Sand Smuggling

অভিযানের আগাম খবর পায় ‘লোকেশন পার্টি’

দফতরের খবর বাইরে যাওয়া মানে কি সর্ষের মধ্যেই লুকিয়ে ভূত? কালনা পরিবহণ দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘আমাদের গতিবিধির খবর ওরা রাখে বলে জেনেছি।

Advertisement

কেদারনাথ ভট্টাচার্য

কালনা শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০২৪ ০৮:৩০
Share:

চাহিদা রয়েছে মোটা বালির। নিজস্ব চিত্র।

বালিবোঝাই ট্রাক ধরা পড়লে জরিমানা হয় লক্ষাধিক টাকার। কিন্তু তার ভয়ে অবৈধ পাচারের লাভের গুড় ছাড়তে পারেন না কারবারিরা। তাই পরিবহণ দফতর বা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর অভিযানে নেমে হদিশ পায় না বেশির ভাগ ট্রাকেরই। কারবারিদের দাবি, আসসলে সরকারি আধিকারিকেরা কোন রাস্তায় থাকবেন, কোন পথে অভিযান চলবে সেই খবর আগেই পৌঁছে যায় তাঁদের কাছে।

Advertisement

খবর দেয় কারা? বালির কারবারে এদের নাম ‘লোকেশন পার্টি’। তাদের ফোন পেলেই বেআইনি বালি, পাথর বোঝাই গাড়ি দূরে দাঁড়িয়ে যায়। সরকারি আধিকারিকের গাড়ি অভিযান শেষ করে ফিরে গেলে ফের শুরু হয় যাত্রা। ‘কী ভাবে কাজ করে এই লোকেশন পার্টি?’

খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, ঘাট থেকে অতিরিক্ত পণ্য নিয়ে রাস্তায় উঠতেই শুরু হয় যায় লোকেশান পার্টির কাজ। এদের অনেকে ‘পাসিং পার্টি’ বলেও ডাকে। বিভিন্ন এলাকায় তাঁদের এজেন্ট রয়েছে। লোকেশান পার্টির মাথা এজেন্টদের কাছে খোঁজ খবর নেওয়া শুরু করে।এলাকায় পরিবহণ দফতর, ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর অথবা পুলিশের উচ্চপদস্থ কোনও আধিকারিক বিশেষ কোনও অভিযানে নেমেছেন কি না, তাঁদের বর্তমান অবস্থান কোথায়, তাঁদের গাড়ি কোন রাস্তা ধরে এগিয়ে যাচ্ছে মোবাইল মারফত খবর পৌঁছে যায় লোকেশন পার্টির মাথার কাছে। আবার কিছু কিছু অতিরিক্ত বালি, পাথর বোঝাই ট্রাকের সামনে-পিছনেও থাকে লোকেশন পার্টির গাড়ি। তাঁরা গাড়িতে বসেই জানতে পারেন অভিযান শুরু হয়েছে কি না। হলে বেশ কিছুটা দূরে তাঁরা বালি, পাথরের গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখেন। রাস্তা সাফ সঙ্কেত এলেই ফের অতিরিক্ত চলতে শুরু করে গাড়ি।

Advertisement

বালি কারবারিদের দাবি, পরিবহণ দফতরে যাতায়াত রয়েছে এমন অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে লোকেশান পার্টি। কোন আধিকারিক, কোন দিন কার্যালয়ে রয়েছেন, কোন কোন আধিকারিক ঠিক কখন অভিযানের পরিকল্পনা করছেন, অভিযান কোন রুটে হবে, কোন কোন দিন অভিযান হবে না, অর্থাৎ রাস্তা ফাঁকা থাকবে, সে ব্যাপারে তথ্য পৌঁছে যায়। এর জন্য অতিরিক্ত বালি বোঝাই গাড়ি পিছু লোকেশন পার্টিদের দিতে হয় ৫০০ টাকা করে। কারবারে যুক্ত এক ট্রাক মালিকের দাবি, ‘‘ঘাট থেকে কখন, কোন ঠিকানায় গাড়িগুলি যাবে তা ঠিক করে দেয় লোকেশন পার্টি। যেমন বছর দেড়েক আগে পরিবহণ দফতরের এক কর্তার গাড়িতে গুলি চালানোর ঘটনার পর থেকে গভীর রাতে বেশি অভিযান বর্তমানে হয় না। ফলে রাত থেকে ভোর পর্যন্ত গাড়ি পার করানোয় সময় লোকেশন পার্টির।’’

কিন্তু দফতরের খবর বাইরে যাওয়া মানে কি সর্ষের মধ্যেই লুকিয়ে ভূত? কালনা পরিবহণ দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘আমাদের গতিবিধির খবর ওরা রাখে বলে জেনেছি। এত বড় দফতর, এত লোকজনের যাতায়াতের মধ্যে কাউকে সন্দেহ করা মুশকিল। তবে আমাদের পরিকল্পনা করতে হবে।’’ কালনা পরিবহণ দফতরের আধিকারিক অনুপম চক্রবর্তী (এআরটিও) বলেন, ‘‘আমরা লাগাতার অভিযান চালাই। প্রয়োজনে আরও কিছু পরিকল্পনা নেওয়া হবে।’’

মহকুমা প্রশাসনের এক কর্তার দাবি, যে কোনও অভিযানে নামার আগে নানা পরিকল্পনা নিতে হয়। ভিতরের খবর বাইরে চলে গেলে সাফল্য পাওয়া মুশকিল। জেলা পরিবহণ দফতরের তিন সদস্যের একজন কালনার বিধায়ক দেবপ্রসাদ বাগ বলেন, ‘‘অবৈধ ভাবে প্রচুর গাড়ি বালি, পাথর নিয়ে নানা ঠিকানায় পৌঁছে যাচ্ছে এমন জানা নেই। তবে খোঁজ নিয়ে জানব। বিষয়টি নিয়ে জেলাশাসকের সঙ্গেও কথা বলা
হবে। কোনও বেআইনি কাজ বরদাস্ত করা হবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন