খোঁজ: বেলনা গ্রামে চলছে বাড়ির মেঝে খোঁড়া। নিজস্ব চিত্র
তাঁর বাড়ির সব জিনিস ওলটপালট করে মেঝে খুঁড়ছে পুলিশ। শূন্য চোখে তাকিয়ে আছেন তিনি। খাটের নীচের মেঝে খুঁড়ে বস্তাবন্দি হাড়গোড় মিলতেই ছেলেমেয়েকে জড়িয়ে কেঁদে উঠলেন প্রতিভা সর্দার। বলে উঠলেন, ‘‘মুলুকচাঁদ বউকে তো মারল, আমাদেরও ক্ষতি করে দিল।’’
দিন কয়েক আগে স্ত্রীকে খুনের অভিযোগে ধরা পড়ে বর্ধমানের বেলনা গ্রামের যুবক মুলুকচাঁদ। পুলিশের জেরায় সে দাবি করে, তিন বছর আগে, ২০১৪ সালের মে মাসে স্ত্রী পুজাকে মেরে ওই নির্মীয়মাণ বাড়ির একটি ঘরে পুঁতে দিয়েছিল সে। ওই বাড়িটিই প্রতিভাদেবীদের। এত দিন কিছু টের না পেয়ে ওই বাড়িতে বাস করছিলেন তাঁরা। এ দিনের ঘটনা অবশ্য সংসারে বাধা পড়ল তাঁদেরও।
পড়শিদের দাবি, বিয়েতে মত ছিল না মুলুকচাঁদের। নিত্য অশান্তি লেগেই থাকত। ‘কালো’ বউকে পছন্দ নয় বলে পরিজনদের জানিয়েছিল সে। এ দিন ধৃতের বৃদ্ধ বাবা পিরুবাবু ও মা গোলাপিদেবী বলেন, “ভেবেছিলাম বিয়ের পরে ডাকাবুকো ছেলেটা শান্ত হয়ে যাবে। কিন্তু এ রকম সর্বনাশ করবে স্বপ্নেও ভাবিনি। গ্রামের মানুষের কাছে মাথা হেঁট হয়ে গেল।” একই কথা বলছেন পড়শি জয়দেব মাঝি, সুতপা সেনরাও। তাঁদের কথায়, “বিশ্বাস করতে পারছি না, আমাদের গ্রামের ছেলে এ রকম ঘটনায় জড়িত।’’ তাঁরা এ দিন পুলিশের কাছে দাবি করেছেন, “যে ছেলে বউকে খুন করে পুঁতে রাখার পরেও শান্ত থাকতে পারে, তাঁর সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।”
আরও পড়ুন: পুলিশকে কেন মারব না, তোপ দিলীপের
গ্রামবাসীদের দাবির সঙ্গে অবশ্য গলা মেলাতে পারেননি প্রতিভাদেবীর স্বামী বাপি বা শ্বশুর মদনবাবুরা। তাঁরা জানান, মাঠে খেটে, চায়ের গুমটির রোজগারে তিল তিল করে বাড়িটা তৈরি করেছিলেন। গত বছরের আশ্বিন থেকেই নতুন বাড়িতে থাকতে শুরু করেন। যে ঘরে দেহ মেলে সেখানে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে থাকতেন প্রতিভাদেবী। তাঁর কথায়, “এক বছর ধরে মড়ার উপর শুয়েছিলাম! গা শিউরে উঠছে। ওই ঘরে ঢোকারই সাহস নেই।” প্রতিভাদেবীর শাশুড়ি দুর্গাদেবীও বলেন, “কোনও সুস্থ মানুষ কি আর ওই ঘরে থাকতে পারবে!”
আপাতত ঘরটি তালাবন্ধ করে দিয়েছেন মদনবাবুরা। তাঁর কথায়, “ঘুম উবে গিয়েছে, পড়শিদের কাছে রাত কাটানো ছাড়া উপায় নেই।”