Crime

Murder: সব্যসাচী খুনে অভিযুক্ত খুড়তুতো ভাইয়ের আত্মসমর্পণ, সিজেএমের নির্দেশ ঘিরে বিতর্ক

সোমনাথকে প্রথমে বিচারবিভাগীয় হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন সিজেএম। পরে তদন্তকারী অফিসারের বক্তব্য শুনে তাঁকে ১০ দিন পুলিশি হেফাজতে পাঠানো হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রায়না শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০২১ ২১:৫০
Share:

কলকাতার ব্যবসায়ী সব্যসাচী মণ্ডলকে খুনে অন্যতম অভিযুক্ত সোমনাথ মণ্ডল। —নিজস্ব চিত্র।

দিন কয়েক আগেই কানাঘুষো শোনা যাচ্ছিল। অবশেষে মঙ্গলবার আদালতে আত্মসমর্পণ করলেন কলকাতার ব্যবসায়ী সব্যসাচী মণ্ডলকে খুনে অন্যতম অভিযুক্ত সোমনাথ মণ্ডল। তবে একই দিনে সব্যসাচীর খুড়তুতো ভাই সোমনাথের বিরুদ্ধে সিজেএমের দু’টি নির্দেশ ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।

মঙ্গলবার সোমনাথকে প্রথমে বিচারবিভাগীয় হেফাজতে পাঠিয়ে ৩০ নভেম্বর ফের আদালতে পেশের নির্দেশ দেন সিজেএম। খবর পেয়ে রায়না থানার তদন্তকারী অফিসার তাঁকে ১৪ দিন নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানিয়ে আদালতে হাজির হন। তদন্তকারী অফিসারের বক্তব্য শুনে সোমনাথকে ১০ দিন পুলিশি হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন সিজেএম।

Advertisement

সোমনাথ যে মঙ্গলবার আদালতে আত্মসমর্পণ করবেন, তা ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি পুলিশ। মঙ্গলবার সকালে বর্ধমান স্টেশন এলাকায় পৌঁছন তিনি। সেখান থেকে সোজা আদালত চত্বরে আইনজীবীর বসার ঘরে হাজির হন। পরনে ফিকে রঙের কটস উলের জ্যাকেট ও ট্র্যাকশ্যুট। পায়ে চপ্পল। চশমা পরা নিরীহ গোবেচারার মতো দেখতে সোমনাথকে দেখে ভিড় জমে যায় আদালত চত্বরে। বেলা ১১টা নাগাদ তাঁকে নিয়ে সিজেএম আদালতে হাজির হন সোমনাথের আইনজীবী শেখ রাজেশ। বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ সিজেএমের কাছে আত্মসমর্পণের আবেদনের শুনানি হয়। তাতে বিচারবিভাগীয় হেফাজতের নির্দেশ দেন সিজেএম। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে ফের আবেদন করে। তাতে সিজেএম পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন।

আরও পড়ুন:

সব্যসাচী মণ্ডল। —ফাইল চিত্র।

সিজেএমের নির্দেশ ঘিরে বিতর্কে মুখ খুলেছেন আইনজীবীরা। তাঁদের মতে, একই দিনে বিচারবিভাগীয় ও পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ আইনসম্মত নয়। বর্ধমান আদালতের প্রবীণ আইনজীবী স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই নির্দেশে টেকনিক্যাল ত্রুটি রয়েছে। পুলিশের উচিত ছিল সিজেএমের অনুমতি নিয়ে কোর্ট লকআপে ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদ করা। তাঁর বয়ান নথিভুক্ত করার পর হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানানো যেত। পুলিশি হেফাজতের আবেদন মামলায় নথিভুক্ত করে তা বুধবার শুনতে পারতেন সিজেএম।’’ আইনজীবী হরদীপ সিংহ অহলুওয়ালিয়া বলেন, ‘‘ন্যায়বিচারের স্বার্থে পরের দিন পুলিশি হেফাজতের আবেদনের শুনানি হওয়া উচিত ছিল। তা না হওয়ায় গোটা বিষয়টি সাজানো বলে মনে হচ্ছে। মামলার কেস ডায়েরিতে ধৃতের বয়ান না থাকা সত্বেও সিজেএম কী ভাবে পুলিশি হেফাজতের আবেদনে সাড়া দিলেন, তা বোঝা যাচ্ছে না।’’

Advertisement

আত্মসমর্পণ করলেও খুনে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন দিল্লিতে এমবিএ পড়া সোমনাথ। আদালত চত্বরে দাঁড়িয়ে তাঁর দাবি, ‘‘আমাকে মিথ্যা ফাঁসানো হচ্ছে। ঘটনার সঙ্গে আদৌ জড়িত নই। বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থা রয়েছে বলে আত্মসমর্পণ করলাম।’’

প্রসঙ্গত, সব্যসাচীকে খুনের ঘটনায় তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিসের কাছে সব্যসাচীর খুনে মূল অভিযুক্ত রিকির দাবি, সোমনাথই তাঁকে সুপারি দিয়েছিলেন। ঘটনার দিন সোমনাথ ও তাঁর বন্ধু মোটরবাইকে করে হাওড়া থেকে তাঁদের পথ দেখিয়ে রায়নার দেরিয়াপুরে নিয়ে আসেন। দেরিয়াপুরে তাঁদের যাতায়াতের ছবি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে ধরা পড়েছে বলে দাবি পুলিশের।

সূত্রের খবর, ঘটনার পর উত্তরবঙ্গে গা ঢাকা দেন সোমনাথ। মঙ্গলবার সকালে শিলিগুড়ি থেকে বর্ধমানে আসেন তিনি। সোমনাথ ও তাঁর পরিবারের লোকজন বিদেশে গা-ঢাকা দিতে পারেন বলে দাবি ছিল পুলিশের। তাঁদের হদিশ পেতে লুকআউট নোটিস জারির প্রক্রিয়ার কথাও জানানো হয়েছিল। পুলিশের দাবি, তল্লাশির চাপে পড়েই আদালতে আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়েছেন সোমনাথ। এ দিকে, এই খুনের মামলার তদন্তকারী অফিসার বিপ্লব চট্টোপাধ্যায় পারিবারিক কারণে তদন্ত থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। তাঁর জায়গায় রাজেশ মাহাতোকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন