয়োগ করেছিলেন কো-অর্ডিনেটর। পরে কেন্দ্রীয় সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দফতরে চিঠি দিয়ে তাঁরা অভিযোগ করেন, গত বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারির মাসের বেতন পাননি তাঁরা। ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে এ বছরের ২ ফেব্রুয়ারি দফতরের আধিকারিক প্রতিসন্তা পান্ডে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে জানান, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘পিইউআরএসই’ বা ‘পার্স’ প্রকল্পের জন্য ৫ কোটি ৪২ লক্ষ ৩০ হাজার ৩৩০ টাকা অনুমোদন করা হয়েছে। তারপরেও প্রকল্প-সহায়করা বেতন পায়নি বলে অভিযোগ করছেন। এরপরেই তিনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন।
চিঠি মেলার পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কলকাতার একটি বেসরকারি সংস্থাকে অডিট করার দায়িত্ব দেয়। জুলাই মাসে ওই সংস্থা রিপোর্ট জমা দেয়। ১৭ অগস্ট তা ইসি সদস্যদের কাছে যায়। ওই রিপোর্টের প্রথমেই বলা হয়েছে, দেরিতে শুরু করার জন্য প্রকল্পের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে তিন কোটি টাকার বেশি। যা ‘পার্স’ প্রকল্প সঠিক ভাবে শেষ হওয়ার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়াও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দফতরের নির্দেশিকা মেনে দরপত্র থেকে টাকা খরচ কোনওটাই ঠিক মতো হয়নি বলে জানিয়েছে রিপোর্ট। যেমন, একটি মাইক্রোস্কোপ (টিইএম) কেনার আট মাস পরে তা ব্যবহার করা হয়। ফলে ‘গ্যারান্টি বা ওয়ারেন্টি পিরিয়ড’ পেরিয়ে যায়। আবার ওই যন্ত্রের জন্যই নিয়ম বহির্ভূত ভাবে রক্ষণাবেক্ষণের খরচ করা হয়। এ ছাড়াও নিয়ম না মেনেই ৩৫ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা খরচ করে কম্পিউটার কেনা হয়েছে বলেও ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে। এক খাতের টাকা অন্য খাতে খরচ করারও অভিযোগ উঠেছে। শেষ পরিচ্ছদে বলা হয়েছে, হাজিরা খাতা বা অন্য কোনও নথি ছাড়া প্রকল্প-সহায়কদের বেতন দেওয়া হয়েছে। শেষ দু’মাসে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় বেতন দিতে পারেনি বলেও জানানো হয়েছে। অথচ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দফতরকে প্রকল্প শেষের পরে বাড়তি ২০ লক্ষ টাকার উপর ফেরতও দেওয়া হয়েছে।
মানসবাবুর দাবি, “সব নিয়ম মেনে প্রকল্প চালানো হয়েছে। বাড়তি টাকা ফেরতও দেওয়া হয়েছে।’’ তাঁর পাল্টা অভিযোগ, ‘‘প্রকল্প সহায়কদের সই নকল করে চিঠি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমার বিরুদ্ধে বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে রিপোর্ট তৈরি করেছে। আসলে কর্তৃপক্ষের মোসাহেবি করছি না বলে জব্দ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।”