কার্যালয়ে আশ্রয়, বাড়ি কেন হয়নি প্রশ্ন বিরোধীর

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কুলনগর গ্রামে রাস্তার ধারে পুকুরপাড়ে মাটির দেওয়াল ও খড়ের ছাউনি দেওয়া ঘরে থাকতেন মদনবাবু। বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি দীর্ঘদিন অসুস্থ। তাঁর মেয়ে সান্ত্বনাদেবী কয়েকটি বাড়িতে রান্না করে মাসে হাজার দু’য়েক টাকা আয় করেন।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

ভাতার শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৯ ০৫:৪৫
Share:

কুলনগরের এই কার্যালয়েই রয়েছেন মদনবাবুরা। নিজস্ব চিত্র

বর্ষার রাতে ভেঙে যায় মাটির বাড়ি। কয়েকদিন মেয়ে, মেয়ের নাতনিতে নিয়ে খোলা আকাশের নীচে দিন কাটাতে হয় ৭৫ বছরের মদন ঘোষকে। শেষমেশ ভাতারের কুলনগরের দলীয় কার্যালয়টি ওই পরিবারের জন্য খুলে দেন স্থানীয় তৃণমূল কর্মীরা। তার পরে পাঁচ মাস সেখানেই বাস মদনবাবুদের। তৃণমূলকর্মীদের মানবিকতা প্রশংসনীয় হলেও এই উদাহরণকে সামনে রেখে বিরোধীরা ‘কাটমানি’ না দিলে বাড়ি মেলে না বলে অভিযোগ করছেন।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কুলনগর গ্রামে রাস্তার ধারে পুকুরপাড়ে মাটির দেওয়াল ও খড়ের ছাউনি দেওয়া ঘরে থাকতেন মদনবাবু। বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি দীর্ঘদিন অসুস্থ। তাঁর মেয়ে সান্ত্বনাদেবী কয়েকটি বাড়িতে রান্না করে মাসে হাজার দু’য়েক টাকা আয় করেন। তাঁর নাতনি স্থানীয় একটি প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়া। সান্ত্বনাদেবীর কথায়, “তৃণমূলের ছেলেরা যে ভাবে থাকার জায়গা করে দিয়েছে, তাতে আমরা কৃতজ্ঞ।’’ তবে, কার্যালয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই মিললেও শৌচকর্মের জন্য ভরসা খোলা মাঠই, জানান মদনবাবু। এই পরিস্থিতিতে সান্ত্বনাদেবীর আর্জি, ‘‘আমরা চাই, সরকারি প্রকল্পে ঘর দেওয়া হোক।’’

এই ঘর দেওয়া নিয়েই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপান-উতোর। বিজেপির মণ্ডল সভাপতি রাজকুমার হাজরার কটাক্ষ, “কেন্দ্রীয় সরকার সবার জন্য বাড়ি তৈরির টাকা দিচ্ছে। ভাতার নির্মল ব্লক বলেও ঘোষিত। কিন্তু মদনবাবুদের দেখে বোঝা যাচ্ছে প্রকল্পগুলি এখানে কী অবস্থায় চলছে। আসলে কাটমানি ছাড়া কোনও কাজ হয় না।’’ ঘটনাচক্রে ভাতারের নানা পঞ্চায়েতে ‘কাটমানি’ ফেরতের দাবিতে বিজেপি আন্দোলন করেছিল। বহু উপভোক্তা পঞ্চায়েতে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলেন, কাকে কত টাকা ‘কাটমানি’ দিয়ে ঘর মিলেছিল। সিপিএমের নেতা নজরুল হকেরও অভিযোগ, ‘‘ওই পরিবার কাটমানি দিতে পারেনি। তাই ঘরও মেলেনি।’’

Advertisement

যাবতীয় অভিযোগকে ‘ফালতু’ বলে উড়িয়ে দিয়ে তৃণমূল পরিচালিত ভাতার পঞ্চায়েতের প্রধান পরেশনাথ চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘মদনবাবুদের ‘বাড়ি’, এখন যেখানে আছেন, সবই খতিয়ে দেখা হয়েছে। ওঁদের নিজস্ব জায়গা নেই বলে সমস্যা হচ্ছে। তা সমাধানের চেষ্টা চলছে।’’ স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের আরও দাবি, প্রথমে রাজ্য সরকারের ‘গীতাঞ্জলি’ প্রকল্পে ওই পরিবারটিকে ঘর দেওয়ার কথা ভাবা হলেও বর্তমানে প্রকল্পটি বন্ধ। ফলে, চেষ্টা করা হচ্ছে ‘বাংলা আবাস যোজনা’ প্রকল্প থেকে ঘর দেওয়ার।

ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ‘বাংলা আবাস যোজনা’র তালিকায় মদনবাবুদের নাম রয়েছে। কিন্তু ভাতার ব্লক এ বছর ওই প্রকল্পের জন্য যে ‘কোটা’ (৪,৩৫৮টি বাড়ি) পেয়েছে, তাতে মদনবাবুদের কাছে পৌঁছনো সম্ভব হচ্ছে না। বিডিও (ভাতার) শুভ্র চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমরা সরেজমিন পুরো পরিস্থিতি দেখে এসেছি। সরকারের কাছে বিস্তারিত রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন