ছবিতে সাজবে অঙ্গনওয়াড়ি। নিজস্ব চিত্র
মাস ছয়েক আগে দুর্গাপুরে নবগঠিত পশ্চিম বর্ধমান জেলার প্রথম প্রশাসনিক বৈঠকে এসে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলি নিয়ে বিশদে জানতে চেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জেলা প্রশাসনের কর্তা এবং বিডিওদের নিয়মিত কেন্দ্রগুলি পরিদর্শনের নির্দেশও দিয়েছিলেন তিনি।
অতিরিক্ত জেলাশাসক (শিক্ষা) খুরশিদ আলি কাদরি জানান, মুখ্যমন্ত্রীর এই নির্দেশ পাওয়ার পরেই জেলার সব ক’টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের হাল-হকিকত জানতে বিডিও এবং শিশুবিকাশ প্রকল্পের অফিসারদের নিয়ে একাধিক বৈঠক করেছেন জেলাশাসক শশাঙ্ক শেঠি। এখন জেলায় প্রায় ২৬০০টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র আছে। আরও প্রায় ১২৮টি নতুন কেন্দ্র তৈরির কথা চলছে। কোথায় সেগুলি তৈরি হবে সে নিয়ে প্রশাসনিক পর্যায়ে আলোচনা হচ্ছে।
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ ও প্রশাসনের এই পদক্ষেপের পরে আশা দেখেছিলেন জেলার মানুষজন। কিন্তু অবস্থার বিশেষ পরিবর্তন হয়নি বলে তাঁদের দাবি। অভিযোগ, প্রশাসনের তরফে কেন্দ্রগুলি নিয়মিত পরিদর্শনের ব্যবস্থা হয়নি। অতিরিক্ত জেলাশাসক (শিক্ষা) অবশ্য দাবি করেন, অঙ্গনওয়াড়িগুলির খোলনলচে বদলে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সুসংহত একটি প্রকল্পও তৈরি করা হয়েছে। তাঁর দাবি, শুধু ভাল পরিবেশ তৈরি নয়, শিশুদের স্বাস্থ্য গড়ে তোলার জন্য পুষ্টিকর খাবার ও দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। কিন্তু অভিভাবকেরা সেই ওষুধ সন্তানদের খাওয়াতে চাইছেন না বলে অভিযোগ তাঁর। তিনি জানান, এই সমস্যা দূর করতে তাঁরা বাড়ি-বাড়ি সচেতনতা প্রচার শুরু করেছেন।
অতিরিক্ত জেলাশাসক (শিক্ষা) বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার অঙ্গনওয়াড়িগুলিকে শিশু আলয়ে পরিণত করার নির্দেশ দিয়েছে। আমরা তার তোড়জোড় শুরু করেছি।’’ প্রথম পর্যায়ে প্রায় ৪০টি কেন্দ্রকে শিশু আলয় করার পরিকল্পনা হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। আধিকারিকেরা জানান, অঙ্গনওয়াড়িগুলির জন্য নিজস্ব ভবন বড় তৈরি হবে। আলাদা করে থাকবে রান্নাঘর ও শৌচাগার। শিশুরা যে ঘরে পড়াশোনা করবে, তার দেওয়ালে ছবি, বর্ণপরিচয়ের অক্ষর থাকবে। শিশুদের বসা ও শোওয়ার জন্য মেঝেতে ফরাস পাতা হবে। রাখা হবে খেলার সামগ্রী। এক জন মহিলাকর্মী সারাক্ষণ শিশুদের দেখভাল করবেন। শিশুদের ঘর দূষণমুক্ত রাখতে হবে। এমনকি, উনুনের ধোঁয়াও যাতে না ঢোকে, সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কর্মরত মহিলাদের পরিবারে শিশুদের দেখভাল করার মতো কেউ না থাকলে তাঁরাও নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত সন্তানদের শিশু আলয়ে রাখতে পারবেন। ইতিমধ্যে কিছু জায়গায় কয়েকটি শিশু আলয় চালু করা হয়েছে বলে জানান অতিরিক্ত জেলাশাসক (শিক্ষা)। সম্প্রতি সালানপুরের কল্যা পঞ্চায়েতের পাহাড়পুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয় অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রটিকে শিশু আলয় করা হয়েছে। জনা বারো শিশুকে দেওয়ালে আঁকা ছবি ও অক্ষর দেখিয়ে পড়াচ্ছেন কর্মী অনামিকা মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্রটির ভোলবদলে শিশুরা বেশ খুশি।’’
জেলা প্রশাসনের কর্তারা জানান, বারাবনি ও রানিগঞ্জ ব্লকেও এই রকম কয়েকটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রকে শিশু আলয়ে রূপান্তর করা হয়েছে। আসানসোল পুরসভার অধীনে থাকা শহরের পাঁচটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রকেও শিশু আলয় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে পুরসভা সূত্রে জানা যায়, আসানসোল শহরের কোনও কেন্দ্রেরই নিজস্ব ভবন নেই। সরকারি অর্থে এই কেন্দ্রগুলিকে শিশু আলয়ে রূপান্তর করা কতটা যুক্তিযুক্ত হবে, সে নিয়ে ধন্দে রয়েছেন আধিকারিকেরা। তাই আগে কেন্দ্রগুলির নিজস্ব ভবন তৈরির উদ্যোগ হবে বলে জানান পুরসভার কমিশনার তথা অতিরিক্ত জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদরি।
হাল ফেরানোর এই উদ্যোগ কত দিনে কার্যকর হয়, সে দিকে তাকিয়ে অনেক অভিভাবক। (শেষ)