জেনারেটর, ইসিজি যন্ত্র পাঠান দেড় মাসের মধ্যে

সেই সময়ে পুরষা হাসপাতালে যে তিন জন চিকিৎসা করেছিলেন, তাঁদের অন্যতম রামকমল দে সোমবার বলেন, ‘‘আমাদের তখন ইসিজি যন্ত্র ছিল না। তার মধ্যেই আমরা হৃদরোগের চিকিৎসা করেছিলাম। চিকিৎসা চলাকালীন বিদ্যুৎ চলে যায়। সব দেখে সোমনাথবাবু জেনারেটর এবং ইসিজি যন্ত্র দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। মাস দেড়েকের মধ্যেই কথা রেখেছিলেন।’’

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০১৮ ০০:৫৯
Share:

গঙ্গাটিকুরিতে সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। ২০০৬ সালে। ফাইল চিত্র

কথা রেখেছিলেন তিনি।

Advertisement

তখন তিনি লোকসভার স্পিকার। ২০০৮ সালের ২৫ নভেম্বর বোলপুর থেকে পানাগড় হয়ে কলকাতা যাচ্ছিলেন সস্ত্রীক সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। পানাগড় পেরোনোর পরেই স্ত্রী রেণুকাদেবী অসুস্থ হয়ে পড়েন। কাছাকাছি পুরষা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে প্রথমে বর্ধমান, তার পরে কলকাতা নিয়ে যাওয়া হয় রেণুকাদেবীকে।

সেই সময়ে পুরষা হাসপাতালে যে তিন জন চিকিৎসা করেছিলেন, তাঁদের অন্যতম রামকমল দে সোমবার বলেন, ‘‘আমাদের তখন ইসিজি যন্ত্র ছিল না। তার মধ্যেই আমরা হৃদরোগের চিকিৎসা করেছিলাম। চিকিৎসা চলাকালীন বিদ্যুৎ চলে যায়। সব দেখে সোমনাথবাবু জেনারেটর এবং ইসিজি যন্ত্র দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। মাস দেড়েকের মধ্যেই কথা রেখেছিলেন।’’ ২০০৯ সালের ১৩ জানুয়ারি সোমনাথবাবু ও রেণুকাদেবী ফের ওই হাসপাতালে এসেছিলেন। তখন বর্ধমান থেকে দুর্গাপুর— ৭৪ কিলোমিটার রাস্তায় কোনও হাসপাতাল ছিল না। সোমনাথবাবুর উদ্যোগে হাসপালটির শ্রী ফেরে। সিপিএমের তৎকালীন জেলা সম্পাদক অমল হালদার বলেন, ‘‘ওই হাসপাতালে পাঁচিল তৈরির দাবি জানিয়েছিলাম। তা তৈরি করা গিয়েছিল। উনি কথা রেখেছিলেন।’’

Advertisement

সিপিএমের ‘বহিষ্কৃত’ নেতা হরমোহন সিংহ জানান, এক মাস আগে সোমনাথবাবুর কথা হয়েছিল তাঁর। হরমোহনবাবু বলেন, ‘‘সোমনাথের দাদা আমার সহপাঠী ছিলেন। তখন থেকেই পরিচয়। আমার সঙ্গে দাদা-ভাইয়ের সম্পর্ক ছিল।’’ আট বছর আগে হরমোহনবাবুর প্রতিষ্ঠিত ‘আনন্দ নিকেতন’-এ এসেছিলেন সোমনাথবাবু। এ ছাড়াও কাটোয়ার বিআইটি-তে ‘কবিশেখর কালীদাস রায় পুরস্কার’ নিতে ও আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের অনুষ্ঠানে ছিলেন তিনি।

সোমনাথবাবু ১৯৭১ সালে সিপিএমের সমর্থনে নির্দল হিসেবে বর্ধমান থেকে জিতে লোকসভায় পা রেখেছিলেন। তাঁর বাবাও সিপিআইয়ের সমর্থনে নির্দল প্রার্থী হিসেবে বর্ধমান থেকে লোকসভায় জিতেছিলেন। অমলবাবুর কথায়, ‘‘তখন আমরা ছাত্র রাজনীতিতে যুক্ত। খণ্ডঘোষের আহ্লাদিপুরে গোলমাল হতে পারে আঁচ করে উনি জেলাশাসককে চিঠি দিয়েছিলান। এ নিয়ে খুব হইচই পড়ে গিয়েছিল।’’ সেই সময়ে আহ্লাদিপুরের চার সিপিএম কর্মী নিহত হন। তার পরে তিনি সে বছরের ১২ জুন সভা করেন। পরেও বেশ কয়েকবার ওই গ্রামে গিয়েছিলেন। স্থানীয় বাসিন্দা মহফুজ রহমান বলেন, ‘‘আমাদের সঙ্গে তালাইয়ে বসে পেঁয়াজ-লঙ্কা দিয়ে মুড়ি খেয়েছিলেন।’’

রাজনীতির বাইরেও তাঁর সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন গুসকরার বাসিন্দারা। উল্টো মেরুর রাজনীতি করলেও সোমনাথবাবুর কাছ থেকে পরামর্শ নিতে ভুলতেন না তৃণমূল নেতা নিত্যানন্দ চট্টোপাধ্যায়। সোমবার সকালে সোমনাথবাবুর মৃত্যুর খবর পাওয়ার পরে তিনি বলেন, ‘‘সিপিএম পরিচালিত গুসকরা পুরসভা অশোকস্তম্ভ দেওয়া পরিচয়পত্র করেছিল। বিরোধী দলনেতা হিসেবে আপত্তি জানাই। পুর কর্তৃপক্ষ কথা শোনেননি। সরাসরি সোমনাথবাবুকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, এটা করা যায় না। তার পরেই ওই সব পরিচয়পত্র ফেরত নেয়।’’ গুসকরার বাসিন্দা রাজেন্দ্রপ্রসাদ অগ্রবালের কথায়, ‘‘সোমনাথবাবু আমাদের বাড়িতে আসতেন। পোস্তবড়া, দইবড়া ও জিলিপি খুব পছন্দ করতেন।’’

কাটোয়ার মেয়ে প্রিয়াঙ্কা চৌধুরীর বিয়ে হয়েছে শান্তিনিকেতনে। তিনি বলেন, “আমাকে দেখিয়ে শাশুড়ি সোমনাথ জ্যেঠুকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘দাদা, বউমা সুন্দরী হয়েছে তো?’ জ্যেঠু হেসে বললেন, ‘পুরুষদের নিজের স্ত্রী ছাড়া কোনও মহিলাকে সুন্দরী বলতে নেই’। এমনই রসিক ছিলেন!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন