বিশ্বকর্মা পুজোয় আয়নাল। —নিজস্ব চিত্র।
সকাল থেকেই বিশ্বকর্মার পুজো নিয়ে ব্যস্ত শেখ আয়নাল। দেবতার সামনে হাত জোড় করে প্রার্থনা সেরে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন কর্মীদের খাওয়ার ব্যবস্থা করতে।
মুসলিম হয়েও বিশ্বকর্মা পুজো? পুজোর ফাঁকেই জবাব, ‘‘আজ নয়। ১২ বছর ধরে পুজো করছি। এই দিনটা আমাদের কাছে উৎসবের।’’ বর্ধমান শহর লাগোয়া নবাবহাট মোড় থেকে সিউড়ি রোড ওঠার মুখেই রয়েছে আয়নাল আর রামকৃষ্ণ ঘোষের গ্যারাজ। সেখানে বিশ্বকর্মা পুজো হয় ফি বছর।
গ্যারাজে ট্রাক-সহ ছোট-বড় সবরকমের যানবাহন মেরামত ও রঙ করা হয়। বিশ্বকর্মা পুজোয় সরিবারের সকলকে নিয়ে গ্যারাজে আসেন আয়নাল। এ দিন সকালে রামকৃষ্ণবাবু ঘট আনা এবং পুজোর অন্য জোগাড়ে ব্যস্ত ছিলেন। পুজোর দায়িত্ব ছিল আয়নালের হাতেই। সকাল থেকেই নিজে হাতে পুজোর সব আয়োজন করেছেন তিনি। পুজোর সময় রামকৃষ্ণ এবং আয়নাল পাশাপাশি দাঁড়িয়ে প্রণাম করে পুজো দিয়েছেন।
বর্ধমান ১ ব্লকের নতুনগ্রামের বাসিন্দা আয়নাল বলেন, ‘‘ধর্ম সবার নিজের। কিন্তু বিশ্বকর্মা পুজো আমাদের কাছে, কর্মীদের কাছে একটি উৎসব। উনি আমাদের কাজের দেবতা, আনন্দের দেবতা, উৎসবের দেবতা। ওঁকে পুজো করে, স্মরণ করে কাজ শুরু হয়। কাজ ভাল হলে উপার্জন হয়। আমাদের পেটে ভাত জোটে। সবার সংসার চলে। আবার আমার নিজের ধর্মকেও সমান শ্রদ্ধা করি। আমরা সবাই মানুষ। সুস্থ থেকে, খেয়ে-পড়ে বেঁচে থাকাই আমাদের লক্ষ্য। ধর্মের নামে সংকীর্ণতা চাই না।’’
রামকৃষ্ণ বলেন, ‘‘এ দিন গ্যারাজে মাটন বিরিয়ানি এবং চিকেন চাপ হয়েছে। সবাই মিলে পুজো করে এক সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করব। উৎসবের অপর নাম মিলনমেলা। আমাদের কাছে বিশ্বকর্মা পুজোও তাই।’’ দোকানের কর্মী অজয় দাস বলেন, ‘‘আমাদের কাছে ধর্ম বলে আলাদা কিছু নেই। সবাই এখানে আসি। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করি। উপার্জন করি। তাতে সংসার চলে। আমাদের কাছে কাজই হল ধর্ম।’’
বর্ধমান শহরে বিভিন্ন কারখানায় বিশ্বকর্মা পুজো হয়। দোকানে-কারখানায় বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ কাজ করেন। তাঁরা বিশ্বকর্মার পুজো করেন একসঙ্গে। এটাই ঐতিহ্য।