কেতুগ্রামে কামাই রুখতে সাঁকোয় নজর শিক্ষকদের

খালের ওপার থেকে স্কুলে আসতে গেলে পেরোতে হয় নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো। সাঁকো ভেঙে পড়ার ভয়ে অনেক পড়ুয়াও স্কুলে আসতে চায় না। অগত্যা পড়ুয়াদের হাত ধরে সাঁকো পার করানোর দায়িত্ব নিয়েছেন শিক্ষকেরাই।

Advertisement

অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়

কেতুগ্রাম শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০০:১৯
Share:

স্কুল শেষ, স্যারেদের হাত ধরে সাঁকো পেরোচ্ছে পড়ুয়ারা। নিজস্ব চিত্র।

খালের ওপার থেকে স্কুলে আসতে গেলে পেরোতে হয় নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো। সাঁকো ভেঙে পড়ার ভয়ে অনেক পড়ুয়াও স্কুলে আসতে চায় না। অগত্যা পড়ুয়াদের হাত ধরে সাঁকো পার করানোর দায়িত্ব নিয়েছেন শিক্ষকেরাই।

Advertisement

কেতুগ্রামের বিল্লেশ্বর পঞ্চায়েতের কৌরি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দাবি, বারেবারে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানিয়েও সাঁকো পাকা হয়নি। কোনও রাস্তাও হয়নি। ফলে পড়ুয়াদের ভয় মেটাতে সকাল-বিকেলে ঠাই দাঁড়িয়ে থাকেন আনন্দগোপাল সাহা ও সুবিকাশ বন্দ্যোপাধ্যায় নামে দুই শিক্ষক।

স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, এখন পড়ুয়ার সংখ্যা ৭০ জন। তাদের বেশির ভাগই হাটপাড়া গ্রাম থেকে আসে। ওই গ্রাম থেকে স্কুলে আসতে গেলে ঈশানী নদীর উপরের ওই সাঁকো পেরিয়ে আসতে হয় পড়ুয়াদের। তাদের অভিযোগ, বারো মাস যাতায়াত করতে হলেও সেতুটি পাকা হয়নি। বর্ষায় অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায়। বেশ কয়েকবার সেতুটি ভেঙেও গিয়েছে বলে জানায় স্কুলের পড়ুয়ারা। তখন জোড়াতালি দিয়ে কোনও রকমে সেতু সংস্কার করা হয়। কিন্তু বর্ষায় সেতুটি দিয়ে যাতায়াত করা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়ে বলে জানান আনন্দগোপালবাবুরা। স্কুলেরও দাবি, বেশ কয়েক বছর বর্ষার সময়ে দেখা গিয়েছে উপস্থিতির হারও বেশ কম।

Advertisement

স্কুলে আসতে পড়ুয়ারা যাতে ভয় না পায়, সে জন্যই সুবিকাশবাবুরা দাঁড়িয়ে থাকেন। সকাল ১১টা থেকে স্কুল শুরু। সকাল দশটা-সাড়ে দশটা থেকেই ওই দু’জন শিক্ষককে দেখা যায় সাঁকোর মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। হাত ধরে পড়ুয়াদের সেতু পার করতে দেখা গেল তাঁদের। হাটপাড়া গ্রামের বাসিন্দা বোধনচন্দ্র মাঝি, সদানন্দ সাহারা জানান, ২০১০ সালে বিল্লেশ্বর পঞ্চায়েতের তরফে বাঁশের সাঁকোটি তৈরি করা হয়। স্কুলের পড়ুয়া সুনন্দা মাঝি, শৌভিক সাহারা জানান, বছর দু’য়েক আগে পঞ্চায়েত প্রধানকে সাঁকো তৈরির আবেদন জানানো হয়। তখনকার মতো অল্পবিস্তর সংস্কার করা হলেও সাঁকোটি পাকা করা হয়নি। পঞ্চায়েত প্রধান সুকুমার সরকার যদিও বলেন, ‘‘গোটা বিষয়টি জেলাশাসকের নজরে আনা হয়েছে।’’

প্রতিদিনই দুই শিক্ষককে ক্লাস করিয়ে দৌড়তে দেখা যায় সাঁকোর ধারে। এক পড়ুয়াকে সাঁকো পেরোতে সাহায্য করতে করতেই সুবিকাশবাবু বলেন, ‘‘আমাদের শঙ্কা শুধুমাত্র সাঁকোর কারণে কেউ যেন স্কুল কামাই না করে। তাই রোজ এই কাজ করি।’’

কেতুগ্রাম ২ ব্লকের সভানেত্রী বনানী মাজির যদিও আশ্বাস, জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষের সাথে আলোচনা করে সাঁকোটি পাকা করার বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন